উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও বেকারত্ব বিনাশের একমাত্র হাতিয়ার- রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ

উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও বেকারত্ব  বিনাশের একমাত্র হাতিয়ার- রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ

উম্মে হাবিবা আফরোজা

"করোনাকালীন বিপর্যয়ে বেকারত্বের অভিশাপ যেন ভয়াল থাবায় পরিণত হয়েছে।অর্থনৈতিক অবস্থা যখন নিম্নগামী তখন তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে বেকারত্বের চাপও।চাকরিবিহীন বেকারত্বের সাথে সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে অর্থনৈতিক মন্দার চাপও।বাড়ছে খন্ডকালীন বেকারত্ব ও চাকুরিচ্যুত বেকারত্বের হার।উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এত বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা রীতিমত দুঃসাধ্য ব্যাপার। সম্ভবত সেকারনে বেকারদের প্রতি বর্তমান সরকারের আহ্বান__" যেন সরকারি চাকুরির পিছে না দৌঁড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার তাগাদা বাড়াই।"

উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়টি নিতান্তই ভালো উদ্যোগ।কথা হলো যেখানে হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবকদের নিজের এক বেলার আহার যোগাতে পায়ের জুতো ছিঁড়ে যায় টিউশনি করতে করতে, সেখানে ব্যবসা দাঁড় করানোর মত আর্থিক সামর্থ্য নিতান্তই হাস্যকর।

এই বৃহৎ বেকার জনগোষ্ঠীকে চাকরি দিতে রাষ্ট্র যদি অপারগ হয়ে থাকে তবে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাদের বিনা সুদে বা নামমাত্র সুদে ঋণ সহায়তা দেওয়া আবশ্যক।কিন্তু এখানে কারও বাণী তেমনটা শুনা যায় না।

অলস মস্তিষ্ক মানুষকে বিভ্রান্ত এবং দিকভ্রান্ত করে।
বেকারত্বের অভিশাপে মানুষের চিন্তাশক্তি দুর্বল হয়ে আসছে।বাড়ছে হতাশা, ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড। আমরা কেবল ভুলটা কেন্দ্রবিন্দু করে সমালোচনাই করতে পারি।কিন্তু খুঁজে দেখি না সেই ভুলটার পশ্চাদে কী কারন নিহিত ছিলো, যা ভুলের গতিকে আরো ত্বরান্বিত করে, তাদের ভুল পথে দিন দিন তাড়িত করছে।

সমাজে বাড়ছে দিন দিন পারিবারিক  দ্বন্ধ সংঘাতও, বাড়ছে ডির্ভোসের প্রবণতা।যৌতুকের আক্রান্তে সমাজ আজ জর্জরিত। ফলে অসহায় পিতার সংসারে বোঝা হয়ে ঠাঁই নিচ্ছে অবহেলিত নারী সমাজ।

এই অবহেলিত বোঝা প্রায় নারী সমাজ আবার যেখানে সেখানে নিরাপত্তাজনিত অভাবের দরুন কর্মসংস্থানে বাঁধার সৃষ্টিতে পড়ছে এবং ভুগছে নিরাপত্তার হুমকিতে।কিংবা নির্যাতনের বা প্রলোভনের স্বীকার হয়ে খোয়া যাচ্ছে ইজ্জত সম্মান।যা তাদের ভোগাতে হচ্ছে সামাজিক যন্ত্রনা।

সমাজের একটা বৃহৎ অংশকে বেকার রেখে কখনো জাতির দুর্দশা লাঘব সম্ভব নয়।নারীরা না পাচ্ছে নিরাপত্তামূলক কর্মসংস্থান কিংবা না পাচ্ছে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য পারিবারিক বা রাষ্টীয় সাপোর্ট।যেকারনে বেকার শ্রেণি হতাশার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে বেঁছে নিচ্ছে অনৈতিক পথ এমনকি আত্মহত্যার মত ভয়ানক পথও।

অনেক আশায় উচ্চ শিক্ষিত হয়েও যখন কোন ফ্যাক্টরিতে বা কোনো ক্ষেত্রে চাকরি নিয়ে মাস শেষে তুলনামূলক কমশিক্ষিত বা গাড়ির চালক হেলপারের বেতনও যখন মাস শেষে তাদের দ্বিগুনের উপরে যায় সেখানে হতাশাটা আরো তীব্র আকারে বাড়ে।দিন শেষে তখন পড়ালেখার মূল্যটা নেই বললেই চলে।তবুও সামাজিক ভাবমূর্তি বজায় রাখার নিমিত্তে তাদের লাখ টাকার আয়ের ভান নিয়ে জীবন ধারা বহন করে সামাজিকতা বজায় রাখতে হয়।  না হয় এই সভ্য সমাজ তাদের মেনে নিবে না।

আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিশেষ অঞ্চলে জন্মগ্রহণেরর আশীর্বাদে কিংবা বিশেষ প্রতিনিধির সান্নিধ্যে থাকার ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতা অযোগ্যতার প্রশ্ন বাদ দিয়ে কর্মের সুযোগ পেয়ে যায়।
তাহলে এই থেকে আমরা কী দেখলাম!?

পুঁজিবাদের প্রভাবে এখানেও একশ্রেণি সুযোগ লাভ করছে অথচ অন্যশ্রেণি যোগ্যতা থাকা সত্বেও কর্মবিমুখ। তাছাড়া অবহেলা হেয় প্রতিপন্নের শিকার তো আছেই।এই বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ার পেছনে নীতিনির্ধারণ মহলের ত্রুটি স্বভাবতই দৃশ্যত।এখানে একটা সমন্বয় প্রয়োজন।

সমস্যা কখনো সমস্যা না।সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করাটাই সমস্যা।  সুষম বন্টন, বৈষম্য দূরীকরণে অনেকটা সহায়ক হবে।

অঞ্চল ভিত্তিক শিক্ষিত বেকারদের তালিকা প্রণয়ন করে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে জনপ্রতিনিধি দ্বারা চাইলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে পারে।এটি একক প্রচেষ্টায় কখনো সম্ভব নয়।প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।দলীয়করণ,স্বজনপ্রীতি  বাদ দিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের ক্ষেত্র এলাকাভিত্তিক ব্যবস্থা করে একটা সুরহা করা যায়।তবে এখানে অন্যান্য স্বার্থ ব্যতীত জনস্বার্থটাই মূখ্য হওয়া আবশ্যক।

তারপর যারা উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুক কিংবা অল্পশিক্ষিত বেকার তাদের তালিকা প্রণয়নের ভিত্তিতে যদি সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋনের টাকা আদায়ের শর্তের ভিত্তিতে বিনা সুদে কিংবা নামমাত্র সুদে ঋণ সহায়তা প্রদান করে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয় তবে কোন এলাকায় কিংবা সমাজে বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত থাকবে না বলে আমরা আশাবাদী।

তার জন্য দরকার আন্তরিকতা,দেশ প্রেম,সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, রাষ্ট্রের প্রতি দায় বদ্ধতা।

"প্রতিটি ঘরে ঘরে চাকরি_"__দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বর্তমান সরকারের এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে উক্ত নীতিমালা বাস্তবায়ন করা একান্ত আবশ্যক।

সমাজ উন্নয়নে এবং হতাশাগ্রস্ত জীবনকে সুন্দর জীবনের সন্ধান দিতে রাষ্টীয় হস্তক্ষেপ আজ সময়ের দাবি।