বিদ্যাসাগর যার নেই কোন তুলনা

কলমে - শিবব্রত গুহ---
___ভারতে অনেক মহান মানুষের হয়েছিল জন্ম।
তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এই নামটি শুনলেই মন ভরে ওঠে শ্রদ্ধায়। তিনি ছিলেন উনবিংশ শতকের
একজন বিশিষ্ট বাঙালী শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। ওনার প্রকৃত নাম হল
ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ছিল। এছাড়া, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর
পান্ডিত্য ছিল অগাধ। তিনি প্রথম বাংলা লিপি
সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার হলেন তিনিই।
তাঁকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে, অভিহিত করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তাঁর ছিলেন একজন ভালো মানুষ। তিনি আজীবন মানুষের ভালো করে গেছেন। তিনি গর্বিত করেছেন দেশ ও জাতিকে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্মগ্রহণ করেছিলেন
১৮২০ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ব্রিটিশ ভারতের
বীরসিংহ গ্রামে। এই চলতি বছর, ২০২০ সাল হল
তাঁর দ্বিজন্মশতবর্ষ। যা খুবই আনন্দের কথা। তাঁর পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার অন্তঃপাতী বনমালিপুর নামক গ্রামে।
তাঁর বাবার নাম ছিল ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও
মায়ের নাম ছিল ভগবতী দেবী। তিনি ছিলেন
খুব মাতৃভক্ত। তাঁর মাতৃভক্তি ও পিতৃভক্তির হয় না কোন তুলনা। তিনি ছিলেন একজন মানুষের মতো মানুষ। তাঁর মাতৃভক্তি নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। তার মধ্যে একটি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
একবার, তাঁর মায়ের ডাকে, তিনি ভয়ংকর দামোদর নদ সাঁতরে পার হয়ে গিয়েছিলেন
। কি অসাধারণ ঘটনা! বিদ্যাসাগর মহাশয়, অসম্ভবকে করেছিলেন সম্ভব।
চার বছর নয় মাস বয়সে, তাঁর বাবা, তাঁকে, গ্রামের সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় ভর্তি করে দিয়েছিলেন।ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তাঁর মেধাসত্তা ছিল অতুলনীয়।
তিনি পড়াশোনাতে কখনো অবহেলা করেননি।
১৮২৮ সালের নভেম্বর মাসে, পাঠশালার শিক্ষা শেষ করে, তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁর বাবার সাথে কোলকাতাতে চলে আসেন।
কথিত আছে, পায়ে হেঁটে কোলকাতা আসার সময়ে, পথের ধারে মাইলফলকে ইংরেজি সংখ্যাগুলি দেখে তিনি সেগুলো সহজেই আয়ত্ত
করে ফেলেছিলেন। এমনই ছিল তাঁর আশ্চর্য মেধাশক্তি! ব্যাকরণ পড়ার সময়ে, তিনি সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলেন
১৮৩০ সালে। ১৮৩১ সালের মার্চ মাসে, বিদ্যাসাগর, বার্ষিক পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য, মাসিক ৫ টাকা হারে বৃত্তি পেয়েছিলেন।
১৮৩৫ সালে, ইংরেজি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রূপে,
বিদ্যাসাগর, পারিতোষিক পান। তাঁর একটা মহান গুণ ছিল। তিনি একজন বিরাট পন্ডিত মানুষ ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তাঁর মধ্যে কখনো পান্ডিত্যের অহংকার দেখা যায়নি। তিনি দ্বিতীয় বর্ষে, সাহিত্য পরীক্ষায় অধিকার করেছিলেন
প্রথম স্থান। তিনি মাত্র পনেরো বছর বয়সে,
প্রবেশ করেছিলেন অলংকার শ্রেণীতে।
অলংকার শাস্ত্র কিন্তু একটি খুব কঠিন বিষয়।
কিন্তু, তিনি মাত্র ১ বছরের মধ্যেই, সাহিত্য দর্পণ,
কাব্য প্রকাশ, রসগঙ্গাধর প্রভৃতি অলংকার গ্রন্থে,
ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। যা দেখে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল। ১৮৩৬ সালে,
তিনি শেষ করেছিলেন তাঁর অলংকার পাঠ।
১৮৩৮ সালে, তিনি বেদান্ত পাঠ সমাপ্ত করেছিলেন। এই পরীক্ষায় তিনি অর্জন করেছিলেন প্রথম স্থান।
তাঁর জন্মের সময় তাঁর পিতামহ তাঁর বংশের ধারা অনুযায়ী, তাঁর নাম রেখেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮৩৯ সালের ২২শে এপ্রিল, তিনি হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
সেই পরীক্ষাতে তিনি বিরাট কৃতিত্বের সাথে
হয়েছিলেন উত্তীর্ণ। যা ছিল তাঁর জীবনের এক
অসামান্য সাফল্য।
সংস্কৃত কলেজে, বারো বছর পাঁচ মাস অধ্যয়নের
পরে, তিনি এই কলেজ থেকে একটি প্রশংসাপত্র
লাভ করেছিলেন।
১৮৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে, তাঁর প্রাপ্ত দেবনাগরী হরফে লিখিত এই সংস্কৃত প্রশংসাপত্রে,
কলেজের অধ্যাপকেরা, ঈশ্বরচন্দ্রকে অভিহিত
করেছিলেন " বিদ্যাসাগর " নামে।
বিদ্যাসাগর, মাত্র একুশ বছর বয়সে, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান পন্ডিতের পদে আবৃত হন। তখন তাঁর বেতন ছিল
মাসে ৫০ টাকা।
১৮৪৬ সালের ৫ ই এপ্রিল অবধি, তিনি এই পদের
দায়িত্বে ছিলেন। ১৮৪৬ সালের ৬ ই এপ্রিল, একই
বেতন হারে, তিনি সংস্কৃত কলেজের সহকারী
সম্পাদকের ভার গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে,
তিনি স্থাপন করেন সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি নামে একটি বইয়ের দোকান।
এই বছরেই, প্রকাশিত হয়েছিল, হিন্দি বেতাল পচ্চিসী অবলম্বনে রচিত তাঁর বই বেতাল
পঞ্চবিংশতি। প্রথম বিরাম চিহ্নের সফল ব্যবহার হয়েছিল এই বইতে। ১৮৪৯ সালে,
মার্শম্যানের হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল অবলম্বনে,
তিনি রচনা করেন বাঙ্গালার ইতিহাস দ্বিতীয় ভাগ
গ্রন্থখানি। ১৮৫০ সালের আগস্ট মাসে, মদনমোহন
তর্কালঙ্কারের সাহায্যে, তিনি সর্ব্বশুভকরী পত্রিকা
করেছিলেন প্রকাশ।
বিদ্যাসাগরের কর্মকান্ডের সীমা পরিসীমা ছিল না।
তিনি যা যা কাজ করেছেন সারা জীবন ধরে, তা
সবই মানুষের কল্যাণের জন্য।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্রের মধ্যে দেখা যায়
বহুবিধ গুণের সমাবেশ। তাঁর চরিত্র ছিল কঠোর ও কোমলের সংমিশ্রণ। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন
একজন প্রখর আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি। তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। সকলেই তাঁর ব্যক্তিত্বকে
করতো প্রবল শ্রদ্ধা। তিনি সবসময় মনে করতেন, যে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মাথা নত করে কাজ করার থেকে সেই কাজ থেকে অবসর নেওয়া অনেক বেশি ভালো।
ইংরেজদের তিনি কখনো প্রভুর দৃষ্টিতে দেখতেন না। দেশের দরিদ্র অসহায় মানুষদের প্রতি তাঁর মন ছিল সহানুভূতিতে ভরা। তাঁদের দুঃখ - দুর্দশা,
ব্যথা, বেদনা, কষ্ট, যন্ত্রণা তাঁর হৃদয়কে সবসময় করে রাখতো ভারাক্রান্ত। তিনি সদা সর্বদা তাদের
দুঃখ নিরসনের চেষ্টা করতেন। তাঁর দয়া মায়ার কোন সীমা ছিল না।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বলা হয় দয়ার সাগর।
তিনি সারাজীবন ধরে কত মানুষের যে উপকার করেছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। কেউ কখনো অর্থসংকটে পড়ে, তাঁর কাছে সাহায্যের জন্য এলে, তিনি কখনোই কাউকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেননি। অনেক দরিদ্র ছাত্র, তাঁর দেওয়া
অর্থে, পড়াশোনা ও খাওয়াপরা চালাতো।
দুর্ভিক্ষের সময়, তিনি অন্নসত্র খুলে, সবাইকে দুই বেলা সেখানে খাওয়াতেন। যারা এখানে এসে খেতে লজ্জা পেতেন, তাদের তিনি, বাড়িতে গোপনে চালডাল বা টাকা পাঠাতেন। এজন্য তিনি
কখনো লোকের দানের ওপরে নির্ভর করতেন না।
সব খরচ নিজে করতেন। একবার, বিখ্যাত কবি
মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিদেশে ঋণগ্রস্ত হয়ে,
যখন তাঁর কাছে অর্থসাহায্য চেয়েছিলেন,
তখন তাঁর নিজের কাছে অর্থ ছিল না। তিনি ধার করে মাইকেলকে সাহায্য করেছিলেন। এমনই মহান মানুষ ছিলেন বিদ্যাসাগর।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে মনে করা হয়, বাংলার প্রথম সার্থক গদ্যকার। তিনি সর্বপ্রথম বাংলা সাধু গদ্যের একটি মান্য ধ্রুবক নির্দেশনা করেছিলেন।
প্রয়োজনবোধে তিনি, সেই গদ্যে চলিত ভাষার গতিশীলতা যুক্ত করেন। তিনি ছিলেন বাংলা গদ্যের নব জন্মদাতা। সংস্কৃত কাব্যসাহিত্যে,
তাঁর খুব দক্ষতা ছিল। আবার, নিজের চেষ্টায়, তিনি ইংরেজি ভাষা শিখে সেই ভাষার সাহিত্যের
সাথে সম্যক পরিচিত হয়েছিলেন।
সংস্কৃত শব্দ ও পদবিন্যাসের শ্রুতিমাধুর্য ও
গাম্ভীর্যকে তিনি স্থান দিয়েছিলেন বাংলা গদ্যে।
কাব্যিক ছন্দোময়তায় গদ্যকে দিয়েছিলেন এক ললিত রূপ। ইংরেজি সাহিত্যের আদর্শে,
যতিচিহ্নের ব্যবহার করে, বাংলা সাহিত্যে এক
নবদিগন্তের তিনি করেছিলেন সূচনা।
" শকুন্তলার অধরে নবপল্লবশোভার
সম্পূর্ণ আবির্ভাব ; বাহুযুগল কোমল
বিটপের বিচিত্র শোভায় বিভূষিত ;
আর, নব যৌবন, বিকশিত
কুসুমরাশির ন্যায়, সর্বাঙ্গ ব্যাপীয়া
রহিয়াছে৷ ( শকুন্তলা, প্রথম পরিচ্ছেদ)। "
- কি অসাধারণ সৃষ্টি বিদ্যাসাগরের! এর কোন তুলনাই হয় না। কি অপূর্ব শব্দচয়ন তাঁর! বাংলা
গদ্য সাহিত্যকে নানা অলংকারে সমৃদ্ধ করেছিলেন
তিনি।
তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছিলেন, " বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যভাষার উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সুবিভক্ত, সুবিন্যস্ত,
সুপরিচ্ছন্ন ও সুসংহত করিয়া তাহাকে সহজ গতি
ও কর্মকুশলতা দান করিয়াছিলেন। "
তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো বাংলা সাহিত্যের এক একটি
সম্পদ। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করছি ঃ
বর্ণপরিচয় ১ম ও ২য় ভাগ ১৮৫৫, ঋজুপাঠ প্রথম,
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগ ১৮৫১ - ১৮৫২, সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা ১৮৫১, ব্যাকরণ কৌমুদী
১৮৫৩, শকুন্তলা ১৮৫৪, সীতার বনবাস ১৮৬০,
বাঙ্গালার ইতিহাস ১৮৪৮, জীবনচরিত ১৮৪৯,
নীতিবোধ ১৮৫১, বোধোদয় ১৮৫১, কথামালা ১৮৫৬, চরিতাবলী ১৮৫৭, ভ্রান্তিবিলাস ১৮৬১,
প্রভৃতি।
বাংলা তথা ভারতে নারীশিক্ষার প্রসারে বিরাট অবদান ছিল যে মানুষটির, তিনি আর কেউ নন,
তিনি হলেন আমাদের সবার সবার প্রিয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বাংলা তথা ভারতের নারীজাতি যখন শিক্ষার আলো থেকে ছিল বঞ্চিত, অবহেলিত, তখন এই নারীজাতিকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা করেছিলেন। এই মহান কাজ করতে গিয়ে তাঁকে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়।
কিন্তু, তিনি তা করেছিলেন অগ্রাহ্য। তিনি ছিলেন তাঁর সংকল্পে অটল। তাঁর গতিরোধ কেউ পারেনি করতে। তিনি ও ড্রিংকওয়াটার বিটন উদ্যোগী হয়ে, কোলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিদ্যাসাগর ছিলেন
এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক। এই বিদ্যালয় বর্তমানে
বেথুন স্কুল নামে পরিচিত। ১৮৫৭ সালে, বর্ধমান জেলায়, তিনি মেয়েদের জন্য একটা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
গ্রামাঞ্চলে নারীদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বাংলার বিভিন্ন জেলায় এক সম্মেলনীর সূচনা করেছিলেন। সেযুগে দাঁড়িয়ে এ ছিল এক অভাবনীয় উদ্যোগ। যার প্রশংসা করেছিলেন অনেকে। এর নাম ছিল স্ত্রী শিক্ষা বিধায়নী সম্মেলনী। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে,
১৮৫৮ সালের মে মাসের মধ্যে, নদীয়া, বর্ধমান, হুগলী ও মেদিনীপুর জেলায় ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
সত্যিই এই উদ্যোগ বিরাট প্রশংসনীয়। ১৮৬৪ সালে, বাংলায় বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। সেটা গিয়ে দাঁড়ায় ২৮৮ টিতে। এর পেছনেও বিদ্যাসাগরের বিরাট ভূমিকা ছিল।নারীরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে
এক নতুন জীবন ফিরে পেল। সারা দেশজুড়ে নারীজাতির মধ্যে এক অপূর্ব সাড়া পড়ে গেল।
এসবই সম্ভব হয়েছিল একমাত্র, শুধু একমাত্র,
বিদ্যাসাগরের জন্য।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সারাজীবন ধরে অনেক মহান কাজ করেছিলেন। তার মধ্যে একটি হল
সমাজে বিধবা বিবাহের প্রচলন করা। এই কাজ
করতে গিয়ে তিনি অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। কেউ কেউ তাঁর প্রচন্ড সমালোচনা করে। কিন্তু, বিদ্যাসাগর ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। তিনি অসম্ভবকে করেছিলেন সম্ভব।
বাংলা তথা ভারতের বুকে তিনি স্থাপন করেছিলেন এক নতুন দৃষ্টান্ত।
বিদ্যাসাগর সংস্কৃত সাহিত্যের এক বিরাট পন্ডিত মানুষ ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি ছিলেন একজন উদার মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি। তিনি খোলামনে
পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি ছিলেন নারীমুক্তি আন্দোলনের একজন
প্রবল সমর্থক। সেযুগে, মেয়েদের অল্প বয়সে
বিয়ে হয়ে যেত। সেকালের হিন্দু বিধবা নারীদের
প্রতি যে অত্যাচার হতো, তা ছিল অবর্ণনীয়।
সেকালের হিন্দু বিধবা নারীদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার বিদ্যাসাগরের হৃদয়কে করেছিল
ব্যথিত। তিনি এর প্রতিরোধ কিভাবে করা যায়?
তার জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি এই সংগ্রাম
করেছেন বীরত্বের সাথে। এই বীরত্বের হয় না কোন তুলনা।
তিনি হিন্দুশাস্ত্র উদ্ধৃত করে, প্রমাণ করেছিলেন,
যে, লোকাচার ধর্মের নামে সমাজের বুকে যে প্রচলিত আছে, আসলে তা ধর্ম স্থবিরতার আচারমাত্র। তাঁর এই সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত হয়েছিল সফল। ১৮৫৬ সালে, ব্রিটিশ সরকার,
বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
তবে, শুধু আইন প্রণয়ন করেই থেমে যাননি বিদ্যাসাগর। তিনি এক অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন সেযুগে দাঁড়িয়ে। তাঁর উদ্যোগে,
একাধিক বিধবা বিবাহের আয়োজন করা হয়েছিল।
বাংলার বিধবা নারীরা ফেলেছিল স্বস্তির নিঃশ্বাস।
তারা পেয়েছিল এক নতুন জীবনের আস্বাদ।
এর মূল কৃতিত্ব ছিল বিদ্যাসাগরের, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হলেন ভারতমাতার এক বীর সন্তান। তিনি চিরকাল সমাজের বুকে ঘটে চলা অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। করেছেন তিনি বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিজন্মশতবর্ষে, তাঁর প্রতি জানাই আমার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি ও প্রণাম।
তিনি চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয়ে।