নুহাশ পল্লী (ভ্রমণ বৃত্তান্ত)

নুহাশ পল্লী (ভ্রমণ বৃত্তান্ত)

সেলিম রেজা

 ছেলে মেয়ের দুজনের ই পরিক্ষা শেষ

ছেলে মাষ্টার'স ফাইনাল আর মেয়ে অনর্স প্রথম বর্ষ, মেয়েটা বায়না ধরলো কোথাও বেড়াতে যাবে সাথে ছেলেও বললো আমি হয়তো কোন কাজে ঢুকে যাবো তখন আর সবাই এক সাথে কোথায় বেড়াতে পারবো না।

তাই চলো আমারা কোথায় একটু বেড়িয়ে আসি, আমি তখনও মোটামোটি সুস্হ আমি বললাম ঠিক আছে আমরা ত দেশের বাইরে কোথাও যাইতে পারবো না চল ঢাকা, যাই ঢাকার আশে পাশে যাই দেখার মত আছে ক দিন ফেমেলি টুর হয়ে যাক অল্প খরচের মধ্যো।

দিন ক্ষন ঠিক তার আগে থেকেই একটা টান টান ভাব কাপর চোপর গোছানো ইত্যাদী ইত্যাদী। সে বার প্রোগ্রাম হলো আমরা ট্রেনে যাবো ঢাকা, ট্রেনের টিকিট অগ্রীম না কাটলে টিকিট পাওয়া যায় না, তাই ছেলটা তখনও শহরেই থাকতো পাঁচ দিন আগেই টিকিট কনফার্ম করলো। 

অবশেষে আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ কভিড তখনো কি জানাতামই না,

 ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রয়ারি আমারা যাত্রা শুরু করলাম আমারা চার জন দু ছেলে মেয়ে আমরা দু জন।

নির্ধারিত আসনে আমরা বসলাম যথা সময়ে ট্রেনের হুইসাল বাজিয়ে যাত্রা শুরু হলো, মেয়েটার এই প্রথম ট্রেনে চড়ার অনুভূতি আমি আর ও একসাথে ডাবল সীটে বসলাম, সে কি আনন্দ, 

ট্রেন ধীর গতিতে আগাচ্ছে আর আমি এটা ওটা আঙ্গুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখাচ্ছি

এই করতে করতে কখন যে কমলাপুর পৌছিলাম বুঝতেই পারলাম না। 

এর পর ঢাকাতে এক বোনের বাসায় উঠলাম

রেষ্ট নিলাম দুপুরের খাবার খেলাম - এর ঢাকাতেই বেরালাম পরের দিন সোনার গাঁ পানাম নগর গেলাম - 

তার পর গাজীপুর মৌচাকে ছোটবোনের বাসায় আসলাম - এখানে এসেই মেয়ে আবার বায়না ধরলো জননন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ন আহমদের বাড়ী নুহাশ পল্লী যাবে।

ওকে নো প্রবলেম যাবো,

আমরা চারজন আর আমার বোন ভাইগ্না সহ রওনা দিলাম বেলা ৩ টা। 

গাছে গাছে নতুন পাতা বিকেলের নরম রোদ

পাখীর কল কাকলী,মৃদু হাওয়া নবরুপে সজ্জিত প্রকৃতি যেন জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। 

অবশেষে আমরা প্রায় ঘন্টা খানিকের মধ্যোই পৌছিলাম, মানুষের সৃষ্টি 

স্বত্তার আশ্চর্য নৈপুন্যের 

মনোমুগ্ধকর আতুড়ঘর।

দক্ষ শিল্পীর অকৃত্তিম হাতে হার মানানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধাঁর।

সে শিল্পী আর কেউ নন,বাংলা সাহিত্যের কথা সাহিত্যিক কিংবদন্তী হুমায়ন আহমেদের তৈরী নুহাশ পল্লী। 

তার ছেলের নামেই এই নুহাশ পল্লী।

এখানে মেইন ফটক পার হতে লাগে প্রতি জন ২০০ টাকা, আমরা টিকিট সংগ্রহ করে ভিতের প্রবেশ করলাম,

প্রথমে ভিতরে গিয়ে প্রথম চোখে পরল এক বিশাল সবুজ মাঠ, পুরো স্হাপনা টা ৪০ ভিগা জমির উপর আছে নানা জাতের ৩০০ এর উপরে গাছ পালা প্রতিটার গায়ে নাম লিখা আছে।

যা আমরা নাটক সিনেমায় দেখিছি তা যেন নিজের চোখে দেখছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। 

লীলাবতীর পকুর ঘাট, কৃত্তিম কিছু পরী মৎস্য কন্যার ভাষ্কর্য - 

আছে উঁচু গাছের উপরে সুন্দর টং ঘর ,

বড় দাবা খেলার কোর্ট - 

তেতুল বনের জোসনা দেখার সেই তেতুল গাছ।

আর এই তেতুল গাছের নিচেই চীরনিদ্রায় শায়িত আছেন কবি। 

নুহাশ পল্লী বছেরের প্রতি দিনই খোলা থাকে

সকাল ৮ / থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। আর বারো বছেরের নিচে যারা তাদের প্রবেশ ফি লাগেনা।

কবির জন্মদিন ১৩ নভেম্বর-১৯৪৮

মৃত্যু ১৯ জুলাই ২০১২।

এ দুইদিন কোন টিকিট লাগেনা সবার জন্য একদম ফ্রী।

প্রকৃতি এবং কৃত্তিমতার

অসাধারন মেইলবন্ধনের মাধ্যমে সৌন্দর্যকে অনন্য মাত্রায় কিভাবে রুপ দেয়া যায় - নুহাশ পল্লীতে না গেলে কখনো বোঝা সম্বভ নয়।

আর এই সবই লেখকের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ।

- সেলিম রেজা