তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু

আব্দুছ ছালাম চৌধুরী 

শিরোনাম পড়ে অনেকেই হয়তো অবাক হবেন, এ আবার কেমন কথা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু। কিন্তু আসলেই কয়েকটি প্রেক্ষাপট অনুধাবন করলেই বুঝা যাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। 

তথ্য মতে---

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিলঃ ১৯১৪ সালের ২৮শে জুন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যাকান্ডের মাধ্য দিয়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাতের কারণ ছিলো হত্যাযজ্ঞ। আর সেই হত্যাকারী ছিলেন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় নাগরিক, কিন্ত জাতিতে বসনীয় সার্ব। সে সময় বসনিয়া ছিলো সাম্রাজ্যটির অংশ।

অনুসন্ধানে দেখা যায়—

১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করার মাধ্যমে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে। এবং ১৭ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন পোল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে আক্রমণ চালায়, ফলে পোল্যান্ড জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও লিথুয়ানিয়ার মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

উপরোক্ত দুটি বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়ন কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত ছিল। 

সেই ধারণা থেকে এটাই অনুমেয় যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে। এবং রাশিয়ার সাথেই হবে। কারণ পৃথিবীতে দুই পরাশক্তির একটি হলো রাশিয়া, আর অপরটি হলো আমেরিকা। 

এই দুই শক্তির কাছে বাকী শক্তিগুলো কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত। 

সম্প্রতি সৌদি আরব তার সহযোগী আরব আমিরাত ওমান বাহরাইন ইরান, সিরিয়া, কিম জং উনের উত্তর কুরিয়া সহ ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ সরাসরি রাশিয়ার সাথে সম্মতি প্রদান করেছে। তাছাড়া পুরানো মিত্র বেলারুশ তো আছেই। সম্প্রতি আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ ঝুলে আছে, তবে পাল্লা ভারি রাশিয়ার দিকে। 

চীনের ব্যবসায়িক স্বার্থ সম্মুখে রাখলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যাচ্ছে না। তাদের সুযোগসন্ধান নিয়ে পরবর্তী একটা কলাম লিখতে চেষ্টা করবো। 

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছে তরল পদার্থ দিয়ে। অর্থাৎ—তেল গ্যাসের সাথে সমুদ্রসীমা তথা পারমানবিক শক্তি দিয়েই হবে।

বলে রাখি--

আজকাল আর সরাসরি সে মানুষের সাথে মানুষে যুদ্ধ করে না। যেটুকু যুদ্ধ করে তা তুলনামূলকভাবে খুবই কম। এখনকার যুগের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো তেল এবং গ্যাস। যাদের কাছে এই কাঁচা তেল কিংবা গ্যাস আছে তারা কোনো না কোনোভাবেই শক্তিধর রাষ্ট্রের রাঙ্গা চোখের স্বীকার হবেই হবে। 

আবার অন্যদিকে যাদের কাছে টেকনোলজি আছে স্যাটেলাইট আছে তাদের দৃষ্টি সব সময় এই গ্যাস এবং তেলের দিকে থাকবেই থাকবে। এই গ্যাস এবং তেলের জন্য শত্রু হয়ে যাবে মিত্র, আর মিত্র হয়ে যাবে শত্রু।

দৃশ্যমান রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, রাশিয়াকে নাস্তানাবুদ করতে গোটা পৃথিবী দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। পরিস্কার কথা যা ইউরোপ এবং আমেরিকার দিকে সকলের নজর থাকবে। 

তার একটাই কারণ, রাশিয়ার প্রচুর গ্যাস এবং তেল আছে। এই তেল গ্যাস সবার প্রয়োজন। তেল গ্যাস অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। যা দিয়ে গোটা ইউরোপ চলে। এই তেল আর গ্যাস দিয়ে তাদের ইন্ডাস্ট্রি চলে, তাদের নতুন নতুন টেকনোলজি স্যাটেলাইট তৈরীর মূলে রয়েছে প্রধান চালিকাশক্তি গ্যাস এবং তেল।

এখানে এসে আমি গোটা ইউরোপ কেনো বলবো এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা ও রাশিয়ার তেল গ্যাস ছাড়া বেকায়দায় পড়বে। 

স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলবো সমস্ত পৃথিবীতে রাশিয়ার তেল গ্যাসের বিকল্প আর কিছু নেই। অর্থাৎ পুরো পৃথিবী কোনো-না-কোনোভাবে রাশিয়ার তথা তেল উৎপাদনকারী তেলের উপর উপর নির্বরশীল।

সবকিছু জেনে বুঝে তারপরও কেনো রাশিয়াকে আমেরিকা তথা ন্যাটো চাপে রাখতে চাইছে। কেনো সাধারণ মানুষের মৃত্যুর পয়গাম জারি করতে চাইছে।

যেখানে খুব ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়েছে—

"ন্যাটো'তে যাবে না— আর ন্যাটো তে যাবই যাবে"

এবার আমরা প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে তাকালে দেখি বিশ্বযুদ্ধে একটিমাত্র লোককে হত্যা করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্ব শুরু হয়েছিলো জার্মানির উচ্চাভিলাষের কারণে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে সেই উচ্চাভিলাষীর কারণে। হিংসা বিদেশ হলো ন্যাটো সম্প্রসারণ করতে করতে রাশিয়ার আঙ্গিনায় গিয়ে দাঁড়ানো।

স্বভাবতই এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিকল্প আছে বলে মনে হয় না।