একটি নীলাভ রাতের বাস্তবতা

একটি নীলাভ রাতের বাস্তবতা

জিল্লুর রহমান প্রামানিক 

এক নীলাভ রাতের বাস্তবতা

তোমাকে নিয়ে মৃত কল্পনা ও একটি স্বপ্ন-

হৃদয় রক্তোৎপল ; কত নিরঙ্কুশ সময় হয়েছে গত

কালের ইট পোড়ানো টানাটানা চোখে

তবুও তোমাকে নিয়ে হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণে

ভালোবাসার চিত্র আঁকি অবিরাম-অবিরত

আঁকি দুর্বোধ্য মিলনের চিত্রকল্প সীমাহীন আবেগে!

চুম্বনে চুম্বনে চাঁদমুখ ক্ষত করি-বিক্ষত করি

অনায়াস রুদ্র নিঃশ্বাসে

কচিকচি কাঁঠালের মুছির মতো

তোমার কিশোরী ঠোঁট ; লবঙ্গ দানার মতো

মৃণাল স্বেদ-শরীরের ভেতর কৃষ্ণপক্কের ঢেউ -

তোমার বুকের ভেতর উদাস পাখির বাসা

কাঞ্চনজঙ্ঘায় জমেছে যতো বিরহী পাহাড়

উরগের মতো তোমার নিঃসঙ্গ ভীতু শরীর

উন্মীলিত চোখের ভেতর

উন্নিদ্র ঝরনার ঝিরিঝিরি বিষাদী যৌবনী গহন

তোমার নিলীন নিষুপ্ত বুকের নগ্ন উরজে

আমি আর বিশ্বরূপ মেতে উঠি

আদিম-প্রাচীন খেলায় ; নগ্নতার ভেতর,

শরীরের ভেতর,

আজন্ম বায়বীয় খোদার তৃষ্ণা মেটাই

চন্দ্র রমণে!

তোমার বুকের যুগল হিমালয়ে খুঁজি

আমার বিশ্রুত বিরেশ্বর আদিপুরুষের

আবেগহীন কঠিন শিলার স্পর্শ-

খুঁজি আমার বীরাঙ্গনা মায়ের বিপন্ন অস্তিত্ব

তোমার বুকের ভেতর নিশিদিন কুঁড়েকুঁড়ে খুঁজি

আগ্নেয়গিরির অনল দহন!

তোমার লীলাবতী শরীরে খুঁজি

কিউপিড-ইরোস-আফ্রোদিতি আর ভেনাসের

দুর্জ্ঞেয় তন্বী দেহের ঘ্রাণ!

আমি কী তোমার হারিয়ে যাওয়া যৌবন শ্রুতলিপি?

কিংবা

মরণ যন্ত্রণায় কাতর তোমার জল ছলছল

চোখের স্বর্গে,দিশে হারা কোনো

জিউস-প্রোমিথিয়াসের উত্তর প্রজন্ম?

তোমার সফেদ বকুলি উরজ-

বেগুনী বোঁটায় আমার নির্ঘুম সত্তার বিহত যৌবন

আনত হয়-হারিয়ে যায় অমীমাংসিত প্রণয় প্রলয়ে

তবুও ঘুমের ঘোরে প্রেম খেলে

মাদুলি দোলেদোলে

তোমার অনাঘ্রাতা মাধুকী ঠোঁটে!

নাদুসনুদুস রাতের কাজরি চুলে তোমার গন্ধ ভাসে

অনিমিষ-অনিকেত- একেলা মেঘের অনির্বাদ

বিনিদ্র আঁচলে

তোমার সূর্যমুখী কপোলের অরক্ষিত কার্নিশে

আমার পাঁজর ভাঙ্গা রোদনের চিহ্ন এঁকে দেই

শৈবলিনীর রুপোলী চোখের আদলে!

সেই ষোলতে তোমার ঝিনুকের মতো মুক্তো পোষা -

সেই পিনন্নোত বুকের জোড়া গোলপোস্টের মধ্যখানে

একদা এক উন্মাদ অনুদিন অনুদিত

প্রেমের পাণ্ডুলিপি হাতে

একজোড়া ধবল হাঁসের পালকে মিশে যেতো ;

রেখে দিতো তাঁর বিভোল প্রণয়ের

অনুদিত অনুচ্ছেদ

আজও দাঁড়িয়েই আছে

চেয়ে দেখো তোমারই নিসাসের দুর্বোধ্য ছায়াতলে

অবিন্যস্ত প্রেমিকের অনুদ্ভিন্ন ছদ্মবেশে!

আজন্ম তোমাকে ভালোবাসার স্বেদজ কমল

তুলে রেখেছে গোপনে গোপনে

অতঃপর এই প্রেমোচ্ছল- উদ্দাম প্রেম

এক নিরুদ্বেগ শিশিরের মতো

প্রেমহীন ক্ষুধার্ত মৃত্তিকার অনল জঠরে হারিয়ে গেলো

এবং কোনো এক দুপুরে ক্লান্ত খররোদ্দুরেশহর থেকে দূরে

-তোমার দুরু-দুরু বুকের

ছায়াহীন শ্রান্ত মুখর গলির অন্তঃপুরে এমনি করে

হয়তো আবারো একটি নীল ভালোবাসার

দ্বিতীয় অপমৃত্যুর অপেক্ষায় তুমি আর আমি!

তবুও চলুক নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে নিরুপম প্রেম

চপল বালিকার রোদমাখা হাসির মতো!