আধ্যাত্নিক কবি— (তাহমিনা চৌধুরী'র কাব্য বিশ্লেষণ)
মোহাম্মদ আলী
সাধারণত প্রতিটি মানুষের ভেতরে জন্ম নেয় কিছু অলৌকিক বিষয়। তাদের চিন্তা-চেতনা একসময় সেই অলৌকিক ধারাকে নতুন রূপ দিতে প্রভাবিত করে। তারই ধারাবাহিকতায় উপলব্ধির মাত্রা বেড়ে যায়।
জনশ্রুতি আছে তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো না, তাহলে তুমি তাকে উপলব্ধি করতে পারবে না। একজন মানুষকে পরখ করতে, করতে, করতে করতে, কাঙ্ক্ষিত মানুষে পরিণত হয়।
তখন তার সকল বিষয় তোমাকে ভাবিয়ে তোলে, তাকে নিয়েই তোমার স্বপ্ন সাজে, তাকে নিয়েই তোমার ভালো লাগার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
একসময় তা উচ্ছ্বাসে পরিণত হয়।
জানার আগ্রহ ক্রমাগত তার দিকে ধাবিত করে, ইচ্ছে হয় তার গুণকীর্তন বিশ্লেষণের, ইচ্ছে হয় আরেকটু জানার। সারাক্ষণ তার ভাবনা থেকে নতুন ভাবনার জন্ম নেয়। একসময় তা কঠিন শিলার মতো ভাবাতুর হতে হতে আধ্যাত্মিক রূপ ধারণ করে।
যারা আধ্যাত্নিক শব্দের আন্তপ্যান্ত বুঝতে সচেষ্ট, তারা সহসাই জাত কূল ত্যাগ করে। আর যারা কেবলই মাথা নেড়ে কালক্ষেপণ করে, তারা পরবর্তী একসময় উর্দাকাশ মুখী হয়ে বলে— এ যেনো ধর্মতত্ব বাণী—
বোধগম্যের পাল্লায় স্থান পায় না হেতু উড়িয়ে দেয়।
এবার আসি প্রাসঙ্গিক ভাবনা—
সম্প্রতি একটি লেখা চোখে পড়লো। সেই লেখাটি লিখেছেন কবি তাহমিনা চৌধুরী—
কবিতার আলোকে কতটুকু হলো, না হলো সেটি আমার আলোচনার বিষয় না। আমার আলোচনার ভিন্ন আঙ্গিকে, তার শব্দ যোজনে আধ্যাত্মিকতা আছে কি না তা নিয়ে—
--------- একটা লেখা এমনই যে,
—"নীল জলে এ কোন্ মিতালি,আকাশ যায় হেসে,
শুভ্র মেঘের দিশে হারিয়ে, কোথায় চলে ভেসে?
★এখন প্রসঙ্গত এই প্রশ্নটা আসে, নীল জলে কার সাথে মিতালি করলো, এবং কেন-ই বা আকাশ হাসলো। পরক্ষণে আসছে শুভ্র মেঘ দিশে হারিয়ে, কোথায় চলে ভেসে —
এখন প্রশ্নটা দাঁড়ায় মেঘ দিশাহারা হলো কেনো এবং কেনোই বা অচেনা পথে ভেসে যাচ্ছে।
এই চারটি লাইনে, আমি আধ্যাত্মিকথার গন্ধ খুঁজে পেলাম— কবির ভাবনায় নীল জলের সাথে মিতালি, আর আকাশের হাসিটা আধ্যাত্মিক মনে হলো।
এই দুই'য়ের খুলু লিখিতভাবে কোনো পংক্তি নেই। তাহলে এলো কোত্থেকে, নিশ্চিত বলতে পারি ভাবনার গভীরে প্রবেশ করলে যে আধ্যাত্মিকতা আসে, তা থেকেই এসেছে।
কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, কিন্তু কারো মনে আধ্যাত্মিকতা না থাকলে, কিংবা কারো সাথে মিতালি করতে পারলে,এমন দুরভিসন্ধি প্রকাশ পেল কি করে।
মিতালি এমন ধরনের শক্তি, যেখানে শত-শত গুরু, ঋষি মণিষীরা দিশেহারা হয়েছেন। ব্রহ্মবিদ্যা মলিন হয়েছে অহর্নিশ।
—"কাশবনে আজ মাতাল হাওয়া
ঘাসফড়িং এর মেলা,
বাহারি রঙের প্রজাপতিরা শুধু
কেবল করে খেলা"
★আবার ও সংক্ষেপে যদি লিখি, কাশ বনের কথা, তাহলে লিখবো যে, কাশবন নিয়ে ভাবনা শুধুই এ যুগের নহে, সকল যুগের, সকল প্রেমিক প্রেমিকা তাতে দোল খায় এবং ঘাস ফড়িং নিয়ে মিতালি খেলায় মত্ত থাকে।
অনুরূপ বাহারি রঙের প্রজাপতির কথা, আধ্যাত্মিক ভুবনে প্রজাপতি ও উড়ে চলে যায়, আবার পাগলা মন নিয়ে খেলার কথা চলে।
—"কাহারো পায়ের চঞ্চল ধ্বনি
রোদেলা দুপুরে শুনি,
সাদাফুল গুলো উড়ে বেড়াতে
কেঁপে উঠে ধরণী।
★কাহার পায়ের চঞ্চল ধ্বনি, কাহার পায়ে নূপুর পরা? কে আবার সেই নূপুর পরে ছমছম ধ্বনিতে মুখরিত করলো।
অসময়ে ডেকে বলে, আমি তৃষ্ণা কাতর।
সাদা রজনীগন্ধা কেনো কাঁপায় গো আমার ধরণী। আমার সকল উষ্ণতা কেনোই বা তাকেই ঘিরে থাকে। তার মাঝেই আমি কেনো খোঁজে পাই চঞ্চলিকা। কেনই বা খুঁজতে থাকি, সে যে আমার প্রাণের সঞ্চারক।
—"ধুক ধুক হৃদয়ে, প্রফুল্ল্য প্রয়াস
স্থির দাড়া হে মন,
ক্লান্তির শেষে নির্মল হাসি বলে
এইতো“শরতের আগমন”।
★স্তিমিত হৃদয়টা সারাক্ষণ নির্বাক থাকে, ঘুমায় না, খায় না। হৃদয়ের সকল আকুতি দিয়ে, প্রাণ সজনী কে ডাকে। তার হাসির মাঝে নিজেকে সমর্পণ করে সবটুকু বিলিয়ে দিতে মন চায়। সেইতো একমাত্র বাহক, যে জল আর স্থলের মিলন ঘটায়। মেঘমালা উড়িয়ে নিসৃত নিঃশ্বাসে কাছে টানে। ভাবনায় যে মিলন ঘটায় সেইতো আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হয়। ইচ্ছেটা বলে দেয়, শরৎ এসেছি বুঝি, নবরূপে নব সাঁঝে।