আমার চোখে 'স্বপ্ন শতদল

আমার চোখে 'স্বপ্ন শতদল

_ মোহাম্মদ আব্দুল হক 

বইপড়া, পত্রিকার পাতায় সম্পাদকীয় কলাম, উপসম্পাদকীয় কলাম, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, ছড়া এবং বিভিন্ন লেখকের লেখা গ্রন্থ সমালোচনা বিষয়ক লেখা পড়তে আমার ভালো লাগে। পাশাপাশি সমাজের নানান চিত্র দেখে লেখার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে থাকি। নিজে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখি এবং তা পত্রিকার উপসম্পাদকীয় বিভাগে প্রকাশ হয়েছে। কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ ছোটো গল্প এমনকি একটি উপন্যাস 'শ্বশুর বাড়ির জাঙ্গাল' সহ এ পর্যন্ত মোট নয়টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি লেখক হিসেবে সবচেয়ে কঠিন কাজটি হচ্ছে অন্যের লেখার সমালোচনা করা কিংবা বিশেষ ভাবে সম্পাদনা করে প্রকাশিত হওয়া কোনো লিটল ম্যাগাজিন বা কোনো যৌথ কাব্যগ্রন্থের সমালোচনা করে কিছু লেখা। তথাপি কবি ও সাংবাদিক মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী 'র সম্পাদিত ' স্বপ্ন শতদল' নামের যৌথ কাব্যগ্রন্থ নিয়ে লিখতে হচ্ছে। 

স্বপ্ন শতদল নামের যৌথ কাব্যগ্রন্থটি ১৯২ পৃষ্ঠার এক কাব্যগ্রন্থ যা ২০২১ সালের মার্চ মাসে প্রথম প্রকাশ হয়েছে, প্রকাশক হচ্ছে সিলেটের নাগরী। গ্রন্থটি সংকলন করেছে কাব্য-সাহিত্য শতদল এবং সম্পাদনা সহযোগী হিসেবে রয়েছেন সাদমান সজীব। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে কাব্য সাহিত্য শতদলের প্রতিষ্ঠাতা কবি মো. মনিরুল ইসলাম শেখসহ বাংলা সাহিত্যের সকল নিবেদিতপ্রাণ অগ্রজদের প্রতি। স্বপ্ন শতদল এর প্রচ্ছদ খুব সুন্দর হয়েছে, এক কথায় নান্দনিক। প্রচ্ছদ এঁকেছেন আইয়ুব আল আমিন। এর প্রচ্ছদমূল্য লেখা আছে ৪০০ টাকা। বইমেলায় নাগরী প্রকাশনীর ৫১০-৫১১ নম্বর স্টলে ৩০℅ ছাড়ে পাওয়া যাবে। 

এবার সংক্ষিপ্ত আকারে এই কাব্যগ্রন্থে লিখেছেন যাঁরা, তাঁদের লেখার উপর স্বল্প পরিসরে আমার কিছু কথা বলবো। স্বপ্ন শতদল নামের যৌথ কাব্যগ্রন্থে লিখেছেন দুই বাংলার এই সময়ের কবিদের মধ্যে এবাদুল হক (ভারত), কাজী জহিরুল ইসলাম, ভবতোষ দাস (ভারত), শামীম আহমদ, মামুন সুলতান,আয়েশা মুন্নী, ফাহমিদা ইয়াসমিনসহ বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ, সিলেট, বাগেরহাট, নেত্রকোনা, রাজশাহী এবং বাংলাদেশের অনেক জেলার কবিগণ। আমি লক্ষ করে দেখেছি এতে আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের বাঙালি কবির কবিতাও ছাপা হয়েছে। এতে প্রত্যেক কবির একাধিক কবিতা ছাপা হয়েছে। গ্রন্থ সম্পাদক মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী একজন কবি হয়েও সম্পাদনার কাজটি করেছেন যথেষ্ট যত্ন নিয়ে। তাঁর নিজের লেখা কয়েকটি কবিতা তিনি ছাপিয়েছেন একেবারে শেষ পৃষ্ঠা গুলোতে। এখানে তিনি সম্পাদক হিসেবে উদারতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাঁর কবিতাগুলো হলো - নির্বাসিত ভালোবাসা, পৌষালী পঞ্চদশীর চাঁদ, মুক্ত প্রভাত নেই, চেতনার স্বপ্ন পুরুষ, মৃত্তিকা কর্ষণের লড়াই, তুমি আসবে ফিরে, প্রাণের মিনার, উচ্ছল সেই দিন, মৃত্যু প্রতিহত সত্তা এবং সবুজ সাথী শিরোনামে। তিনি তাঁর প্রতিটি কবিতায় সুন্দর ভাবে শব্দের বুনন দেখিয়েছেন। তাঁর কবিতায় আমি প্রকৃতি প্রেম এবং মাটির গন্ধ পেয়েছি। পশ্চিম বঙ্গের কবি জয়ন্ত ব্যানার্জী লিখেছেন দুটি কবিতা বিপ্লব ও বাসনা শিরোনামে। তাঁর কবিতায় সমাজ চিত্র ফুটে উঠেছে এবং কবি মনের অতৃপ্তি কিছুটা পাওয়া যায়। হ্যাঁ, আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি এ জন্যে যে ' স্বপ্ন শতদল ' যৌথ কাব্যগ্রন্থের ৭৬ ও ৭৭ নম্বর পৃষ্ঠাজুড়ে আমি আছি আমার দুটি কবিতা নিয়ে, 'যদি তুমি কবি' এবং ' অতীত আরাধ্য নয়'। সকলের কবিতা পড়ে মনে হয়েছে ত্রুটিগুলো ধরা দেয় না ততোটা। 

যৌথ কাব্যগ্রন্থটিতে মোট ত্রিশজন কবির কবিতা আছে। শুরুতে বলেছি গ্রন্থ সমালোচনা লেখা কাজটি সহজ সাধ্য নয়। তাছাড়া এবিষয়ে দীর্ঘ লেখা পাঠকের বিরক্তি ঘটায়। একটি বিশেষ দিকের উল্লেখ করে শেষ করছি। এই যৌথ কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনায় সম্পাদক প্রত্যেক কবির সংক্ষিপ্ত পরিচিত তুলে ধরে সম্পাদকীয় মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। এতে কবিদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে। স্বপ্ন শতদল একটি যথেষ্ট সমৃদ্ধ যৌথ কাব্যগ্রন্থ বলা যায়। আসল কথা হলো, এই যৌথ কাব্যগ্রন্থ নিয়ে বিশদভাবে লিখলেই তা সার্থক হয়ে যাবে তা কিন্তু নয় ; বরং যেসব পাঠকের কাছে পৌঁছে গেছে তারা যেনো গ্রন্থটি অবহেলায় ফেলে না রাখেন। আসুন আমরা 'স্বপ্ন শতদল' এর কবিতাগুলো পড়ি এবং নিজের পড়ার পাশাপাশি কবিতাপ্রেমি আরও আরও পাঠকের কাছে এটি পৌঁছে দেই। সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ শাখা কবিতা। এই কবিতা সমাজ বদলাতে সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি জানি, শেষ পর্যন্ত সাহিত্য শুদ্ধতার কথা বলে। এই যৌথ গ্রন্থে তাই ঘটেছে এবং এতে এক অনন্য নান্দনিকতার ছোঁয়া লেগেছে । প্রত্যেক কবিদের বাছাইকৃত কবিতার স্বতন্ত্র গ্রন্থে বিন্যাস করে পৃথক পৃথক শিরোনামে সাজানো হয়েছে 'স্বপ্ন শতদল'। আমি স্বপ্ন শতদল এর ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা কামনা করছি। 

# লেখক - কলামিস্ট ও সাহিত্যিক