যানজট বনাম মাইগ্রেন (ছোট গল্পঃ)

যানজট বনাম মাইগ্রেন (ছোট গল্পঃ)

 মাসুমা মেহরুন নেসা  

 স্থির এক যানজটে অনেকক্ষণ যাবত আটকে আছে চল্লিশোর্ধ্ব সালেহা। একটি সিএনজিতে একা বসে আছে সে। কিছুদূর মোটামুটি ভালোভাবে এগিয়ে এসে এখন এই মাঝ রাস্তায় তার এই অবস্থা।ভীষণ জ্যাম! ডানে-বামে সামনে পেছনে থেমে থাকা যানবাহন আর তাদের বিরক্তিকর আচরণ ছাড়া আর কোন কিছু চোখে পড়ছে না সালেহার।সিএনজি চালক সামনে পা ছড়িয়ে পেছনে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। বোঝাই যাচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে সে নিজেকে উদাসীন রাখবার প্রাণপণ চেষ্টায় এই পন্থা বেছে নিয়েছে। কারণ একটাই,সে চালক হলেও এই মুহূর্তে এই বিষয়ে তার করণীয় কিছুই নেই।এখন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে সালেহার। দূরের ওই ধূসর আকাশটাকে সালেহার কাছে এখন আরও অনেক দূরের মনে হচ্ছে। এই আকাশটির নাগাল পাওয়া তো দূরের কথা, এই পরিস্থিতিতে ফাঁকফোকর দিয়ে তাকে একনজর দেখারও কোন সুযোগ নেই সালেহার। না,ফিরে যাবারও কোন উপায় কিংবা পথও খোলা নেই। এই একই জায়গায় অনেকক্ষণ যাবত আটকে আছে সে ভয়ানকভাবে ।ভয়ানক অস্বস্তিকর এই পরিবেশ। গন্তব্যে পৌঁছাতে আর কতটা সময় লাগতে পারে তার কোন ধারণা করতে পারছে না সালেহা। মাথার মধ্যে চিনচিন করে উঠলো একটা ব্যথা। চালক একটু নড়েচড়ে আবার আগের মতোই সে চোখ বন্ধ করলো। সালেহা তার কাছে জানতে চায়লো এই জ্যামটা কতদূর পর্যন্ত গিয়েছে? আর কতক্ষণ লাগবে এটা ছুটতে ঠিক জানেন? চালক সরু চোখে একটিবার সালেহার দিকে তাকিয়ে তার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে আবার আগের মত সে চোখ বন্ধ করলো। বিরক্তির মাত্রা বেড়েই চলেছে সালেহার। মাথার চিনচিনে ব্যথাটা আবার জানান দিলো তাকে।হাত ব্যাগ থেকে পানির ছোট বোতলটা বের করে একচুমুক পানি খেয়ে নিল সালেহা। বোতলটা ব্যাগের ভিতর আবার রাখতেই মাথাটা এবার দপদপ করে উঠলো সালেহার।... মাইগ্রেন! নিজের মাথাটি চেপে ধরে হেট হয়ে বসে এই মুহুর্তে তার ঠিক কী করণীয় ভাবতে লাগলো সালেহা।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে তার। আর কতক্ষণ..., আর কতদূর...! ঠিক আর কতকালের পর শেষ হতে পারে মহাকালের এমন অসহনীয় যানজট!