দিলাম তোমার চরণ তলে হৃদয় জায়নামাজ

দিলাম তোমার চরণ তলে হৃদয় জায়নামাজ


দেলোয়ার হোসেন সজীব

বিদ্রোহী কবি, কাজী নজরুল ইসলামের লেখনী ঝড় তুলেছিল আপামর বাঙালির হৃদয়ে, অনুপ্রেরণা জুুগিয়েছে সংগ্রামের। ব্যক্তিগত জীবন ছিল ঘাত- প্রতিঘাতের জর্জরিত। তাঁর জীবনে ও প্রেমে অপ্রাপ্তির তালিকা ছিল বেশ বড়ো। তবু ও তিনি সব অবস্থায় খোশমেজাজে থাকতে পারতেন। তাঁর রসবোধ ছিল প্রবল। কিছু মজার ঘটনার কথা বলব আজ তাঁর জন্মদিনে।
*নজরুলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের কিছু হিউমার ছিল। তিনি Aristocrate এর বাংলা করেছিলেন 'আড়ষ্ট কাক' । যারা বক্তৃতা দিতে ভালোবাসেন তাদের নাম করণ করেছিলেন 'বখতিয়ার খিলজী', । কোন কথার মোড় ঘোরাতে বলতেন 'জানে দেওয়া কন্ডাক্টর'।
**কাজী নজরুল ইসলাম ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। ধূমকেতু অফিসে সবসময় চলতো হাসি-আনন্দের বন্যা। মাটির ভাঁড়ে চা চলতো কিছুক্ষণ পর পর। কবি যখন চায়ে চুমুক দিতেন কিংবা কোনো হাসির কথা মনে পড়ত কিংবা কোনো রসিক বন্ধু অফিসে ঢুকত, অমনি কবি অট্টহাসি দিতেন। মাটির পেয়ালা ছুঁড়ে মারতেন। আর মুখে বলতেন, ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’।
***একবার কবি কাজী নজরুল ইসলাম পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি বেড়াতে গেলেন। নজরুল চা পান করার আগ্রহ প্রকাশ করলে পল্লীকবি বাজার থেকে চা পাতা এনে বাড়ির বউ-ঝিকে বানানোর জন্য দেন। বউ-ঝিরা এর আগে চা বানাননি। তারা বাড়িতে যত রকম মসলা ছিল (আদা, মরিচ, পেঁয়াজ, ধনে, জিরা ইত্যাদি) সবকিছু দিয়ে জম্পেশ এক কাপ চা খাওয়ালেন নজরুলকে।
****একদিন শিল্পী আব্বাসউদ্দিন অনেক খোঁজাখুঁজি করে নজরুলকে না পেয়ে সকালে তার বাসায় গেলেন। বাসায় গিয়ে দেখেন নজরুল গভীর মনোযোগ দিয়ে কি যেন লিখছেন। নজরুল ইশারায় তাকে বসতে বললেন। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর জোহরের নামাজের সময় হলে তিনি উসখুস করতে লাগলেন। নজরুল বললেন, ‘কি তাড়া আছে, যেতে হবে ?’ আব্বাসউদ্দিন বললেন, ‘ঠিক তাড়া নেই, তবে আমার জোহরের নামাজ পড়তে হবে। আর এসেছি একটা ইসলামি গজল নেবার জন্য।’ নামাজ পড়ার কথা শুনে নজরুল তাড়াতাড়ি একটি পরিষ্কার চাদর তার ঘরের আলমারি থেকে বের করে বিছিয়ে দিলেন।
জোহরের নামাজ শেষ করার সাথে সাথে নজরুল তার হাতে একটি কাগজ দিয়ে বললেন, ‘এই নাও তোমার গজল’। নামাজ পড়তে যে সময় লেগেছে ঠিক সেই সময়ের মধ্যে নজরুল একটি নতুন গজল লিখে ফেলেছেন। গজলটি ছিলো, ‘হে নামাজী আমার ঘরে নামাজ পড় আজ/ দিলাম তোমার চরণ তলে হৃদয় জায়নামাজ।’
শুভ জন্মদিন হে প্রিয় কবি....