ছাদখোলা বাস নয়, হেলিকপ্টারে শোভাযাত্রা করলো মেসির দল

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

বিশ্বজয়ীদের বরণ করে নিতে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) অকল্পনীয় সংখ্যক আর্জেন্টিনিয়ান নেমে এসেছিলেন রাস্তায়। মেসিরা রাজধানীতে প্রবেশের আগেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়ো হন রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে। ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব রূপ নিয়েছে প্রধান উৎসবে। তবে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ভক্তদের সকল পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে সরকারী বাহিনীগুলো। রাজধানীতে শোভাযাত্রায় প্রথম আঘাত এসেছে মঙ্গলবারই। নিরাপত্তাজনিত কারণে শোভাযাত্রা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তবে বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে আসার পর আর থামানো যায়নি। রাজধানীর পথ-ঘাটে কেবল সাদা-নীল জার্সি। এমনকি বুয়েনস এইরেসের শহরতলীও পূর্ণ হয়ে গিয়েছে সমর্থকদের উল্লাসে। তারা সবাই চেষ্টা করেছেন ফুটবল দলের তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের উদযাপনে মেতে উঠতে এবং তাদের জাতীয় নায়কদের ক্ষণিকের জন্য হলেও দেখতে।

আর্জেন্টিনার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর সুত্রানুসারে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ নেমে এসেছেন বুয়েনস এইরেসের রাস্তায়। ভক্তদের চাপে বানের জলের মতো ভেসে গিয়েছে আর্জেন্টিনার রাজধানীর সবচেয়ে বিখ্যাত দুটি স্থান প্লাসা দে মায়ো এবং ওবেলিস্ক।

প্রথমে বিশ্বকাপসহ ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা’ লেখা বাসে সমর্থকদের নিয়ে বুয়েনস এইরেস থেকে উপকন্ঠের দিকে গিয়েছে মেসির দল। এই বাস শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছেন আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি নিজে। তবে ছাদখোলা বাসটির ফুটবলার ও কোচিং সদস্যদের চলার পথ পুরোপুরি থামিয়ে দেন তাদের সমর্থকরা। ফলে আগের পথ বদলে বাসটি চলে যায় কাছের একটি বিদ্যালয়ে। সেখানে তারা বাস থেকে নেমে পড়েন। সরকার তাদের সেই মাঠ থেকে হেলিকপ্টারে তুলে নিয়ে সবার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় রাজধানীর উপকণ্ঠে জাতীয় দলের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে।

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবের্তো ফেরনানদেজের নারী মুখপাত্র গ্যাব্রিয়েলা চেরোতি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে বলেছেন ‘এই বিশ্বের চ্যাম্পিয়রা শোভাযাত্রার পথগুলোর ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছেন। কারণ মাটিতে শোভাযাত্রা করা অসম্ভব ছিল।’

হেলিকপ্টারগুলোতে উড়িয়ে নেবার কয়েক সেকেন্ড আগে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) র প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিও তাপিয়া তার টুইটার অ্যাকাউন্টে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে একটি বিবৃতি প্রকাশও করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ওবেলিস্কে অভিবাদন জানানোর জন্য হাজির হওয়া এবং সেদিকে যাওয়া সব মানুষের অভিবাদন আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের সামনের দিকে এগুতে দিতে রাজি হয়নি, তারা আমাদের নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছে। তাই চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়দের তরফ থেকে হাজার হাজার ভক্তদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।’

তবে নিজেদের এই দারুণ যাত্রাটি স্মরণীয় করতে আর্জেন্টিনার বিশ্বসেরা ফুটবলাররা শহরের কেন্দ্রগুলোর ওপর দিয়ে উড়ে গিয়েছেন। কয়েকবারে প্রদক্ষিণ করেছেন পুরো শহর। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের মাঝমাঠের খেলোয়াড় এনজো ফেরনান্দেজ হেলিকপ্টার থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করেছেন।

নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কর্মকর্তারা পথ বদলে দিলেও পুরো যাত্রাই লাইভ করেছে আজেন্টিনার সবগুলো টিভি চ্যানেল, রেডিও এবং খবরের কাগজের অনলাইনগুলোও। মানুষের গোড়ালির সঙ্গে গোড়ালি বেঁধে গিয়েছে দীর্ঘ এই বিশ্বকাপের উৎসবের খুশিতে।

বেলা সাড়ে তিনটায় এক ক্যারাভ্যান পুলিশ উৎসবের আমেজে বুঁদ হয়ে ছাদখোলা বাসে খেলোয়াড়দের সঙ্গী হয়েছে।

তবে এরই মধ্যে বেশ কিছু দুর্ঘটনাও ঘটে। ফ্লাইওভার থেকে বিপদজনকভাবে মেসিদের বাসের ওপর লাফিয়ে পড়ার ব্যর্থ চেষ্টার পর শোভাযাত্রা বাতিল করা হয়। বিকেল পাঁচটায় বুয়েনস এইরেসের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের প্রধান স্থানীয় টিভিকে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই পর্যন্ত ১৮ জন শোভাযাত্রাকারী আহত হয়েছেন। আগের নিয়ম থেকে প্রস্থানের পর তাপিয়া জানিয়েছেন, ‘আমাদের বিশ্বকাপ দল ভিন্ন, ভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। তাদের নিরাপত্তা প্রদান করা হবে পুরো দেশে।’