অভিশপ্ত বাইশে শ্রাবণ

অভিশপ্ত বাইশে শ্রাবণ
    সামসুজ জামান
সাহিত্যাকাশে ছিলে স্বর্ণময় দ্যুতি নিয়ে
সে দ্যুতি ছিল সবার প্রেরণা।
নিঃসন্দেহ সূর্য তুমি, মধ্যমণি আকাশের
এ দীপ্তি আর পেল কতজনা?
অশুভ চক্রান্তকারী, বিরুদ্ধ শক্তির জোট
বজ্রগর্ভ যেন কালো মেঘ।
মিথ্যে ছুটে এল শুধু বিষাক্ত ছোবল নিয়ে
থামেনি তোমার তাতে বেগ।
তোমার জাহ্নবীধারা হিমালয় চূড়া থেকে
বিগলিত করুণার রাশি।
আমাদের মনে জমা সব কলঙ্ক মুছে দেয় 
প্রাণে বাজে কৃষ্ণের বাঁশি।
জীবনের প্রতি ক্ষণ নবজন্ম লাভ করে
তোমার লেখনী-স্পর্শ পেয়ে।
অনিবার্য দুঃখ-রাশি অবহেলে মুছে যায়
তোমার অমৃতগান গেয়ে। 
 সাহিত্যের কোন ক্ষেত্র অনুর্বর, অনাবাদী
পড়ে ছিল রবীন্দ্র-কর্ষণে?
জন্ম-মৃত্যু, প্রেম-পূজা, সবখানে উপস্থিতি
বিদ্যমাণ শয়ণে-স্বপণে।
শ্রাবণের এই দিনে ঝর ঝর বারিধারা
অকূল আঁধার হয়ে এল।
কি যে হল, কেন হল? সহসা প্রাণের থেকে
সব আলো কেন নিভে গেল ?
হায়! রবি কোথা গেল পৃথিবী আঁধার করে
শূণ্য করে সকলের মন?
সকলের প্রাণপ্রিয় রবি গেল অস্তাচলে
অভিশপ্ত বাইশে শ্রাবণ! 
         
       
 শ্রাবণীর জন্যে দু-কথা
             সামসুজ জামান
সেই মেয়ের নাম শ্রাবণী তার রূপ যে কালো বরণ।
বলা কওয়া নেই হঠাৎ এসে করলো এ মন হরণ।
এ ও আসলে রাজকন্যে, আমার কৃষ্ণকলি।
আদর করি যখন তাকে বর্ষারানী ও বলি।
দামাল মেয়ে ছুটে এল ঈশান কোণের থেকে।
এমন মাতাল করলো আমায় বিনা রেখে ঢেকে!
ভাসিয়ে দিল, ডুবিয়ে দিল, দেদার জলোচ্ছ্বাসে।
আমার মনের চিন্তা যত সেই প্লাবনেই ভাসে।
জলে ভিজে মুক্ত হল মনের যত কালো।
ভাবি নি সেই আঁধার, মনে জ্বালবে এমন আলো।
রুদ্ধ যত আবর্জনা , জীর্ণ গ্লানি, জরা।
নিভিয়ে আগুন দেয় সে মুছে, ঘুঁচিয়ে যে দেয় খরা।
তার পরশেই শ্যামল শোভা নামে চরাচরে।
বাংলা মায়ের দুচোখেতে শ্রীময়ী রূপ ধরে।
ভুবন মোহন নয়ন শোভন অনির্বচন কান্তি।
বাস্তবিকই আমার মনে আনে অনাবিল শান্তি।
শ্রাবনী হোক, কৃষ্ণকলি অথবা বর্ষারানী।
দুই নয়নে প্রলেপ ঢালে মনেতে শান্তি বাণী।
যুগ-যুগান্তর তোমার জন্যে আসব ফিরে ফিরে।
তুমিও এস আমার জন্যেই অনন্তকাল ধরে।