দাবিদারদের প্রকৃত ক্ষতি পরিশোধ করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি করে বিমার অর্থের দাবিদারদের ব্যাপারে বিমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘কারও চাপের কাছে আপনারা মাথা নত করবেন না, দয়া করে। আমিই বলেন বা আমাদের মন্ত্রি পরিষদের সদস্যদের কাছে নানা ধরনের লোক আসে, তদবিরও করতে পারে সেক্ষেত্রেও আপনাদের দেখতে হবে প্রকৃত ক্ষতি কতটুকু। দাবিদার দাবি করবে বড় একটা কিছু কিন্তু তার প্রকৃত ক্ষতি যাচাই-বাছাই করেই আপনারা অর্থ পরিশোধ করবেন।’

বুধবার (১ মার্চ) সকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিমা দিবস-২০২৩-এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘যথাযথ তদন্ত না করে যেকোনো স্থানের বা প্রভাবশালীদের চাপের মুখে অগ্নিকাণ্ডের কোনো সম্পত্তির ক্ষতির জন্য বিমার অর্থ ছাড় না করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেটা কেন করা হয় না, তাহলে কি আমি মনে করব যারা তদন্ত করতে আসে তারাও এর ভাগীদার। তাদেরও কোনো হাত আছে কি না সেটাও তো আমার সন্দেহ হচ্ছে। সেটা আপনাদের দেখতে হবে।’

বিমার অর্থ দাবির ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে স্বার্থান্বেষী মহলের অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়েও বিমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন আজকে এ কথা বলবেন। কারণ, তিনি যেহেতু এই পরিবারেরই একজন সদস্য (জাতির পিতাও বিমা কোম্পানিতে চাকরি করেছিলেন) তাই এর বদনাম হোক তা তিনি চান না।’

এক সময় তৈরি পোষাক কারখানাগুলোতে ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ড ঘটার প্রসঙ্গ টেনে তদন্ত করে তিনি বিমার মোটা অঙ্কের মিথ্যা অর্থ দাবির প্রমাণ পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। নাম উল্লেখ না করে কোনো একটি কোম্পানির এক নারী কর্মীকে দিয়ে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয় বলেও তদন্তে বেরিয়েছে বলে জানান তিনি।

সরকার প্রধান বলেন, ‘ঘন ঘন একটা জায়গায় আগুন লাগবে কেন? ইনস্যুরেন্সের দাবিদার হয়ে যায়, টাকা পায়। সেক্ষেত্রে আমার অনুরোধ থাকবে বিভিন্ন ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এবং কর্তৃপক্ষ করে দিয়েছি তাদের এ ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকা দরকার। কতটুকু ক্ষতি হলো তার যথাযথভাবে তদন্ত হওয়া দরকার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যথাযথভাবে তদন্ত না করে কারও চাপে পড়ে কোনো টাকা দেবেন না। একটি ফ্ল্যাটে আগুন লাগার ক্ষেত্রে ৪০ কোটি টাকার বিমা দাবিরও তথ্য-প্রমাণ আমার কাছে আছে। একটি ফ্ল্যাটে ৪০ কোটি টাকার কী সম্পদ থাকতে পারে, সে প্রশ্নও তোলেন এবং এর তদন্ত করাবেন বলেও জানান শেখ হাসিনা।’

তিনি বলেন, ‘কত সম্পদ একটা ফ্ল্যাটের মালিকের কাছে আছে যে তার ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হলো আর বিমা থেকে টাকা তুলে নিয়ে গেল। অন্যদিকে, যার ঘর সবচেয়ে বেশি পুড়ল তার বিমাও নাই, সে কিছুই পেল না। এসব বিষয়ে সকলকে একটু নজর দিতে হবে।’

অর্থমন্ত্রণালয় এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান জয়নুল বারী এবং বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বিমা খাতের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ১৯৬০ সালের ১ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। তাই সরকার প্রতিবছর ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং গত বছর একে ‘ক’ ক্যাটাগরি ভুক্ত দিবস হিসেবে উন্নীত করে। বাসস।