বিএনপি-জামায়াত আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না: শেখ হাসিনা

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বোমাবাজি, গুলি, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, মানুষের অর্থ আত্মসাৎকারী, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারি বিএনপি-জামায়াত জোট আর কোনোদিন এদেশে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ তাদের কখনো মেনে নেবে না। জনগণ কখনই তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না।’

রবিবার (১৯ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির সরকারপ্রধান বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তার সরকার দেশের উন্নয়নে যে কাজগুলো করেছে সেগুলো ঘরে ঘরে মানুষের মাঝে তুলে ধরার জন্য তিনি দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত মানুষের কাছে বার বার মিথ্যা বলে বলে সেই মিথ্যাটাকেই সত্য করতে চায়। কিন্তু, তাদের আমলে মানুষ কি পেয়েছে-খাবার জন্য হাহাকার, বিদ্যুৎ চাইতে গিয়ে গুলি খেয়ে মানুষ মারা গেছে, শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি চেয়েছিল বলে রমজান মাসে ২৭ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছিল খালেদা জিয়া, ১৮ জন কৃষক সার চেয়েছিল বলে তাদের হত্যা করেছিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তাদের এগুলোই রেকর্ড, তারা এগুলোই করে গেছে। আর আজকে সারও কারো কাছে চাইতে হয় না। আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সুপেয় পানি ও স্যানিটারি ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ওষুধ দিচ্ছি, এখন থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দরিদ্র ডায়বেটিক রোগীদের বিনামূল্যে ইনসুলিনও প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের এই বাংলাদেশে কোনো মানুষ অন্নের জন্য কষ্ট পাবে না, গৃহহীন থাকবে না, শিক্ষার আলো বঞ্চিত থাকবে না- প্রত্যেকটি মানুষের জীবন মান উন্নত হবে।

বিএনপির অপপ্রচারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা ভাঙা রেকর্ডের মতো সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করে অপপ্রচার চালিয়েই যাচ্ছে। এত মিথ্যা কথা তারা পায় কোথায় থেকে? আমরা নাকি দেশের কোনই উন্নয়ন করিনি, সবকিছু ফোকলা ও ধ্বংস করে দিয়েছি! আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। মেট্টোরেল করেছি, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করছি। একদিনে একশ’ সেতু, একশ সড়ক নির্মাণ কোন সরকার করতে পেরেছে? এসব কি উন্নয়ন না। চোখ থাকতেও কেউ অন্ধ হয়ে থাকলে তাদের কিছুই চোখে পড়ে না।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে দেশের বাজেট ছিল মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর আমরা ৬ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট দিয়েছি। দেশের উন্নয়ন না হলে এতবড় বাজেট কিভাবে দিলাম? বাংলাদেশে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, আমরাই প্রথম দেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি এবং আরও চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। প্রত্যেক বিভাগেই আমরা একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করব। দেশের যদি উন্নতি না হয় তবে এসব আমরা করছি কীভাবে?

তিনি বলেন, আমরা দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। এ কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মহামারির কারণে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্যাভাব দেখা দিলেও বাংলাদেশে কোনো মানুষের খাদ্যের কোনো অভাব আমরা হতে দেইনি।এসব কী উন্নয়ন নয়?

সরকার প্রধান বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই সৃষ্টি, এমনকি তারা পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে। পাঁচবার দুর্নীতিতে দেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান করেছে। দেশ ধ্বংস করে আবার এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল। এরপর দেশের মানুষের আন্দোলনের ফলে দেশে ইমার্জেন্সি আসে।

খালেদা জিয়ার পরিবারের বিপুল অর্থবিত্ত কিভাবে হলো-সেই প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার ৪০ দিন পর্যন্ত টিভিতে দেখানো হলো জিয়া কিছু রেখে যায়নি। জিয়াউর রহমানের প্যান্ট কেটে ছোট করে (অলটার) তারেক ও কোকোকে পরানো হোত। একটা ভাঙা সুটকেস ও ছেড়া গেঞ্জি রেখে গেল। তাহলে সরকারের আসতে না আসতেই কীভাবে হাজার হাজার কেটি টাকার মালিক এরা হলো?

তিনি বলেন, ‘কাদের টাকা চুরি করে হলো। চুরি তো চুরি, সে চুরি আবার ধরা পরলো আমেরিকার এফবিআইয়ের হাতে। ধরা পরলো সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতে গিয়ে। আমরা অবশ্য ৪০ কোটি টাকা ফেরত আনতে পেরেছি। এখনো বিএনপি নেতাদের বহু টাকা বিভিন্ন জায়গায় ফ্রিজ করা আছে। তাহলে এই টাকা কাদের টাকা। জনগণের টাকাই এরা পাচার করেছে। আর জনগণকে গ্রেনেড হামলা, গুলি, খুন, হত্যা ছাড়া আর কিছু দিয়ে যেতে পারেনি। আর তাদের ভাঙা স্যুটকেস তো যাদুর বাক্সে পরিণত হয়ে গেল। সেখান থেকে ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে, একটার পর একটা লঞ্চ হচ্ছে।

সামনে রমজান মাস, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য যা যা প্রয়োজন তার সরকার তার ব্যবস্থা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের সকলের নজর রাখতে হবে কেউ যেন খাদ্য মজুদ বা কালোবাজারি করতে না পারে সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা ১ কোটি মানুষকে পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য দিচ্ছি। ৫০ লাখ পরিবারকে মাত্র ১৫ টাকা কেজি দরে চাল প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। প্রয়োজন হলে আরও ৫০ লাখ মানুষকে এর আওতায় আনব। আমরা দেশের কোন মানুষকে কষ্টে থাকতে দেব না।

সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া, বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী।

সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম।