আবারও শুরু ২ দিনের অবরোধ,ক্ষতির আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের

 বাংলাভাষী ডেস্ক::

প্রথম দফার কর্মসূচিতে প্রাণহানী, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরসহ ব্যবসায়ে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির পর নতুন কর্মসূচিতে এ শঙ্কা আরও একদফা বাড়লো বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।  

গত ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর একদিনের হরতাল ও তিন দিনের অবরোধ শেষে আজ থেকে আবারও দুইদিনের অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

প্রথম দফার কর্মসূচিতে প্রাণহানী, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরসহ ব্যবসায়ে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির পর নতুন কর্মসূচিতে এ শঙ্কা আরও একদফা বাড়লো বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।   

অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে টিকে থাকলে হলে এসব কর্মসূচির কোনো বিকল্প নেই। 

বিএনপি-জামায়াত সূত্র জানায়, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত যে হারে গণগ্রেপ্তার চলছে– তা ভয়াবহ এবং এর মাত্রা আরও বাড়তে থাকবে আগামীতে। তাই এ পরিস্থিতিতে এসে মাঠের কর্মসূচিতে সরকারকে চাপে রাখতে আপাতত হরতাল-অবরোধের কোনো বিকল্প নেই। তাই তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত তারা টানা কঠোর কর্মসূচির পালন করে যাবেন।

বিএনপি-জামায়াত সূত্রে আরও জানা যায়, আন্দোলন থামানোর জন্য সরকার দলের প্রথম-দ্বিতীয় সারির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করবে– তাই দলের তৃতীয় সারির নেতাকর্মীদের দ্বারা সারাদেশে আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলের সর্বোচ্চ পযায় থেকে। 

চলতি নভেম্বর এবং আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি– এই তিন মাস আন্দোলন করা লাগতে পারে, তাই লাগাতার এ তিনমাস আন্দোলন টেনে নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। 

ইতোমধ্যে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে একটি লিয়াজু কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

বিএনপি-জামায়াত সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে সারাদেশেকে সড়ক, নৌ ও রেলপথে বিচ্ছিন্ন করতে চায় বিএনপি-জামায়াত।

বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা দ্য বিজনেস স্টাডার্ডকে জানান, ঢাকাকে সারাদেশে থেকে বিচ্ছিন্ন করে, ঢাকায় ঢুকবে বিএনপি নেতাকর্মীরা। ঢাকায় আবারও ২৮ তারিখের মতো জনসমাগম ঢাকাতে চায় দলটি এবং সেটাও আগামী নির্বাচনের আগেই করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এদিকে, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে তার ঢাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে আজ ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হরতাল ডেকেছে বিএনপি। বন্দর নগরীতে হরতাল ডাকায় এতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

যদিও গতকালের বিবৃতিতে বিএনপি জানিয়েছে, নগরীর অ্যাম্বুলেন্স, সংবাদপত্র বহনকারী যানবাহন, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিস হরতালের আওতার বাইরে থাকবে।

এদিকে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের সমাবেশের পর বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে দেশে এ পর্যন্ত ১৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ কনস্টেবল ও একজন সাংবাদিক রয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত নেতাদের দাবি, বাকি হতাহতরা দলীয় সদস্য।

ক্ষতির আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, একদিন হরতাল বা অবরোধ থাকলে ৩,০০০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়। সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারায়। 

"এছাড়া ভাঙচুরের ক্ষতি তো রয়েছেই। এফবিসিসিআই সব সময়ই ব্যবসার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায়। আমরা চাই সহিংসতা ছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচি পালিত হোক," বলেন তিনি।

স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বায়ারদের কাছে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 

বর্তমান অবস্থাকে তিনি দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করে, এসব সমস্যা সমাধানে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেপ্তার

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর বাড্ডায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্সকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন সহকারী কমিশনার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, বিএনপির ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে দায়ের করা নাশকতার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অগ্নিসংযোগ, গ্রেপ্তার, মৃত্যু

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেছেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারসেলের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে শুক্রবার মুন্সীগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য বিপ্লব হাসান বিপুলের মৃত্যু হয়েছে। যদিও বিএনপি নেতার এমন দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

তিনি দাবি করেন, শনিবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের মোট ১৭৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির শীর্ষ নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ প্রায় ৮,০০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জামায়াতের দাবি, গত সাত দিনে তাদের অন্তত ১,৬০০ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এদিকে, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধকে সামনে রেখে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট ও সায়েদাবাদ এলাকায় তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের সামনে মিরপুর লিংক পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয় বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার তালহা বিন জাসিম।

এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের বাইরে সন্ধ্যা ৭টা ৪৩ মিনিটে গ্রিন ইউনিভার্সিটির আরেকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।

এছাড়া, সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ের কাছে ফ্লাইওভারের নিচে আরও একটি বাসে আগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এদিকে, টানা ৭ দিন ধরে অবরুদ্ধ রয়েছে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ২৮ অক্টোবর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে কার্যালয়টি ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ।

মূল ফটকে ঝুলছে তালা। ফটকের সামনের রাস্তায় পুলিশের সশস্ত্র অবস্থান দেখা গেছে। তবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের কাউকে দেখা যায়নি। কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশের ক্রাইম সিন ব্যারিকেডটি তুলে নেওয়া হয়েছে। 

গত ৭ দিনে কার্যালয়ের আশেপাশে থেকে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।