কাশফুলের লাজ— নূরজাহান শিল্পী'র কাব্য বিশ্লেষন
মোহাম্মদ আলী
শরৎ একটি ঋতুর নাম। মূলত তাকে অনুধাবণের মাধ্যম ভাদ্রের সকালে। যখন তরু বনে নতুন কুঁড়ি জন্ম লাভ করে। আশেপাশের জলাভূমিতে অবশিষ্ট থাকে জল। ফুরুত করে উড়ে যায় চুড়ুই, দোয়েল, সারস, হামিংবার্ড নামক ঐ পাখি গুলো।
তখনো কাশবনের চারিপাশে কাদামাটি বিদ্যমান।
শিশির ভেজা ভেজা ঘাসে শরত ও হেমন্ত ঋতুকে সাধারণত শরৎকালিন ঋতু বলে ডাকা হয়। যদিও হেমন্তের আলাদা একটা ভাব আছে তবুও হেমন্ত শরতের পরপরই হয়ে থাকে।
আর চিরাচরিত মিষ্টি বন্ধন সেই বসন্তকে আলিঙ্গন করতে এই শরৎ থেকেই মনে দোল খায়, প্রাণ থাকে উচ্ছ্বসিত।
ইদানিং কাশবন নিয়ে অনেকগুলো লেখা পড়লাম। আমি পড়েছি এমন দুটো লেখায় নীল জলের সাথে আকাশের ভাবনাটা ফুটে উঠেছে বলে বিবেচিত হলো। এমন দুটি লেখার নিয়ে আমার আজকের কাব্য বিশ্লেষণ—
নিম্নের লেখাটি লিখেছেন বিখ্যাত কবি নুরজাহান শিল্পী —
"নীল আকাশে জানান দিয়ে ,
সোনালু ঝলমলে আলোকচ্ছটায়।
এলো শরৎ মেঘ বালিকার শ্বেত শুভ্রতায়
ঠোঁটের কার্নিশে প্রজাপতি মনে
শিশিরের চাঁদরে করোজ্জ্বল দিনে
মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায় ,
মন আনন্দে নেচে উঠে মধুর হাওয়ায়"
তিনি সেই গতানুগতিকতায় লিখেছেন যে, নীলাকাশে জানান দিলো, কি জানান দিলো! সোনালু ঝলমলে আলোকচ্ছটায়। কাব্য শ্রুতি এখানেই, "সোনালু" শব্দটি যেনো খুব করে মমতায় জড়ানো হয়েছে ।
কবিদের গুণকীর্তন সহসাই হয় না। আবার এই সকল শব্দ পেলে তখন আর ঘরে বসে থাকা যায় না। ঝলমলে আলোকচ্ছটায় —আগের শব্দতে এতোটাই মিশে একাকার হয়েছে যে, নিজ থেকেই ঝলমলিয়ে উঠছে দিবাকরের আলো। সোনালু শব্দ যেনো মনের মাধুরি মিশিয়ে ফুরসতে সাজাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
"বিস্মিত কাশফুল জানিয়ে দেয় ,
আমিই চঞ্চল নির্মল শরৎ "
এ দুটি লাইনের বিশ্লেষণ সহজলভ্য হলেও সহজভাবে ধরার কোন কারণ নেই। বরাবরই কাশফুল বিষ্মিত করে মানুষকে। কাশফুল মানেই, মনের চঞ্চলতা, নির্মল হাসি। শরত'কে জানান দেয়া আমরা শরতকেই ভালবাসি।
"ধুপ কুয়াশায় মুড়িয়ে দিয়ে ,
শরৎ আসে শিউলি ফুলের মন বাগিচায় ,
শেফালিকা লুটায় সৌরভ স্নিগ্ধতার অনুভবে"
আবারো দেখা হলো কুয়াশার আদলে, কবি বরাবরই নিজেকে সমর্পণ করেন ভাবনার আড়ালে। শাব্দিক অর্থে মুড়িয়ে নিতে কখনোই দ্বিধা করেন না। বিলীন করা শিউলিফুলের মন বাগিচায় শেফালির সৌরভকে লালন করে স্নিগ্ধ কোমল অনুভবে।
হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের কথা, শিউলি ফুল কে স্নিগ্ধতার অনুভব, বিস্ময়ে লালন করে ধুপ, কুয়াশার আকাশে মনের সাথে মিতালি ঘটানো অসম্ভব প্রয়াস। সবই সম্ভব হয় কবিতার আলোকে কবিদের ভাবনায়।
"কাশফুলে মন বধূ লুকায় লাজে ,
মনে ফোঁটে প্রেম ফুল ভাবিত আবেগে"
বরাবরই কাশফুলে মন বধুর কাছে লুকায়িত থাকে, নারীর লাজ তো আসল গহনা। সেই লাজ দেখে, যার আবেগ অনুভূতি সৃষ্টি হয়, সেই রাঙাতে পারে, তার মনে স্ফুরণ সৃষ্টি হয়। তরুছায়া রাঙিয়ে ভাবিত করে তোলে প্রেমময় আবেগ।
শরৎ এসেছি বুঝি, হৃদয়টাকে নতুনভাবে সাজাতে।