ক্ষুধার্ত নজরুল (সম্পূর্ণ কাল্পনিক )ছোট গল্প

ক্ষুধার্ত নজরুল  (সম্পূর্ণ কাল্পনিক )ছোট গল্প

-------------আব্দুছ ছালাম চৌধুরী 

-----------সেবার আমি (কাজী নজরুল) ময়মনসিংহ থেকে কুমিল্লা হয়ে নিমতলি পাড়ি দিলাম। ওখানে গাড়ি আসিবার আগেই ক্ষুধায় কাতর হয়ে বসে রইলাম। কাল রাতের পর আর যে কিছু খাওয়া হয়নি। সূর্য উদয়ের পর থেকেই জল পান করেই আসছি। হাতের মুঠোয় চার পেয়ালা জলে তো আর ক্ষুধা নিবারণ সম্ভব নহে।

তদুপরি চৈত্রের ঐ অশান্ত রবির আলো থেকে বাঁচতে রাজবাড়ীর কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হলুম। 

কিছুক্ষণ পর চোখ ঝিমিয়ে কিছুটা শান্ত হতেই পরিমল,পরিমল শব্দের ডাক শুনলাম। 

আধোঘুমে অমন সুরেলা কণ্ঠ খুব পরিচিত মনে হলো, আমতা আমতা করে চোখ মেলে দেখি, পরমা সুন্দরী এক দেবী,ললাট ভরা সিঁথির সিঁদুর। পায়ে লাল আলতা,পরনে লাল ডোরাকাটা নীল শাড়ি।

পরিমল তার কে হয় জানি না, তবে ডাক শুনে মনে হলো, হাতের কাছে পেলে জ্যান্ত কবর দেবে। 

এক সময় কুসুমের রাঙা চোখ দেখেছি, কিন্তু এই ভেবেই শান্ত হতাম, রূপসীরা যতো বেশি রাগ করে, তাকে ততো বেশি সুন্দর লাগে। 

কিছু প্রকাশ করবার আগেই, হে গো হ্যে ওখানে কে গো?

তুমি কি পরিমল'কে যেতে দেখেছ?

আজ্ঞে না, বলেই থমকে গেলুম। যদি বলি দেখছি তবেই যেনো-- মরণ"। 

ডাকতে ডাকতে ঐ উত্তরের খণ্ডের দুই বিঘা ধানী জমি পাড়ি দিয়েও ডাকতে লাগলো।

অবশেষে নিরূপায় হইয়া নিজের বাড়ি ফিরে আসলো।

---------------যাবার বেলা এই পথ দিয়েই গেলো, কিন্তু আমার সাথে কোনো কথা বললো না। একা একা সেই পরিমল বলতে বলতে,দীঘির ঘাটে হাত পা ধুয়ে নারায়ণ নারায়ণ উচ্চারণে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করবে, এই সময় পরিমল জবাব দিলো,

পিসি ডেকেছেন?

ঠিক তখনই হাতে থাকা কঞ্চি দিয়ে ঘরের খুঁটিতে দুই দুইটা আঘাত করে বললো, আয় তুই আমার হাতের কাছে আয়-

আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। 

নিঃশব্দে কিছু ক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর আবার বাহিরে এসে,সেই পরিমল ডাকতে শুরু করলো।

তখন সেই পরিমল আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে ফেলাফেলিয়ে তাকালো এবং কিছু একটা বলতে চাইলো -

পিসির ডাক শুনে এক দৌড়ে বাড়ি গেলো।

কি রে ওখানে কে বসা? 

পরিমল বললো চিনি না।

যা-না, হোক যেই, পথিককে ঘরে আসতে বল।

----------------খেট খেট করে পরিমল বাড়ির সম্মুখের দিঘির পারে আসিয়া কহিলো,হে গো মহাশয়, কে তুমি। ভরদুপুরে এখানে কেনো?

গৃহ কর্তী পাঠিয়েছে, চলেন বাবু, বাড়ি চলেন। আপনাকে ডাকছ, উঠোনে বসে একটু চিড়ামুড়ি খাবেন।

যদিও ইতস্তত করছি,তবুও ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির, না গিয়ে উপায় নেই। 

গেলাম-

কুশলাদির একপর্যায়ে ছোট একটা খাট বসতে দিলো, সঙ্গে একটু চিড়ামুড়ি দিলো।

সেই সাথে বললো কে গো তুমি? 

কোথায় থেকে এসেছ?

কোথায় যাবে? 

প্রশ্নের জবাব দেবার সুযোগ না দিয়েই আরেকটা প্রশ্ন করে বসলো ।

-------------কিছুটা জল পান শেষে কেমন যেনো ঘুমাতে অস্থির হয়ে উঠলাম, আমার শরীরের এমন অবস্থা দেখে পরিমল ধমক দিয়ে বললো,যা ঐ ঘরে নিয়ে যা---

তারপর একা একা কিছু একটা বলবো তা সময় দিলো না। আমি কিছু বলতে চাইছি সে দিকে একটু ও কর্ণপাত না করে। যান যান বলে দিলো, ভাবলাম থাক্, তখন নিজেই ঐ ঘরে শোবার জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম। 

ঐ ঘরে যাবার পরপরই শুয়ে পড়বো এমন সময় একটি কথা শুনলাম, সে পরিমলকে উদ্দেশ্য করে বলছে, বেচারা মানুষ-তো। 

এই শব্দ শুনতেই একটা গানের কলি সেই দিন,সেই ক্ষণে সেখানেই সৃষ্টি হলো--

ওগো ও চকোরী, 

 আমি যে মরিমরি 

প্রিয়া প্রিয়া ওগো প্রিয়া,প্রিয় হে গগনবিহারী,

ভগবান দিয়াছে রূপ তোমারে,আমারে করেছে পূজার কাণ্ডারী, 

সুন্দর,,,,,ওগো সুন্দর,,,,,,ওগো সুন্দরী।। 

----

কখন যে কি ভাবে সেই পড়ন্ত বিকেল থেকে পরের দিন পাখি ডাকা ভোর অবধি চলে গেলো,তা টেরই পেলাম না।

শুধু এইটুকু টের পেয়েছি আমার সারা শরীর ঘামাতুর,আমি তৃষ্ণায় কাতর।

--------- জল,জল বলে বিরবির করছি, কিছুক্ষণ পরে কে যেনো শিয়রের পাশে জল রেখে পরিমল ডেকে ডেকে চলে গেলো । কিছুটা অনুধাবন করতে পারলাম, হয়তো সেই হবে (কুসুম) তখন অবধি নাম জানা হয়নি। 

----------কিছুক্ষণ পরেই পরিমল এসেই বললো,বাবু আপনি ডেকেছেন?

বললাম, হে রে গাড়ি কখন আসবে? 

পরিমল বললো বাবু, এইতো গেলো, সবে মাত্র দেখে এলাম। গাড়ির চাকা গর্তে পড়ায় সবাই হরি হরি বলে,ধাক্কা দিয়ে তুলে রওনা করেই বাড়ি এলাম।

বাড়ি আসতেই কুসুম'দির চেচামেচি শুরু। 

কিছুটা অস্বস্তি সত্ত্বেও তাকে,হাত মুখ ধুইতে ইশারা করতেই বললো, না না বাহিরে যাবেন না, কুসুম'দি'র মানা করছে,তার কড়া নির্দেশ।

কেনো রে-

কাল রাতে আপনার জ্বর উঠেছিলো কুসুম'দি সারারাত আপনার সেবা যত্ন করে করতে করতে একটুও ঘুমাতে পারে'নি। 

কি বলিস? 

হ্যাঁ বাবু, আপনি প্রাণে বেঁচেছেন। 

আচ্ছা ওর নাম বুঝি কুসুম? 

মাথা নাড়িয়ে বললো হ্যাঁ -

----------কিছুক্ষণ পরে কুসুমই গরম জল নিয়ে হাজির। নেন হাত মুখ ধুয়ে আসুন। আমি খেতে দিচ্ছি। খেতে বসে বসে শুধু তাকেই দেখে গেলাম। না চাহিতেই হঠাৎ মুখে এসে গেলো,একটু লবণ দেবে কুসুম। 

মাগ্গো মা ফেলফেলিয়ে চেয়ে বললো, তুমি আমার নাম জানলে কি করে?

বল,বল- 

আমি কি সত্য বলবো?

হ্যাঁ সত্য বলবেন। 

কাল যে ঐ কৃষ্ণ চূড়ার ছায়ায় বসে বসে ঝিমিয়ে ছিলাম,ঐ সময় অজান্তেই এই কুসুম শব্দ বারবার ঠোঁটে এসেছিল।ধ্যাত-

এতো ঢং করতে হবে না। নিশ্চয়ই পরিমল বলেছে। বিশ্বাস করো,আমি মিথ্যে বলি না। ঠিক সেই সময় কুসুমের মনে পড়লো, হে রে কাল রাত ও তো, সে ঘ্যাণ ঘ্যানিয়ে কুসুম কুসুম বলেছিল। 

আচ্ছা থাক্ বলতে হবে না।

জিজ্ঞেস করলাম পরের গাড়ি কবে? 

ও গেছে বাবু, আর কাল কাক ডাকা ভোর অবধি কোনো গাড়ি নেই। 

তাহলে আমি যাবো কি করে, অমন প্রশ্নে বললো-

তা কোথায় যাবেন শুনি? 

জ্বি কলকাতা।

হ্যাঁ গো কলকাতা কি খুব বড় শহর?

বললাম হ্যাঁ-

ওখানে নাকি সাদা লোক বাস করে?

বললাম হ্যাঁ।

আচ্ছা আমি যদি ওখানে যাই,তুমি আমাকে নেবে?

আচ্ছা আমি কি সাদা হতে পারবো?

সুন্দরী হতে আমার খুব শখ, অকপটে বলেই ফেললো,তুমি আমায় ওখানে নেবে?

কথা দাও, কথা দাও।

একটু হাসির ছলে বললাম, সেই জন্যেই কি তুমি আমাকে খেতে দিচ্ছ। তোমার খাটে ঘুমাতে দিচ্ছ?

ঠিক তখনই কেনো যেনো কিছু না বলে চলে গেলো। জল জল বলে ডাকছি, তবুও জবাব দিচ্ছে না।

তারপর নিজেই রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম,চেয়ে দেখি,দুয়ারে হেলান দিয়ে কাঁদছে -

আমি একটু নরম স্বভাবের কারণে, তারদিকে হাত বাড়িয়ে দৃঢ়কণ্ঠে বললাম,কুসুম আমি কথা দিচ্ছি, নিশ্চয়ই তোমাকে নিয়ে যাবো। 

--

শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বললো অহ্ খাওয়া শেষ?

জ্বি -

ছিঃ ছিঃ আমি অনেক ছোট না ঐ জ্বি জ্বি বলতে হবে না।

তারপর পরিমলকে ডেকে বললো, যা তো বাবুকে একটু দিঘির পথ দিয়ে নিয়ে যা। আমাদের গ্রামটা দেখিয়ে নে। কথা না বাড়িয়ে আমিও পরিমলের সাথে একটু ঘুরতে গেলাম। ঘুরে ফিরে সেই কৃষ্ণ চূড়া গাছের ছায়ায় এসে বসলাম। পরিমল বললো কি বাবু এখানে বসলেন যে-

বললাম বসি না একটু--

ঠিক আছে বসুন ।আমি বাড়ি হতে ঘুরে আসি। 

এখানে বসে বসেই অনেক কিছু ভাবতে লাগলাম। 

ভাবনায় এলো-

এই কুসুম যদি কলকাতায় থাকতো, তাহলে তাকে নিয়ে জীবন সংসারে মেতে উঠতাম। এখানে তো গায়ের লোক, কে কি বলে কে জানে-

তদুপরি আমি মুসলিম -

তাও কেউ জানে না,আবার মনে মনে প্রশ্ন এলো, কুসুমের সিঁথিতে সিঁদূর কেনো।

একদিকে তার অনুগ্রহ, তার সেবা যত্ন মনে মনে আমাকে প্রেমিক করে তুলেছে--

ভাবলাম পরিমল--

হ্যাঁ, পরিমলকে বললেই হয়তো উত্তর পেয়ে যাবো।

ভাবনা শেষ হতে না হতেই,পরিমল হাজির। এবার একটু সহজ হয়ে গেলাম। 

বললাম কি রে? 

বললো কুসুম-দি ডাকে-

ও আচ্ছা, যাবো। আচ্ছা তোর কুসুম'দির কপালে সিঁদুর? বাড়িতে লোকজন নেই কি হয়েছে বলবে?

এবার পরিমল ও পাশে বসে পড়লো।

বললো, 

ও আর কহে কি লাভ--

কলকাতা থেকে জমিদার বাবু এসে কুসুম'দি কে বিয়ে করে ফেলে চলে গেছে।

কিন্তু কেনো-

সে কি আমি জানি-

দি-কে জিজ্ঞেস করো।

যেতে যেতে পরিমলের বকবকানিতে অনেক কথা ফুটে উঠলো-

বাড়ির আঙিনায় যেতেই দেখি হাতে সেই কালকের কঞ্চি। 

পরিমল কে বলছে-

তোরে কি এত্তো ঘুরতে বলছি? তুই জানিস না বাবু কাল রাতে কি করেছিলো-

আর হ্যাঁ গো আপনার ও তো বুঝা উচিৎ ছিল। 

সকাল বললাম তো। হুট করে মুখে এসে গেলো, না কুসুম তুমি আমাকে কিছু বলো নি-

পরিমল বলেছে ঠিকই-

ঐ একই কথা।

যান একটু বিশ্রাম নেন। 

আবার যদি শরীর খারাপ করে আমি কিন্তু নেই বাবু।

কথা মতো ঐ ঘরে গেলাম। ঐ ঘরের বাতায়ন খুলে ওখান থেকেই ঐ কৃষ্ণ চূড়া গাছ দেখা যায়।

ওদিকে যেমন চোখ গেলো,ঠিক তেমনি কুসুমের দিকে ও মন গেলো--

ঠিক সেই সময়, সেই ক্ষণে মনে হলো----

"আমি তো চেয়েছি তারে,ঐ গোকুলের হাঁটে, 

বাঁশের বাঁশিতে,যখন মোর সুর যাবে ফুটে

 পরমানন্দে যে তৃষা জাগিলো

 কলির কাঁটা বুকে যে বিঁধলো

তন্দ্রা হারায়ে ঈশানের বুকে,দেখিলাম রাঙা প্রহরী,, 

সুন্দর,,,,,ওগো সুন্দর,,,,,,ওগো সুন্দরী।। 

একটু সুরে সুরে এই গান গাইতে চেষ্টা করেছিলুম। হঠাৎ চুড়ির কন কন শব্দে থেমে গেলাম-

কুসুম ওপাশে থেকে বললো,থামলে কেনো, গাও না,,,,ভালো লাগছে।

এই কথা শুনে শিহরিত হলো সারা গা--

--

কিছুক্ষণ যেনো অপ্রস্তুত রইলাম। আবারও ওদিকে চেয়ে চেয়ে এই সুর গুনগুন করতেই কুসুম হাজির-

বাহ বাবু বাহ, 

এ গান কে লিখেছে?

বললাম আমি-

ও আপনি লেখক বুঝি ? 

তেমন না,কিছুটা চেষ্টা করি। 

এদিকে কুসুমের হাতে থাকা কিছু কাপড় রোদে মেলে দেবার বাহানায়,বললো আমার না খুব শখ গান গাইতে --

কেমন যেনো হুট করেই এই কথাটা বললো--

একা একা বিরবির করলে যেমন হয়, বলছে তো বলছেই-

সেই গানের দলে ভর্তি করবে বলে শালা আমার ললাটে শুধু সিঁদুর মেখেছে। একটি রাত ও থাকলো না। যথারীতি আর ফিরলো না।

বাবু, তুমি আমাকে কলকাতা নিয়ে যাও। বাকি আমি খুঁজে নেবো। শুনেছি তিন দুয়ারি বললেই নাকি লোকে চেনে।

তিন দুয়ারি মানে?

শুনেছি,শালার তিন তিনটে বউ আছে গো-

ও আচ্ছা। 

একবার যদি পাই,তাকে মুণ্ডহীন করবো। 

বললাম, সে কি খুব সুন্দর ছিলো?

না না --

বদ ইতর ইত্যাদি বলতে বলতে ওপাশ চলে গেলো। 

আমি বললাম, থাক্ থাক্ ও সব বলতে নেই। তোমার জন্য সেই তো ভগবান,তাই না--

এ কথা শুনে চেচিয়ে উঠলো -

বলে দিলো-

ভগবান! 

ঐ পাথরে যদি প্রাণ থাকতো, তাহলে কি আমার অমন অমঙ্গল হতো। আমি না হয় কিছুই বুঝতে পারিনি, আমার পাথরের ভগবান তো বুঝতো।

তখনও হাতে কঞ্চি ছিলো, ছিলো ক্ষোভ। 

কি জানি হঠাৎ মুখ খসকে বেরিয়ে এলো, নিশ্চয়ই নেবো।

আমি তো যাচ্ছি, তুমি ও যাবে।

পরিমল সব কিছু শুনে কুসুমের পাশে এসে কেঁদে কেঁদে বললো, তাহলে আমার কি হবে দি"। 

মৃদুস্বরে ডেকে বললাম, আয় কাছে আয়, তুমিও আমাদের সঙ্গে যাবে।

কথা শুনতেই 

ভাই বোনের সে কি আনন্দ। 

কথামতো পরদিন ঠিকই রওয়ানা হলাম। যথারীতি কলকাতায় পৌঁছাতেই কুসুমের চোখে মুখে আনন্দ ফুটে উঠলো। 

তিনদিন আগে দেখা কুসুম আর আজকের কুসুমের মাঝে অনেক তফাৎ লক্ষ্য করলাম।

অমন খুশি দেখে,আমিও মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলাম। কোথায় যেনো শূন্যতা অনুভব করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরেই তো কুসুম চলে যাবে।

তাহলে ---

আমি কি আমার অজান্তেই কুসুমের প্রেমে পড়েছি।

ভাবতে ভাবতে গতকাল এবং গত পরশুর কথা বারবার মনে উঠতে লাগলো।

---------যথারীতি কুসুমের ঠিকানা মতো নিয়ে গেলাম। ওখানে যেতেই কুসুম এক দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। আমি আর পরিমল বাড়ির উঠোনেই দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুটা হতাশ হলাম। ঠিক সেই মুহুর্তে সেই ক্ষণে মনের বীণায় গানের এই কথা গুলি ভেসে উঠলো----

হয়তো কুসুম ফিরে এসে পরিমল'কে নিয়ে বলবে, বলবে ধন্যবাদ বাবু।

আর আমি একা একা ঐ পথে পথে হেঁটে হেঁটে আমি আমার গানের সমাপ্তি খুজবো--

----------------খানিকক্ষণ পরেই দেখিকুসুম এই দিকেই দৌড়ে আসছে, কিছু প্রশ্ন করার আগেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো। 

মিথ্যে বাবু সবই মিথ্যে-

আমি বললাম কুসুম কি হয়েছে বলবে?

বাবু, বাবু---বাবু গো আর বল না,

এই বাড়ি তার না,ওখানে সে ভাড়া থাকতো। 

সে নাকি ঘাটে ঘাটে বিয়ে করতো। আর সে তো বছর আগে মারা গেছে।

তাৎক্ষণিক চোখ বুঁজে ঐ আকাশটাকে দেখলাম। 

আমার মনে হতাশা যেমন ছিলো,তেমনি অদৃশ্যের টানে কিছুটা পুলক অনুভূত হলো।

তারে বললাম,,, চলো----

প্রশ্ন করলো কোথায়? বাবু, আমি তো কাউকে চিনি না।

বললাম আমাকে তো চিনো, তাহলে হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে, আমতা আমতা কণ্ঠে বললো --

বাবু আমার ক্ষিধে পেয়েছে -

না চহিতেই আমার ঠোঁটে মৃদু হাসির কম্পন অনুভব করতে লাগলাম।

বললাম চলো--

এরই মাঝে প্রশ্ন করলো,বাবু আপনার গানের শেষ কথাটি শোনালে না।

বললাম শেষ কথা তো আগেই লিখেছি তবে শুরুটা লিখিনি এবং বলিনি।

এ কেমন কথা? 

সবাই শুরু থেকে শেষ করে- আমি রহস্য রাখতে পছন্দ করি।

আচ্ছা --

তাহলে আগে শোনাও, পরে যাবো। আমি বললাম এই শহরে বিখ্যাত একটি পার্ক আছে, সেখানে অনেক গুলি কৃষ্ণচূড়ার গাছ আছে। ঐ গাছের ছায়ায় বসে হালকা কিছু খেতে খেতে সেইটুকু শোনাবো।

ঠিক তখনই কুসুম বাঁকা নয়নে মৃদুস্বরে হেসে সম্মতি দিলো। 

যথারীতি কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়ায় গেলাম।

ধীরে ধীরে আমি কুসুমের চোখে মুখে হতাশা ঘনীভূত হতে দেখলাম-

তার হাত ধরে বললাম, স্রষ্টা তোমারে দিয়াছে যে রূপ,তাহা আমার জন্য।

প্রতিত্তোরে বললো, আমি না হয় তোমারই হবো কিন্তু সমাজের কর্ণধারদের'কে কি জবাব দেবে?

শোন কুসুম-

আমি হিন্দু মুসলমানদের গালাগালিকে গলাগলিতে রূপ দিতে এসেছি, মানুষে মানুষে ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধতে এসেছি। আজ তোমাকে সেই বাঁধনে বেঁধে প্রমাণ করতে চাই,,,

সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই-

অশ্রু শিক্ত নয়নে বুকে জড়িয়ে বললো--

গানটি শোনাবে না

আমি আমার গানের প্রথম কথাকলি সুরে সুরে বলতে লাগলাম,আর সে তা গাইতে লাগলো--

"আমায় ডাক দিও না,ওগো সুন্দর,ওগো পরম ঈশ্বর,

রয়েছে দাঁড়িয়ে,বঙ্গ বিহারে,অমৃত সুধাকর।

আজই যেতে চাই না-

 ঐ নিখিল আকাশে,

 কিংবা ফুলের সুবাসে-

প্রিয়া প্রিয়া বলে, আমি যে তারে ফুকারী,

সুন্দর,,,,,, ওগো সুন্দর,,,,,,ওগো সুন্দরী।। 

--------------সমাপ্তি -----