নিমন্ত্রণ কবিতা;হৈমন্তীর চরিত্রে ভাবনা

নিমন্ত্রণ কবিতা;হৈমন্তীর চরিত্রে ভাবনা

মোহাম্মদ আলী

অনেক আগে হৈমন্তী নামের চরিত্রের একটা গল্প পড়েছিলাম। সেই হৈমন্তী সেই সময় রূপে-গুণে অদ্বিতীয় ছিল। সেই হৈমন্তীকে অনেকই পছন্দ করতো এবং ভালোবাসার স্বপ্ন দেখতো। আবার হৈমন্তী অন্য একজনকে অর্থাৎ তার প্রিয় বন্ধু হেমন্ত'কে ভালোবাসতো। সে তার প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে হেমন্তের গল্প ও লিখতো। সকলেই জানে হেমন্ত তার খুবই প্রিয়।

   বেশ কিছুদিন হলো, তেমনি এক হৈমন্তী সমমানের কবিতায় মনোনিবেশ করতে লাগলাম। এই কবির কিছু কিছু লেখায় সেই হৈমন্তীর শব্দ-মানের খোঁজ পাই। 

পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের মাঝে প্রকৃতির একটা টান থাকে। সে, যে দেশেই জন্মগ্রহণ করে না কেনো, সে দেশের বড় হওয়া, সেই দেশকে কখনোই ভুলতে পারে না। সে দেশের পাখপাখালি নদী-নালা-খাল-বিল, ঘাসফুল থেকে শুরু করে পদ্মফুল সবই যেন তার নিজের চোখে দেখা। 

কবি তাহমিনা চৌধুরীর লেখনীতে এগুলোই বেশি পাওয়া যায়। প্রকৃতিতে যারা বড় হয় তারা সেইসব লেখাকে মননে ধারণ করে। তেমনি আমিও। 

বলে রাখি,,

অনেকের কবিতার বিশ্লেষণ করতে পারি না, কারণ তাদের সাথে, তাদের লেখার সাথে আমার তেমন পরিচয় নেই। আর আমার মনের সাথে যথাযথ মেল বন্ধন ও নেই। 

তাই বরাবরের মতো আজও সেই হৈমন্তী, আর হেমন্তকে নিয়ে এই লেখাটি লিখলাম। 

হৈমন্তী একটি মেয়ের নাম, আর হেমন্ত একটি ঋতুর নাম। এই আলোচনার গল্পের দীপশিখা হলো নিমন্ত্রণ। তা ও হৈমন্তীর নিমন্ত্রণ। এই হৈমন্তীর শব্দের পংক্তির দুটো চরিত্র নিয়ে আমার আজকের নিবেদন। 

তথ্য মতে— 

হেমন্ত হলো ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু, যা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের সমন্বয়ে গঠিত। শরৎকালের পর এই ঋতুর আগমন। এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। কৃত্তিকা ও আর্দ্রা এ দুটি তারার নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের।

লেখক হৈমন্তীর পরশ অসম্ভব তবে তার শব্দের পাঠ সুধা মানেই স্পর্শ বা স্পর্শন। প্রকৃত পাঠকেরা হৃদয় ছোঁয়া হতে পারে যদি মনোনিবেশ হয় শতভাগ। 

সেই লেখার সাথে সে প্রকৃতিতে মিশে যাওয়া হবে পূর্বশর্ত। দখিনা হাওয়া হোক আর কারো শব্দের ছোঁয়া হোক। 

হাওয়া হলে সে তো অনুভূতি জাগায়, আর প্রত্যক্ষদর্শী হলে তো কথা নেই। প্রাণ জোড়ায়।  

একদিন ঊষাকালীন সময়ে না বলা এক বার্তা প্রকাশ পায়। তার অমিয় ধারায় সেই বার্তা পাঠে আনন্দের ঢেউ তুলে। ইন্দ্রিয় ভাবে তাকে সাধুবাদ জানাই। তার সাধুসঙ্গ পাঠক শুভানুধ্যায়ী হিসেবে মৌন সুখ গ্রহণ করলাম।

কবিতা ছিলো শিশিরের ছোঁয়া ঘাসের কথা।অর্থাৎ একটু উপরের দিকে যেতে হবে, যখন বার্তা আসবে, তা ও সেই প্রভাত বেলায়, সেই টান অনুভবে, শিশির ভেজা ঘাসে, নুপুর পরা পায়ে, বন্ধুর টানে উতলা মন। 

পূর্বের কোথায় যাই,,, মনের টান না থাকলে শিশির ভেজা ঘাসে সুখ অনুভূত হয় না। আর যদি সেই ক্ষণে পাখিরা ডাকে তবে ধরে নিতে হবে, বন্ধুর সুখে আনন্দে গা ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে প্রবল।

সবই সেই সোনালী ভোরে,,, প্রথম প্রভাতে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই সোনালী আঁশ। সে আঁশে দোল খায়, সেইখানে পাখিরা গান গায়। আর সেইক্ষণে কাব্য বীণা বাজে,, গুনগুনে গেয়ে যায়। পাষাণ বন্ধুর তথা হৈমন্তীর তরে।

স্ফুরিত সুধায় মন স্থির' 

ইচ্ছের অনুক্ষণে ঢেলে সাজতে মন চাহে,, তন্মধ্যে আছে কানে ঝুমকা হাতে বালা---- যা থেকে দোল খায় পাঠক শুভানুধ্যায়ীর অন্তরে।

তার কবিতায় বাসনা অঢেল। আবার ফুলে ফুলে যেমন মৌমাছি আসে, বসে— মধু আহরণ করে। খেলে, পাখা মেলে উড়ে—সে উচ্ছ্বাস সকল সময়ই প্রার্থিতা অর্থাৎ নিমন্ত্রিত বন্ধু হৈমন্তীকে আশা করতেই পারে । 

যখনই আপন মহিমায় আপন গুণে স্রোতধারা নিঃসৃত হয়, তখন কামিনী ফুল ফুটে উঠে।  

কামিনী যেমন ফুটে, গন্ধরাজ তেমনি ও ফুটে, দুটোই ফুল, দুটোই গন্ধ ছড়ায়। গন্ধরাজ সেরা বলে গন্ধ-- রাজ বলা হয়। সেই গন্ধরাজ বরাবরের মতোই সুবাসিত। আর সেখানেই পাখিরা মন আনন্দে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়। প্রকারান্তরে বহতা মৃদ বায়ু সবসময় আলোড়ন তোলে, সে মনের ঘরে হোক,,, আর হৈমন্তীর তরে হোক।

আরেকটা ফুল হাসনাহেনা বরাবরই সুবাস ছড়ায়। তার গন্ধসুধা মনকে মাতাল করে রাখে। হাসনাহেনার সুবাসে সুবাসিত হেমন্ত। আরও আছে সারি সারি বৃক্ষ তরুলতা মন মাতিয়ে তোলে নতুন নতুন ধাঁধায়। পাখিরা নাচে ডালে ডালে।

শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি সবসময়ই পুলকিত করে রাখে। মনে তরঙ্গ জাগায়। নুপুরের ধ্বনির সাথে এই তরঙ্গের মেলবন্ধন হয়েই যায়। 

হেমন্ত বাতাসে

হৃদয় তখনই দুলে,, যখন হৃদয় ছুয়ে যাওয়ার মতো উষ্ণীষে ভ্রত হয়। আবার হৃদয় তখনই দুলে বন্ধুর আঁখি কোণে, যেনো হৈমন্তী আশেপাশেই। 

মনের কোণে কতো শ্রাবন গেলো বর্ষা গেলো, শরৎ গেলো-- এমন নির্মল দিনে হৈমন্তী তোমায় ভুলে যাওয়া দুস্কর। এই হেমন্তে তুমি বাংলাদেশে না এলে আর লিখবো না। অভিমান ভরা সেই নিমন্ত্রণ বিফলে যাবে ।  

অবশেষে হৈমন্তী হেমন্তের কাছে নিমন্ত্রণ পাঠালো। মিষ্টি রোদে সবুজ গালিচা কেনো! লাল গালিচা বিছিয়ে রাখবো। 

আমার এই লেখা—

  " "নিমন্ত্রণ কবিতা মনোবাঞ্ছা বুঝি হৈমন্তীর

বৈচিত্র্যময় শব্দের ব্যাখা। কবিতায় তাহমিনা চৌধুরী বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন।