পবিত্র শবে কদর আজ

পবিত্র শবে কদর আজ

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

আজ (২৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। এদিন সন্ধ্যার পর থেকে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে সারাদেশে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।

লাইলাতুল কদর মুসলমানদের কাছে মহিমান্বিত একটি রাত। বছর ঘুরে আবারো মুসলমানদের কাছে ফিরে এসেছে সৌভাগ্যের এই রজনী।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’ (সূরা: কদর, আয়াত: ৩)।

শবে কদর উম্মতে মুহাম্মাদির শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। আল্লাহর প্রেমে সিক্ত হওয়া, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত অর্জনের এক বিশেষ সুযোগ রয়েছে এ রাতে। যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে গুনাহ মাফের আশায় রাত জেগে আল্লাহর ইবাদত করে। আল্লাহ তার পেছনের সমস্ত গুনা মাফ করে দেন।

‘শবে কদর’ শব্দটি ফারসি। শব অর্থ রাত বা রজনী আর কদর অর্থ মহিমান্বিত, সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদরের অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত। যে রাতে কোরআন নাজিল হয়েছে, সে রাতকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ দশকের রাতগুলোর মধ্যে কোনো এক বিজোড় রাত হলো ভাগ্য নির্ধারণ বা লাইলাতুল কদরের রাত।

ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, অন্যান্য সময় এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সওয়াব পাওয়া যায়, কদরের এই রাতে ইবাদত করলে তার চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এ কারণে সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে সওয়াব হাসিল ও গুনাহ মাফের রাত হিসেবে শবে কদরের ফজিলত অতুলনীয়।

হাদিস শরিফে আছে, ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাত কদর হতে পারে। তবে ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে আলেমদের অভিমত। শবে কদরের এ রাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয় এবং এই রাতকে কেন্দ্র করে কোরআন শরিফে ‘আল-কদর’ নামে একটি সূরাও নাজিল করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও গুনাহ মাফ এবং অধিক সওয়াব হাসিলের আশায় নফল ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকারের মধ্য দিয়ে রাতটি অতিবাহিত করবেন।

স্বয়ং আল্লাহ তাআলা আল কোরআনে এ রাতের মর্যাদা ও তাৎপর্য নিয়ে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এই কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন (হে মুহাম্মদ (সা.)! লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা ও রূহ স্বীয় পালনকর্তার নির্দেশে অবতীর্ণ হন। পরম শান্তি বিরাজ করতে থাকে সূর্যোদয় পর্যন্ত (সূরা: কদর)।

হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন; তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফা’ফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (সুনান ইবনে মাজা)।

ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শবে কদর প্রাপ্তি; রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করলে শবে কদর প্রাপ্তি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। ইতিকাফের মূল কথা হলো সবকিছু ছেড়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যাওয়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি)।

এদিকে, রমজানের শেষ দশ দিনের আমল, তাৎপর্য ও বিধান সম্পকে সারাদেশের মসজিদগুলোর ইমাম ও খতিবরা মুসল্লিদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব তুলে ধরছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, কদরের এই রাত কেবল আমার উম্মতরাই পেয়েছে। মানুষের প্রতি আল্লাহপাকের যত নিয়ামত ও রহমত রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হলো এমন একটি বরকতময় রজনীকে তাঁর বান্দাদের জন্য নসিব করা।

প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ পবিত্র কদরের রজনীতে দেশের অব্যাহত অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে-কদর উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট বুধবার এক বাণীতে এ আহ্বান জানান। পবিত্র শবেকদরের মহিমান্বিত রজনিতে তিনি দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান।

প্রেসিডেন্ট বাণীতে বলেন, পবিত্র লাইলাতুল কদর মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনি। এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন লাইলাতুল কদরে নাযিল হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি কদর রাতে কোরআন নাযিল করেছি। তাই মুসলিম উম্মাহ’র নিকট শবে কদরের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অত্যধিক। আমাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনে হাজার মাসের চেয়েও বেশি ইবাদতের নেকি লাভের সুযোগ এনে দেয় এই রাত। এই মহিমান্বিত রজনি সকলের জন্য ক্ষমা, বরকত, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনুক মহান আল্লাহর দরবারে এ মোনাজাত করি।

তিনি বলেন, ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ মানুষের পাথেয়। এমন একটি সময়ে পবিত্র রমজান মাস পালন করা হচ্ছে, যখন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে করোনা মহামারি, সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহ, অভাব-অনটনসহ বিভিন্ন কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্বিসহ দিন অতিবাহিত করছে। শবেকদরের এই পবিত্র রজনিতে এ সব সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। ‘পবিত্র শবেকদর’ উপলক্ষ্যে বুধবার দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লাইলাতুল কদর এক মহিমান্বিত রজনি। সিয়াম সাধনার মাসের এই রাতে মানবজাতির পথ নির্দেশক পবিত্র আল-কোরআন পৃথিবীতে নাযিল হয়। পবিত্র কোরআনের শিক্ষা আমাদের পার্থিব সুখ-শান্তির পাশাপাশি আখিরাতের মুক্তির পথ দেখায়’।

তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তাআলা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তার অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফেরাত।

প্রধানমন্ত্রী সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, আমরা সকলে এই মহিমান্বিত রজনিতে মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে বিশেষভাবে ইবাদত ও দোয়া প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্ববাসীকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেন’।

পবিত্র এ রজনিতে তিনি মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।