অনলাইন ক্লাস ও একজন অভিভাবকের প্রত্যাশা

অনলাইন ক্লাস ও একজন অভিভাবকের প্রত্যাশা

অনলাইনক্লাস ও একজন অভিভাবকের প্রত্যাশা

উম্মে হাবিবা আফরোজা।

বর্তমানে সর্বাধিক আলোচিত, সমালোচিত এবং ব্যয়বহুল কাজের মধ্যে   'অনলাইন ক্লাস'  প্রসঙ্গটি কম এগিয়ে নয়। প্রতিটি বিষয়ে মূলত লাভ-ক্ষতির দিক থাকে।তেমনি অনলাইনক্লাসের বেলায়ও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। লাভের চেয়ে ক্ষতির মাত্রাটা যখন চরমে, তখন গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আসে।
করোনাকালীন দুঃসময়ে অর্থনৈতিক চাকা যেমন অচল হয়ে পড়েছে তেমনি অসাড় হয়ে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থাও। তবুও হাল না ছেড়ে প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে।কিন্তু এর আগে ভাবা উচিত, আমরা যেপথে এগুচ্ছি; তা কতটুকু সুফল বয়ে আনবে!

অনলাইন ক্লাস করতে একজন শিক্ষার্থীর অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়।যেমন- একটি ল্যাপ্টপ বা মানসম্মত স্মার্টফোন, WiFi সংযোগ বা নেট সুবিধা দরকার।
এদিকে, উন্নয়নশীল দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা গ্রামে বসবাস করে থাকে।যেখানে নেট সংযোগ থাকলেও নেট সমস্যা প্রবল, দুর্বল গতি। যেখানে ফোনে অফলাইনে যোগাযোগও অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে, সেখানে অনলাইনক্লাস  
রীতিমতো বিলাসিতা। হতদরিদ্র পরিবার যেখানে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খরচ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে কেবল স্বল্পকালীন অনলাইনক্লাস করার জন্য লেপ্টপ কিংবা দামি ফোন কেনা, নেট কিংবা ওয়াইফাই সংযোগ নিতে অসামর্থবানদের কাছে এটি বিলাসিতা বই  কিছু মনে হয় না।


আবার রয়েছে কিছু  স্পর্শকাতর বিষয়ও।কোমলমতি শিশুদের হাতে যেখানে বই ও খেলনা তোলে দেওয়ার কথা, সেখানে আমরা তোলে দিচ্ছি এক ক্ষতিকর যন্ত্র, মোবাইল ফোন। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্ট ফোনের ক্ষতিকর রশ্মি শিশুদের মস্তিষ্কের বিকৃতি ও চোখের রেটিনাতে মারাত্মক ক্ষতি সাধনে সক্ষম। যেন কী সেটাই ঘটাতে আমরা তৎপর। তাও আবার ৭/৮ বছরের শিশুদের হাতেও। । অনেকে আসক্ত হয়ে পড়েছে অনলাইনক্লাসের নামে মোবাইল টিপতে।এ যেন বিভৎস ও লোমহর্ষক বিবরণ। উল্লেখ্য, এমনও অনেক শিশু রয়েছে, যারা চোখের সমস্যায় ভুগছে,যাদের কাছে স্মার্ট ফোনটাই হয় তো পরবর্তীতে অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। অসহায় হয়ে তারাও বাধ্য হয়েছে হাতে স্মার্টফোন নিতে।


আমরা কী 'অনলাইনক্লাস সর্বসাধারণের জন্য নিশ্চিত করতে পেরেছি!? না, পারিনি। এতে একদল শিক্ষার্থী সুফল ভোগ করতে সক্ষম। যাদের  WiFi সংযোগ আছে কিংবা রীতিমতো ডাটাপ্যাক কিনতে পারে । কিন্তু সমাজের প্রান্তিকগোষ্ঠী ডাটাপ্যক কিনতে না পারায় অনলাইনক্লাসের সুবিধা পাচ্ছে না। তাহলে মৌলিক প্রয়োজন এবং মৌলিক অধিকার কার ভাগ্যে জুটলো, আমরা দেখছি?করোনাকালে আমাদের মতো  উন্নয়নশীল দেশে অনলাইনক্লাসের পরিবর্তে যদি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসভিত্তিক শিট বা নোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহ করা হয়, তা সহজ ও ক্ষতিবিমুখ হতো এবং এটি তুলনামূলক সহজ ও কম খরচের। তাছাড়া চলতি পন্থায় সবার জন্য নেট সুবিধা ও নেটের গতি দুর্বল হওয়াতে ক্লাসের নামে সময়ের অপচয় হচ্ছে। শিক্ষা সর্বজনীন ও কল্যাণমুখী হওয়া উচিত।

আমাদের কোমলমতি শিশুদের মেধা ও মননে বেড়ে ওঠার জন্য তাদের হাতে মোবাইলফোন তোলে দিয়ে তাদের প্রিয় শৈশবটা যেন কেড়ে নেওয়া না হয়।।
প্রতিটি শিশুই বেড়ে উঠুক সুচিন্তিত মস্তিষ্কে ও মননে। আর এটিই প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, একজন অভিভাবক হিসেবে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।