আমার ফাঁসি চাই


এম.ইউ.আহমদ

জীবনে কি পেয়েছি কি পাইনি তা কখনো ক্ষতিয়ে দেখিনি। একটা সময় ছিল উন্মুক্ত খোলা আকাশের নিচে যে দিকে মন চায়তো ছুটে বেড়াতো আবেগ ছিল, অনুভূতি ছিল, কামনা, বাসনা ছিল, ছিল রঙ্গিন স্বপ্ন।
সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভ্যাস ছোটবেলা থেকে। কোন একটি বিশেষ ঘটনা সামনে রেখে আমাদের প্রায় বিভিন্ন জায়গাতে মিটিং করতে হতো। পাড়ার বিশিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি থেকে এমনি একটি  কর্মসূচি শেষে করে বাড়ি ফিরছিলাম হঠাৎ রাস্তার মাঝপথে এসে  আমার হাতে একটি ছবি পৌঁছে। ছবিটা প্রথম দেখাতে হৃদয়ের গভীরে দাগ কেটেছিল। তখন সময়টায় যোগাযোগের মাধ্যম ছিল চিঠি, লুকোচুরি করে দেখা, স্কুল কলেজে যাওয়ার পথে সামাজিক পরিস্থিতি বজায় রেখে  দেখা এবং যাদের অবস্থা ভালো তাদের বাড়িতে ল্যান্ড ফোন ছিল তাও অনেক সাবধানতায় ব্যবহার করা হতো। 
ছবির মানুষটার সাথে আমার বাস্তবে তখন ও দেখা হয় নি কিন্তু মনের ভিতরে কিছু অনুভূতি আসতে থাকে। তারপর একদিন ল্যান্ড-ফোন একটা কণ্ঠস্বর  আসে আর সেই ছিল মূলত সেই ছবির বাস্তব মানুষটির মায়াবী কন্ঠ। বেশি কথা বলা যাবে না কারণ প্রতিটা মিনিটের জন্য তখন দশ টাকা করে চার্জ আসত। এভাবে প্রতিদিন ফোন জীবনের একটি কর্মসূচির অংশ হয়ে যায়, যেদিন ফোন না আসে হৃদয়ের ভিতর কষ্ট হয় অনুভব হয় বুঝতে বাকি রইলো না এটাই প্রেম। এভাবেই  কয়টা বছর কেটে গেল। 

ভালোবাসার পরের স্বপ্নটাই ছিল সংসার সাজানো,  এই  সংসার সাজানো মানে আর্থিক স্বাবলম্বীতা, আর এর জন্য আমাকে বেছে নিতে হয়েছে প্রবাসের জীবন। গাড়ি-বাড়ি অর্থের চাহিদা মেটাবার মোহনায় দেশ ছেড়ে প্রবাস জীবনে যখন পদার্পণ করি তখন থেকে পরিচয় হয় বাস্তবতার যা আগে নাম শুনেছি মুখোমুখি দাঁড়াইনি। ছোটবেলা ভাবতাম ইউরোপ আমেরিকাতে আসলেই হাওয়ায় টাকা উড়ে। রাতা রাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবের চেহারাটা অন্যভাবে। প্রবাসে কর্মজীবনে আসার পর আমি আর ছবির সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। কারণ ছবি অস্থায়ী ঠিকানা থেকে বাড়িতে চলে গেছে গ্রামের বাড়িতে, সেখানে ফোনের মাধ্যমে চিলনা। 
যে স্বপ্নের নীড় বাস্তবায়নের জন্য প্রবাস পদার্পণ করেছিলাম। বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে আমার স্বপ্ন ভাঙ্গনের সুর শুনতে পাচ্ছিলাম কি করব কোন পথ বেছে নেব? একদিকে পারিবারিক অনেক দায় মেটাতে হবে, অন্যদিকে স্বপ্ন নীঢ় বাসা।

হঠাৎ কেন যেন একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলাম। 
আমি পিছু হটলাম। হারিয়ে গেছে আমার জীবনের একমাত্র স্বপ্ন স্বাদ আবেগ আমার হৃদয়ের বিনিময়ে কেনা ভালোবাসা।ধারণা করছিলাম স্বপ্নের মানুষটি কিছুদিন কষ্টের পর স্বাভাবিক জীবনেই চলে যাবে। এবং পরবর্তীতে হয়তো তাই হয়েছিল। 

আমি আমার জীবনটাকে অন্যভাবে ভাবতে শুরু করি নিজের জীবনের সাথে আরো অনেক কিছু সংযুক্ত হয়ে যায়। ফেলে আসা দিনগুলো বারবার  আমাকে কষ্ট দেয় কিন্তু পিছনের দিকে ফিরে যাওয়ার কোন অবকাশ আর অবশিষ্ট রইল না। 
এমন এক বিচিত্রময় জীবনে পদার্পণ করলাম, যাকে দড়ি বিহীন বন্দিশালা বলা হয়। যেখানে আমি অনুভব করলাম শব্দহীন আঘাতের অস্তিত্ব। অর্থাৎ সংসারের মার পেচে নিজের স্বাধীনতাকে বিক্রি করা। নিয়মের গতিতে চলছে জীবনযাত্রা। কিন্তু সুখ আনন্দ প্রেম ভালোবাসি ধরাছোঁয়ার বাইরে অনেক অনেক দূরে হারিয়ে গেছে। তাকে আর কখনো ছুঁয়ে কিংবা অনুভব করতে পারেনি। আজ জীবনের ২০ টি বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে কখনো নিজের আত্মীয়-স্বজন কিংবা বাহিরের কারো বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সাহস হয়নি। 


আজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিছুটা দ্বার প্রান্তে পৌঁছেছি সত্য। সমাজের কর্ম কান্ডে স্বাভাবিক ভাবেই চলছে সত্য কিন্তু সেই হারিয়ে যাওয়া পলকগুলো বারবার তাড়া করে।
খুব জানতে ইচ্ছে করে স্বপ্নের মানুষটি কেমন আছে ইচ্ছে হয় ক্ষমা চেয়ে কিছুটা হালকা হবে, কিন্তু সাহস  নেই তার মুখাপেক্ষা হতে কিংবা কারো মাধ্যমে বার্তা পাঠাতে। হঠাৎ কোন এক মাধ্যমে তার কন্টাক আমার কাছে চলে আসে। মেসেজ করলাম উত্তর আসে অনেক বছর পর কি মনে করে?
উত্তরটা না দিয়ে জানতে চাইলাম কেমন আছো?
উত্তর বলা হল  আমার যা হারাবার গেছে হারিয়ে জীবনে তারে আর পাবোনা ফিরে। গানের কলি মাধ্যমিক জবাব পেলাম।
তারপর কথা বলার চেষ্টা করি ব্যর্থ হই। অনেক চেষ্টার  করার পর কথা বলার সুযোগ পায়। তারপর বয়ে যাওয়ার ঘটনা গুলির কিছুটা বিবরণ শুনে বুঝতে বাকি রইল না যা আমি ধারণা করেছিলাম তার সম্পূর্ণ উল্টো আমার বদলে যাওয়াটা স্বাভাবিক ছিল কিন্তু তার জীবনে প্রতিটি মুহূর্ত ছিল এক অন্যরকম জনম দুঃখী মা পাশে না থাকলে হয়তো তার জীবনের নিঃশ্বাস আজ স্তব্ধ হয়ে যেত।

আমার কর্মফলের জন্য খুব বেশি অপরাধী মনে বোধ হচ্ছিল নিজেকে বলতে ইচ্ছে করছিল মতিউর রহমান মিন্টুর ভাসায় আমার ফাঁসি চাই।।  একটি নিষ্পাপ মন ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য আমার ফাঁসি চাই। তার এক একটি বিরহের রাত দিনগুলোকে দাবালনের আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য আমার ফাঁসি চাই। তার ভালবাসাকে লাইফ সাপোর্টে পাঠানোর জন্য আমার ফাঁসি চাই।।


লেখকঃ নিউইয়র্ক প্রবাসী