আদর্শ ছাত্র গড়ার কারিগর আল্লামা শেরপুরী রাহ.

আদর্শ ছাত্র গড়ার কারিগর আল্লামা শেরপুরী রাহ.

 শেখ খালিদ সাইফুল্লাহ

আজ ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইংরেজি, প্রায় ৪০ বছর পূর্বে এই দিনে আমরা এমন এক ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছি, যিনি ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ আলেমে-দ্বীন , রাহবারে উম্মত ও ছাত্র-শিক্ষকের নয়নমণি, একজন যোগ্য অভিভাবক, যার উপস্থিতি আজো বিরল। যিনি ছিলেন বৃহত্তর সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও সর্ব মহলে পরিচিত মুখ, উস্তাযুল আসাতিযা আল্লামা শেরপুরী রাহ.। হ্যাঁ,আমি ইয়াদগারে আসলাফ হিসেবে এমন এক আদর্শ শিক্ষাবীদ সম্পর্কে বলছি যিনি হলেন আমাদের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী বিদ্যাপীঠ ঢাকাদক্ষিণ দারুল উলুম হুসাইনিয়া মাদ্রাসার সাবেক মুহতামিম হযরতুল আল্লাম মাওলানা আব্দুর রহীম খাঁন শেরপূরী রাহ.।তিনি গোলাপগঞ্জ থানার ফাজিলপুর পরগনার শেরপুর গ্রামে ১৯১০ সালে আলহাজ্ব মৌলভী আব্দুল গনী রাহ.'র ওরসে জন্ম গ্রহণ করেন। অগাধ পান্ডিত্বের অধিকারী,জ্ঞান গরিমায়,আমল আখলাকে পরিপূর্ণ এই মহান ব্যক্তি সালফে সালিহীন এবং আকাবীরের ভাবধারায় উজ্জীবিত একজন সত্যিকারের নায়েবে রাসূল ছিলেন।

শিক্ষাজীবনে তিনি প্রথমে স্থানীয় মকতবে, পরে ভাদেশ্বর কুড়ির বাজার মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। অত:পর ফুলবাড়ী আজিরিয়া আলিয়া মাদরাসায় অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চ শিক্ষা লাভের প্রবল আকাঙখা নিয়ে ভর্তি হন ভারতের রামপুর আলিয়া মাদরাসায়। সেখানে নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইলমে দ্বীনের উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত করে জন্ম স্থানে প্রত্যাবর্তন করেন।

কর্মজীবনে তিনি বারকোট মাদরাসায় শিক্ষকতা অতঃপর দেউলগ্রাম মাদরাসায় সিনিয়র শিক্ষক এবং পরবর্তীতে অত্র মাদরাসার শিক্ষা সচীব হিসাবে নির্বাচিত হন, সর্বশেষ এলাকাবাসীর অনুরোধে তিনি ও তাঁর স্নেহাস্পদ ছাত্র শায়খে রায়গড়ী রাহ.কে নিয়ে ঢাকাদক্ষিণ মাদরাসায় চলে আসেন। তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর ঢাকাদক্ষিণ দারুল উলুম হুসাইনিয়া মাদ্রাসার এহতেমামির দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে আঞ্জাম দিয়ে পরপারে যাত্রা করেন। শুধু এহতেমামি নয় বরং একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার সাথে তিনি অত্র মাদ্রাসার শিক্ষা সচিবও ছিলেন। মাদ্রাসা পরিচালনা ও জীবনগঠনমূলক কাজে তাঁর কোন জুড়ি ছিলো না,তিনি ছাত্র গড়ার কারিগর ছিলেন। তিনি প্রত্যেক ছাত্রকে তাঁর ভালোবাসা ও স্নেহ-মমতা দিয়ে সন্তানের মতো আপন করে নিতেন। অপরদিকে নৈতিক শাসনের দ্বারা ছাত্রদেরকে এমনভাবে পরিশ্রমী ও সংযমী করে গড়ে তুলেছিলেন,যার ফলশ্রুতিতে আজো তাঁর একেক জন ছাত্র কওমের একনিষ্ঠ রাহবার ও আকাবিরে দেওবন্দের যোগ্য উত্তরসূরী হয়ে দ্বীনী খেদমতে সমাজের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। আবার অনেকেই আদর্শ শিক্ষকের অনুসৃত পথে মৃত্যু অবধি দ্বীনের খেদমত করে ইহজগত ত্যাগ করেছেন। কোনো ছাত্রকে সর্বাদিক বিষয়ে একজন যোগ্য ব্যক্তি রূপে কিভাবে গড়ে তুলা যায়,দ্বীন—ধর্ম ও দেশ—জাতির কল্যাণকামী রাহবার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, ইহাই ছিল আল্লামা শেরপুরী রাহ.এর ঐকান্তিক সাধনা।

এই মহান মনীষী বিগত ১৪০৩হিজরী মুতাবেক ১৯৮৩ ইংরেজীর ২৩শে ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ৪৫মিনিটের সময় ঢাকাদক্ষিণের দত্তরাইল গ্রামে নিজ বাড়িতে স্বীয় মাওলায়ে হাক্বীক্বীর ডাকে সাড়া দিয়ে ইহধাম ত্যাগ করেন(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু বারবার মনে পড়ছে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ থেকে শোনা এই বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বের কর্মগাঁথা মহিমামন্মিত জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন উক্তি,যা সত্যিই আমার জন্য শিক্ষণীয় ও অনুকরণীয় আদর্শ।

রব্বে কারীম যেন হযরতের দ্বীনি খেদমত সমূহকে কবুল করে জান্নাতের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করুন এবং আমাকেও তাঁর মতো সত্যিকার অর্থে দ্বীনের খেদমত করার তৌফিক দান করুন। আমীন!