গ্রহণ (১ম পর্ব)

গ্রহণ  (১ম পর্ব)

শামীমা আহমেদ 

দীপিকার মনটা আজ ভীষণ অস্থিরতায়। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পর আর একটুও স্বস্তি পাচ্ছে না। কোথায় যেন একটা ছন্দ পতন ঘটে গেছে! কোথায় যেন একটা ভুলের ভ্রান্তি রেখা। ভুলটা অনিচ্ছাকৃত হলেও আবার একেবারে অনিচ্ছাকৃতও নয়। চাইলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতো। কিন্তু অনেক সময় বাধা নিজেই যেন নিজেকে অতিক্রম করতে চায়। তবুও, এভাবে কথাটা বলে ফেলা দীপিকার ঠিক হয়নি। সব জেনেও এমন বোকার মত প্রশ্নটা করায় আবার একটা লজ্জা বোধও হচ্ছে তার।তাইতো ভেতরে ভেতরে সে বেশ ভেঙে পড়ছে। দীপিকা এমনিতে অনেক শক্ত মনের একটা মেয়ে। কিন্তু শাহেদের প্রসঙ্গ এলে নিজেকে অসহায় লাগে। মনে হয় সবকিছুর নির্ভরতা যেন শাহেদের প্রতি। কেমন যেন একটা আস্থা বিশ্বাসের জায়গা করে নিয়েছে নিজের অজান্তেই।মনে হয় শাহেদ পাশে থাকলে সে যেন অনন্তকাল পাশাপাশি হাঁটতে পারবে কোন লক্ষ্য ছাড়াই। কোন সাফল্যের প্রাপ্তিতে, কোন সুসংবাদে আনন্দ ভাগাভাগিতে, কোন দুঃসংবাদের ধকলটাও যেন শাহেদকে নিয়েই কষ্টটা অনুভব করতে চাওয়া।কিন্তু এভাবে ভাবনাটাতো মোটেও তার উচিত হচ্ছে না।একটা অস্বস্তি, মনের ভেতর খচখচ করছে।

দীপিকা বেশ কয়েকবার বিছানায় এপাশ ওপাশ করে বুঝে নিলো, নাহ ! আজ আর ঘুম ধরা দেবে না। মিছেই আর চেষ্টা করবে না ঘুমানোর। সে উঠে বসলো।

দীপিকার শরীরের সাথে ওর মনের বেশ বোঝাপড়া। কখন মনটা কেমন আছে ঘড়ির কাটার মত শরীরটা তা জানান দেয়। এই যেমন মনটা ভাল থাকলে শরীরটা বেশ চাঙা লাগে। ফুরফুরে মন, মুখে দু চারটা গানের কলি বেরিয়ে আসবে। এম্নি এম্নি খুব একটা ভাললাগা। এক কাপ কফি বানিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে গাড়ির চলাচল দেখা এবং তা দেখে মনে হয় যেন লন্ডনের টেমস নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে! কী এক অদ্ভুত হালকা বোধ,যেন পাখির পালক লাগানো হয়েছে গায়ে।

কিন্তু এখন মনের অবস্থার চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন।

আজ এক অনাবশ্যক বা বলা যায় এক অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে দীপিকা। 

কিছুতেই তা মাথা থেকে, মন থেকে, চোখ থেকে তা সরাতে পারছে না। ভুলটা তারই হয়েছে। শাহেদকে এভাবে প্রশ্নটা করা ভীষণ বোকামি হয়েছে তার।এতে যে শাহেদ প্রচন্ডভাবে আঘাত পেয়েছে মনে সেটা নিশ্চিত। আর এ কারণটাই বেশি অস্থির করে তুলছে দীপিকাকে। চাইলে প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়া যেতো। কিংবা ঘুরিয়ে পেচিয়ে আভাসে ইঙ্গিতে উত্তরটা জেনে নেয়া যেতো। এভাবে সরাসরি জিজ্ঞেস করে ওকে বিব্রত না করে। তাইতো নিজের প্রতি বিরক্তিবোধ হচ্ছে। আর শরীরের ভাষায় তা জানান দিচ্ছে। বলেই দিয়েছে আজ ঘুম আর আসবে না। অগত্যা দীপিকা বিছানার মায়া ছাড়ল। এক কাপ কফি বানিয়ে এসিটা বন্ধ করে বারান্দায় গিয়ে বসলো। রাস্তায় বেশ আলো। দিনের বেলার চেনা পথটা অচেনা লাগছে। এভাবে নিজের কাছেও নিজেকে অচেনা লাগছে। আত্ম জিজ্ঞাসায় নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করছে। চলবে...