গ্র্যান্ডোলি টু কাতার: মেসির সুখ-দুঃখের ৩০ বছর

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

রোজারিও শহরের ছোট্ট মেসি বেছে নেয় ফুটবল। তার খেলার সঙ্গী ছিল বড় ভাই এবং কাজিনরা। ফুটবলই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। খেলার প্রতি তার গভীর ভালোবাসা তাকে নিয়ে যায় বাড়ির পাশের ক্লাব গ্র্যান্ডোলিতে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর। সেসময় তার শারীরিক গঠন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন কোচ। কিন্তু মেসি যতটা অদম্য ছিল, ততটা নাছোড়বান্দা ছিলেন দাদি সেলিয়া ওলিভেরা। দাদি-নাতির সেই জিদ আজকের শুভ পরিণতি।

১৯৯২ সালে শুরু করা অধ্যায়ের ইতি ১৯৯৫ সালে টানে ‘বালক’ মেসি। আরেক ধাপ এগিয়ে নাম লেখায় নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে। রোজারিও’র অন্যতম সেরা আর্জেন্টাইন প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্লাব হয় তার নতুন ঠিকানা। সেখানেই গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি (জিএইচডি) ট্রিটমেন্ট নেয় মেসি, যা শারীরিক উচ্চতা বাড়ানোর চিকিৎসা এবং ১০ হাজারে একজনের মধ্যেই কাজ করে। সৌভাগ্যক্রমে, সেই একজনের নাম মেসি।

একসময়ে ডিয়েগো ম্যারাডোনার খেলা ক্লাবটিকে কেবল শারীরিকভাবে বেড়ে উঠেনি মেসি, ক্লাবটির যুব সেটআপে আসল চরিত্রও হয়ে উঠে সে। সব মিলে সেখানে কাটিয়ে দেয় আরও ৫টি বছর। বিংশ শতাব্দীতে, মাত্র ১৩ বছর বয়সে বার্সেলোনার ইয়ুথ একাডেমির অংশ হয় মেসি। এফসি বার্সেলোনার তৎকালীন ডিরেক্টর চার্লি রেক্সাচ স্পেনে উড়িয়ে আনেন কিশোর মেসিকে, যিনি আজকের কিংবদন্তি, বিশ্বকাপজয়ী মহানেতা, ফুটবলের সমার্থক শব্দ।

বার্সেলোনার সাবেক মহানায়ক মেসি। তার ঝুলি প্রাপ্তিতে ঠাসা। এমন কোনো শিরোপা নেই যা কাতালান ক্লাবটিকে জেতাননি তিনি। যুগেরও বেশি সময় ধরে হাসিয়েছেন স্প্যানিশদের। সেই মেসিকেই কাঁদিয়ে ছেড়েছে বার্সা। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রাণপ্রিয় ক্লাব ছাড়তে হয় খুদেরাজকে। সেটা গত বছর। কাতালান ক্লাবটিতে নিজের শেষ সংবাদ সম্মেলনে সে কী কান্না মেসির, যা কাঁদিয়েছিল ফুটবলপ্রেমীদেরও।

এক বছরান্তে আরও একবার কাঁদলেন মেসি, আরও একবার কাঁদল ভক্তরা। এবার ছিল সুখের কান্না। বিশ্বজয়ের কান্না। মেসির হাতে শিরোপার দৃশ্য যেন গোটা বিশ্বকে দিয়েছে পরম এক সুখ। আজন্ম লালিত স্বপ্নপূরণে মেসি তার গোটা ক্যারিয়ারের সারাংশ লিখলেন এভাবে, ‘গ্র্যান্ডোলি থেকে কাতার বিশ্বকাপ পর্যন্ত প্রায় ৩০ বছর কেটে গেছে। এই তিন দশক ফুটবল আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে এবং কিছু দুঃখও দিয়েছে। আমার সব সময় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ছিল এবং আমি কখনোই হাল ছাড়িনি।’

স্বপ্নপূরণে যারা রেখেছে সহায়ক ভূমিকা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনেও কৃপণতা করেননি মেসি, ‘আমরা বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছি যা সবার প্রাপ্য, যারা আগের বিশ্বকাপে খেলেছে তাদেরও। যেমন ২০১৪ সালে ব্রাজিলে। সেখানে সবাই শেষ অবধি লড়াই করেছিল, যতটা সম্ভব কঠোর পরিশ্রম করেছিল এবং আমিসহ সবাই যথাসম্ভব চেষ্টা করেছিলাম, তাই সেসময় শিরোপা সবার প্রাপ্য ছিল।’

ইনস্টাগ্রামে লেখা দীর্ঘ চিঠির আরেক অংশে মেসি লিখেন, ‘এই সুন্দর দলটির তৈরি করার কৃতিত্ব কোচিং স্টাফ এবং সমস্ত মানুষের যারা জাতীয় দলের কাজ সহজ করার জন্য দিনরাত কাজ করেছেন। ব্যর্থতা প্রায়শই যাত্রা এবং শেখার একটি অংশ। তা ছাড়া হতাশা ছাড়া সাফল্য আসা অসম্ভব। আমার হৃদয়ের গভীর থেকে আপনাদের ধন্যবাদ। এগিয়ে চলো আর্জেন্টিনা।’