বারবনিতার কথা

বারবনিতার কথা

নাফিসা রাহমান

আমি কৈলাশ পুরের চা বাগানের 

সেই ফুটফুটে মেয়ে রিমলি!

বারবনীতা বটে !

চা বাগানের পাহারাদার

সুশান্ত কুমারের ঝি ,গো , 

ঘাড়ের দুপাশে , দু বেনী দুলিয়ে 

এক্কা দোক্কা খেলা সেই মেয়ে ?

পলাশ, রাংগা , জীবন আমার , 

নিত্যনতুন খেলা , আর ক্ষিধার জালা !

এরই মাঝে আমার ছিল বসবাস ।

বয়স আমার নয় কি দশ , 

দেখতে আমি বেশ ছিলাম, 

প্রজাপতি মন , দীঘল কালো চুল 

পাখীর ডানার মত 

আঁকা ভুরুর নিচে , 

আমার সর্বনাশা টানা টানা চোখ !

লেবুনচুসের লোভ দেখিয়ে 

বাবার বন্ধু , ঐ সোনাই কাকা ? 

নিত্যই আমাকে কাছে ডাকত ।

বয়স আমার এক্কা দোক্কা খেলার , 

হয়ে উঠলাম সবার চোখের আহার !

অপরাধ, সেকি অপরাধ , 

কেউ আমাকে বাঁচতে দেয়নি

চা বাগানেই বেড়ে ওঠা যুবক 

পরাগ , সুমন, সোনাই কাকা , 

কেউ আমাকে বাঁচতে দেয়নি , 

লুটেরা কুকুর , ধংসের স্তুপাগারে 

লটোপুটি খেলো, 

আমার শরীরের ভাঁজে ভাঁজে

এঁকেদিল পচনের আলপনা !

আমার দেহ মন ভেংগে হোল চুরমার , 

এক সু্কনো গোলাপের পাপডীর মত ।

এখন আমার দীঘল চুল উঁচু করে বাঁধা

খোপায় লাল জবা গুঁজা , 

আমার ঢেউ খেলানো শরীরে 

আঁটসাঁট করে শাডী পরা ।

শিশিরে সিক্ত করা 

নিসপাপ পা দুটতে আমার 

ঘুংগুর পরা । 

আমার চলনে বলনে কত প্রেম , 

কে কে নেবে এসো, ? 

আমার নাকছাবিটা 

আজও আমার অতীতকে খোঁজে, 

আহা , আমার শৈসব , আমার কৈশর 

আমার বসন্ত ঘেরা দিনগুলো , 

আমার নীলাভো সপ্ন , ! 

আমি , কৈলাস পুরের সেই মেয়েগো , 

দীঘল বিনুনি করে এক্কা দোক্কা খেলা মেয়ে রিমলী ?

তোমরা আমাকে নষ্ট মেয়ে বল , 

বারবনীতা বটে , 

বলত আমি নষ্ট হলাম কেন?