আফ্রিকায় প্রথম সৌরগ্রাম

আফ্রিকায় প্রথম সৌরগ্রাম

বাংলাভাষী ডেস্কঃ
মরক্কোর আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলবর্তী ছোট্ট একটি গ্রাম ইদ এমজাদি। এটিই আফ্রিকার প্রথম সৌরবিদ্যুতের গ্রাম। প্রত্যন্ত এ গ্রামের সবাই সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। টিভি, ফ্রিজ থেকে শুরু করে সব ধরনের গৃহস্থালির কাজ চলছে এ বিদ্যুতে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ক্ষেত্রে গ্রামটি এখন বিশ্বের মডেল হওয়ার পথে। খবর সিএনএনের। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে আফ্রিকা অনেকখানি এগিয়ে গেছে। তবে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইআরইএনএ) হিসাবে, এ মহাদেশে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়াতে আরও বেশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার। কারণ সারা বিশ্বে উৎপাদিত মোট সৌরবিদ্যুতের এক শতাংশেরও কম উৎপাদিত হয় আফ্রিকায়। অথচ এ অঞ্চলে প্রচুর সূর্যালোক পাওয়া যায়।

এ মহাদেশের মধ্যে সবুজ জ্বালানি ব্যবহারের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছে মরক্কো। রীতিমতো দৃষ্টান্ত বলা যায়। দেশটি বিদ্যুতের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৩৫ শতাংশ মেটায় নবায়নযোগ্য উৎস থেকে। ২০৩০ সালের মধ্যে এ অনুপাত ৫৩ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে মরক্কো সরকার।

আইআরইএনএর মহাপরিচালক ফ্রান্সেসকো লা কামেরা বলেন, টেকসই জ্বালানিতে মরক্কো প্রশ্নাতীতভাবে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে চলে গেছে। দেশটি এরই মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ ফার্ম স্থাপন করেছে, নাম নূর উয়ারজাজাতে কমপ্লেক্স। ইসাউয়িরা শহরের উপকণ্ঠে ইদ এমজাদি গ্রামটি প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে গেছে।

এসব এলাকায় জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পৌঁছানো খুব ব্যয়বহুল। এ কারণে আফ্রিকার অনেক গ্রামই এখন সীমিত আকারে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। তবে ইদ এমজাদি এখানে ব্যতিক্রম। এ গ্রামের বিদ্যুতের চাহিদা পুরোটাই মেটানো হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে। মরক্কোর সৌরবিদ্যুৎ কোম্পানি ক্লিন এনার্জি সবার আগে প্রত্যন্ত এলাকায় কম খরচে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর একটি টেকসই মডেল দাঁড় করায়। এরাই এখন গ্রামে গ্রামে সৌরবিদ্যুৎ দিচ্ছে। এ স্কিম শুরুর আগে ইদ এমজাদির বাসিন্দারা রাতে মোমবাতি জ্বালাতেন।

তাছাড়া আয় সীমিত হওয়ায় রাতের অন্যান্য কাজ ও পড়াশোনার জন্য বড় জোর ঘণ্টাখানেক আলো জ্বালানো মতো মোমবাতি কেনার সামর্থ্য ছিল তাদের। ঘর গরম রাখা ও রান্নার জন্য তারা ব্যবহার করতেন গাছের বাকল। তাছাড়া কাছাকাছি পানির কোনো উৎস না থাকার কারণে বিশেষ করে কন্যাশিশুদের প্রায়ই স্কুলে যাওয়া হতো না।

এই গ্রামে ক্লিন এনার্জির প্রকল্পের প্রথম ধাপ ছিল এক লাখ ৮৮ ডলার ব্যয়ে একটি পানির ট্যাঙ্কি বসানো। এর পরবর্তী ধাপে বসানো হয় ৮ দশমিক ৩২ কিলোওয়াট ক্ষমতার মোট ৩২টি সোলার প্যানেল। মিনি-গ্রিডের মাধ্যমে গ্রামবাসীর মধ্যে এ বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ প্লান্ট থেকে গ্রামের ২০টি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেক বাড়িতে চলছে ফ্রিজ, ওয়াটার হিটার, টেলিভিশন, ওভেন এবং অন্যান্য রিজার্বেল ডিভাইস। এ প্লান্টে একটি ব্যাটারি নেটওয়ার্কও রয়েছে, যাতে দিনের আলো না থাকলে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ দেয়া যায়।