একজন অলোকার কথা

একজন অলোকার কথা

হাসান ফরিদ

       

অলোকারা বাড়ি ছেড়ে যখন যায়

তখনো নিগ্র অন্ধকার বাঁধেনি তার চুল

তুলসিতলায় পোয়াতি কুকুরটা প্রসব ব্যথায়

করুণ সুরে কাঁদছিল;

একটা কালো আতঙ্ক ছায়া ভূতুড়ে বাতাসে

কেবল খেলছিল;

কারো মুখে কোনো কথা ছিল না

ওদের মুখ ছিল বড্ড ফ্যাকাশে

ওরা নিজ দেশ ছেড়ে যাচ্ছে পরের দেশে

সংখালঘু আর ভিন্ন জাত বলে

ওদের এ দেশে থাকার সর্বশেষ সময়

বেঁধেছে সামন্ত প্রভুরা

সূর্য ওঠার পূর্ব পর্যন্ত;

অলোকা আমার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী

প্রিয় মানুষ প্রিয় মুখ প্রিয় কথোপকথন

যার পিঠের সাথে আমার পিঠ আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা,

ঠোঁটের সাথে ঠোঁট চোখের সাথে চোখ

ফুলদানি উপুর করা।

দুজনার শৈশব কৈশোর আর যৌবনের গ্লাসগুলো

চুরি হয়েছে একই ঘাটে, মন হয়েছে কেনাবেচা

ভালোবাসার নিলাম হাটে;

সেই অলোকা ছেড়ে যাচ্ছে আমাকে

এবং এই দেশকে...

অলোকা সিঁথিতে চওড়া করে সিঁদুর পরে

উলু দেয় মুখে আর পুজো দেয় মন্দিরে,

আমাদের দুজনার ভিন্ন জাত

ভিন্ন বাসন আর ভিন্ন ঈশ্বর

গত ত্রিশটি বসন্তে আমার একবারো তা মনে হয়নি;

তবে কেন আজ এ রূঢ় বাস্তবতার কুড়ালে

কোন অশুভ কুৎসিত অজগর

সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে বাতাস করল ভারী;

মানুষের মন আর মন্দির ভেঙে

ধর্মের আফিম খেয়ে মারল ছোবল মেরুদণ্ডে

অলোকারা সংখালঘু বলে।

অলোকা আর আমি এখন মুখোমুখি

জীবননগর স্টেশনে;

যুদ্ধক্ষেত্রের ট্যাংকের মতো গড়াতে গড়াতে

এলো একটা ট্রেন,

মুহূর্তই আমি আর অলোকা স মিলে দু ভাগ হয়ে গেলাম

এক দেহ থেকে, এক দেশ থেকে...