কেকের শেষকৃত্য সম্পন্ন, চোখের জলে শিল্পীকে বিদায়

কেকের শেষকৃত্য সম্পন্ন, চোখের জলে শিল্পীকে বিদায়

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

ভারতের প্রখ্যাত গায়ক কেকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে মুম্বাইয়ের ভারসোভা এলাকার মুক্তিধাম শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় কেকের মরদেহ। সেখানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। কেকের পুত্র নকুল কৃষ্ণ কুন্নাথ শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। হিন্দুস্তান টাইমস এ খবর প্রকাশ করেছে।

কেকেকে শেষ বিদায় জানাতে উপচে পড়েছিল সহকর্মী, ভক্ত-অনুরাগীরা। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তার বাড়িতে হাজির হন অলকা ইয়াগমিন, শ্রেয়া ঘোষাল, অভিজিৎ ভট্টাচার্য প্রমুখ। প্রিয় তারকার শেষ যাত্রায় শামিল হয়ে শ্মশানে পৌঁছান ভক্তরা, চোখের জলে বিদায় জানান প্রিয় শিল্পীকে।

গত মঙ্গলবার রাতে কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সময় অসুস্থ বোধ করেন কেকে। অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে ফিরে যান হোটেলে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর খবরে শোবিজ অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমেছে।

কেকের মত্যৃর কারণ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। কলকাতার নিউ মার্কেট থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতা নাকি অন্য কোনো কারণে এ সংগীতশিল্পীর মৃত্যু হয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে তার ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যা ছিল কেকের।

কেকের মৃত্যুর পর মুম্বাই থেকে কলকাতায় এসেছিলেন তার স্ত্রী জ্যোতি ও পুত্র নকুল কৃষ্ণ কুন্নাথ। কলকাতার রবীন্দ্র সদনে এ সংগীতশিল্পীকে শেষ বিদায় জানান স্থানীয় সংগীতপ্রেমীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। শ্রদ্ধা শেষে গতকাল বিকালে স্বামীর মরদেহ নিয়ে মুম্বাইয়ে ফিরে যান জ্যোতি।

কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ বা কেকের জন্ম ও বেড়ে উঠা দিল্লিতে। তার সংগীত জীবন শুরু হয় মায়ের মালায়ালি গান শুনে; যা রেকর্ড করেছিলেন তার নানা। স্কুল জীবনে ‘শোলে’ সিনেমার ‘মেহবুবা’ গানটি শুনতে খুব পছন্দ করতেন তিনি। অল্প বয়স থেকেই স্টেজে পারফর্ম শুরু করেন। জানা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন প্রথমবার স্টেজে পারফর্ম করেন তিনি।

পরবর্তীতে সংগীতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন বুনেন। ‘রাজা রানি’ সিনেমায় ‘যাব আন্ধেরা হোতা হ্যায়’ গান গেয়ে দারুণ প্রশংসা কুড়ান এই শিল্পী। ১৯৯৯ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় ভারতীয় ক্রিকেট দলের জন্য ‘জোশ অব ইন্ডিয়া’ গানে কণ্ঠ দেন তিনি।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর মাস ছয়েকের জন্য মার্কেটিং এক্সিকিউটিভের কাজ করেন কেকে। এর কয়েক বছর পর ১৯৯৪ সালে তিনি মুম্বাই পাড়ি দেন বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। বলিউডে কাজের সুযোগ পাওয়ার আগে ১১টি ভাষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার জিঙ্গেল গেয়েছেন কেকে। এ. আর. রহমানের হিট গান ‘কাল্লুরি সালে’-তে কণ্ঠ দেন কেকে। এটিই ছিল প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে তার গাওয়া প্রথম গান। কেবল হিন্দি গানই নয়, কেকে কণ্ঠে তুলেছেন একাধিক ভাষার গান।

‘হাম দিল দে চুকে সনম’ সিনেমার ‘তাড়প তাড়প’ গানের মাধ্যমে বলিউডে ব্রেক পান কেকে। এই গানের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে বলাই বাহুল্য। গান এবং সিনেমার সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন কেকে। এরপর অনেক সিনেমায় হিট গান উপহার দিয়েছেন। বলিউড অভিনেতা ইমরান হাশমি তার গাওয়া বহু গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন। স্টেজ পারফরম্যান্সেও দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন কেকে। তাই তো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দর্শকদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল এই শিল্পীর পারফরম্যান্স। সেই স্টেজ পারফরম্যান্স শেষ করেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন জনপ্রিয় এই গায়ক।

১৯৯১ সালে ছোটবেলার প্রেমিকা জ্যোতি কৃষ্ণাকে বিয়ে করেন কেকে। এ সংসারে এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে এই শিল্পীর।