কিংবদন্তী অভিনেতা জেমস কান মারা গিয়েছেন

কিংবদন্তী অভিনেতা জেমস কান মারা গিয়েছেন

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

জেমস কান একজন কিংবদন্তী অভিনেতা। তিনি ‘দি গডফাদার’, ‘মিজারি’ ও এলফ’র মতো ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মারা গিয়েছেন। তার ভেরিফাআইড টুইটার অ্যাকাউন্টে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

তারা জানিয়েছেন, ‘একটি বিরাট বেদনা হলো যে, আমরা আপনাদের জানাচ্ছি, জেমি চলে গিয়েছেন। ৬ জুলাই বিকেলে তিনি মারা গিয়েছেন।’ এই বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেছেন, ‘তার পরিবার তার প্রতি ভালোবাসা ও হৃদয় থেকে শ্রদ্ধা জানানোকে প্রশংসা করছে। অনুরোধ করছে, এই কঠিন সময়ে আপনারা তাদের গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে যাবেন।’ তারা তার মৃত্যুর কারণ জানাননি।

কান প্রথম খ্যাতি লাভ করেন শিকাগো বিয়ার্স নামের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল দলের হাফ ব্যাক ব্রায়ান পোকোলোর ভূমিকায় “ব্রায়ান’স সং” নামের একটি টিভি ছবিতে অভিনয় করে। ছবিটি ব্রায়ান পিকোলোর টার্মিনাল ক্যান্সার রোগের সঙ্গে যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে বানানো। পাশাপাশি তার ও কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় গেইল সেয়ার্সের মধ্যে দলটিতে এবং ব্যক্তিগত জীবনে বন্ধুত্বের গল্প।
জেমস কানের পরের ছবি ছিল ১৯৭২ সালের ‘দি গডফাদার’। ছবিটি তাকে একজন তারকার খ্যাতি এনে দেয়। ইতালিয়ান না হলেও তিনি সনি কর্নিওনি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ইতালির মাফিয়া ও দি গডফাদার ছবির মূল চরিত্র ভিতো কর্নিওনির বড় ছেলে।

২০২১ সালে সিবিএস সানডে মনিং শোতে একটি স্বাক্ষাৎকারে কান বলেছিলেন, তিনি মারা যাওয়া কৌতুকাভিনেতা ডন রিকলসকে অনুসরণ করে সনির চরিত্রটি করেছেন। ‘তবে আমি রিকলসকে অনুকরণ করিনি। চরিত্রটির মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম, সেখানে সেই বিষয়গুলো আছে। আমি কেবল তার মধ্যে ডুবেছি’ নিজের পারফরমেন্স নিয়ে এই কথাগুলো বলেছেন তিনি। চরিত্রটি তাকে অস্কারের জন্য মনোনীত করেছিল। তবে তিনি সেরা সহ-অভিনেতার পুরস্কারটি লাভ করেননি। খ্যাতি পেয়েছেন অনেক। তিনি ‘গডফাদার ২’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন।

কোকড়াঁ চুলের এই অভিনেতা ‘দি থিফ’ ও ‘রোলার বয়’ ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য বিখ্যাত হয়েছেন। তবে তিনি নানা ধরণের চরিত্র অভিনয় করতে পারা একজন মানুষ। মানুষকে দুর্বল করেছেন ‘মিজারি’ নামের ছবিটিতেও অভিনয় করে। এটি ১৯৯০ সালে স্টিফেন কিংয়ের একই নামের উপন্যাস থেকে তৈরি। একজন উপন্যাস লেখিকার প্রতি ভক্তের বিমুগ্ধ তবে ভদ্রভাবে আসক্তির গল্প।

তিনি সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত তরুণ দর্শকদের কাছে ২০০৩ সালের এলফের জন্য। একটি ক্রিসমাসের লোককাহিনী। সেখানে তিনি উউল ফ্যারেলের একজন কৃপণ বাবার চরিত্র অভিনয় করেছেন। একজন কাজ পাগল। শিশুদের বইয়ের প্রকাশক। একই টিভিকে দেওয়া স্বাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি এই ছবিটিতে অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছিলেন। তবে ফ্যারেল তাকে অভিনয় করতে রাজি করেছেন।

বরেণ্য এই অভিনেতা জন্মেছেন ১৯৪০ সালে নিউ ইয়কের ব্রুনক্স পৌরসভাতে। একটি অভিবাসী ইহুদি পরিবারের ছেলে। তার বাবা ছিলেন একজন কসাই। মিশিগান অঙ্গরাজ্যে ফুটবলার হিসেবে তার ক্যারিয়ারের শুরু। এরপর অভিনয় শেখা শুরু করেন। লেখাপড়া করেছেন হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তার সহপাঠী ছিলেন গডফাদারের পরিচালক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপেলা। কয়েকটি মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের পর তিনি লস অ্যাঞ্জেলস চলে যান ১৯৬০’র দশকের শুরুতে। সিনেমার জীবন শুরু করবেন। তার প্রথম চরিত্রগুলোর একটি প্রদান করেন কপেলা। এটি পরিস্থিতি তাড়িত একজন মানুষের চরিত্র। ছবির নাম ‘দি রেইন পিপল’। কপেলার লেখা ও পরিচালনা ১৯৬৯ সালের ছবি। তার অন্য স্মরণীয় ছবিগুলোর মধ্যে আছে হাওয়ার্ড হকসের ওয়েস্টার্ন ছবি ‘এল ডারেডো’, জেইমস টোব্যাকের ‘দি গ্যাম্বলার’ ও রিচার্ড অটেনবার্গের বিশ্বযুদ্ধের কাহিনী নিয়ে বানানো ‘অ্যা ব্রিজ টু ফার’। একটি মহাকাব্যিক সিনেমা।

ক্যরিয়ারের শেষের দিকে তিনি টিভিতে অভিনয় করেছেন। ‘লাস ভোগাস’ নাম করেছে। আবার বানানো ‘হাওয়াই ফাইভ-০’ও উল্লেখযোগ্য। একটি সিরিজ। সেখানে তার সঙ্গে অভিনয় করেছেন ছেলে স্কট কান। তিনিও ভালো অভিনেতা।
সম্প্রতি অভিনেতা ডেইমিয়েন কনরাড ডেইভিস কানের চরিত্র করেছেন ‘দি অফার’-এ। একটি টিভিতে প্রচারিত মিনি সিরিজ। কীভাবে গডফাদার বানানো হলো সেই কাহিনীকে ঘিরে।

আল পাচিনো গডফাদার ছবিতে তার ছোট ভাই মাইকেল কর্নিওনির চরিত্র করেছেন। তিনি তাকে ‘একজন মহান অভিনেতা’ ও ‘একজন প্রিয় বন্ধু’ হিসেবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ও ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্টের নায়ক ফোর্ড কাপোলো বলেছেন, ‘কানের কাজ কোনোদিনও ভোলা যাবে না।

রবার্ট ডি নিরো বলেছেন, ‘আমি খুবই দুঃখিত হয়েছি কানের চলে যাওয়ায়।’ তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে অ্যাডাম স্যান্ডলার বলেছেন, ‘জেমস কানকে খুব ভালোবাসতাম। ছোটবলায় সবসময় আমি তার মতো অভিনেতা হতে চেয়েছি। আমার খুব ভালো লাগে যে, তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি কোনোদিনও কোনো কারণে হাসিমুখ ছাড়া অন্যকিছু ছিলেন না। যখনই তাকে দেখেছি, এভাবেই। তার ছবিগুলো সেরাদের সেরা ছিল। তাকে আমরা সবাই ভীষণভাবে অনুভব করবো। তার পরিবার নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় আছি ও তাদের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি।’ তিনি ২০১২ সালে তার সঙ্গে “দ্যাট’স মাই বয়” ছবিতে অভিনয় করেছেন।