মাঠ ছেড়েছেন আরিফ-মাহমুদুল, এখন টার্গেটে আমি: বাবুল

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৬ দিন আগে সংবাদ সম্মেলন ডেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল।

বুধবার (১৪ জুন) বিকাল ৪টায় মহানগরের কুমারপাড়াস্থ লাঙ্গল প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন অভিযোগ করে বাবুল বলেন- সিলেটে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নেই। বাধ্য হয়ে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হাত পাখার প্রার্থী প্রার্থী মাহমুদুল হাসান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এখন সরকারদলীয় প্রার্থীর টার্গেট আমি। বিভিন্নভাবে আমাকে চাপে রাখা হচ্ছে। আমার কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ছিেড়ে ফেলা হচ্ছে আমার ব্যানার-ফেস্টুন। ভুয়া ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু আমি কিছুতেই ভোটের মাঠ ছাড়বো না। 

লিখিত বক্তব্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বলেন- জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবারের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমার হাতে তুলে দিয়েছেন লাঙল প্রতীক। এরপর থেকে আমি ভোটের মাঠে আছি। কিন্তু আপনারা দেখতে পাচ্ছেন নির্বাচনের মাঠে কী ঘটতে চলেছে। এতে আমি শঙ্কিত। নানাভাবে আমাকে চাপের মুখে রাখা হচ্ছে। সিলেটের মাঠে থাকা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের চোখরাঙানি দেওয়া হচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে, পরিস্থিতি ও পরিবেশ আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। তবে জীবন গেলেও আমি আমার প্রিয় নগরবাসীকে ছেড়ে ভোটের মাঠ ছেড়ে চলে যাবো না। সিলেটে লাঙলের জোয়ার উঠেছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকা সত্বেও জনতার জোয়ারে এবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাঙলের জয় হবে ইনশাল্লাহ।

তিনি বলেন- আমাকে ও আমার পরিবারকে হেনস্থা করতে ইতিমধ্যে তৈরী করা এই ভুয়া ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয়ের বিষয়টি অনুধাবন করে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা সিলেটে এ নগ্ন খেলায় মেতে উঠেছে। আমার নগরবাসীর বিষয়টি বুঝতে পেরে আরো দুর্বার গতিতে লাঙলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আমার বিচার দেওয়ার জায়গা নেই। সিলেট সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসার ও তার অফিসে বার বার ধর্ণা দিয়ে একাধিক অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। মাঠে থাকা প্রশাসন আমাদের উপরই কড়াকড়ি আরোপ করছে। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গ করে ভোররাত পর্যন্ত প্রচারনা চালাচ্ছেন । আচরণবিধি লঙ্গনের উপর লঙ্গন করা হলেও নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা সব দেখেও না দেখার ভান করছে। বরিশালের ঘটনার পর সিইসি প্রার্থী সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছে সেই বক্তব্য শুনে আমি নিজেই আতঙ্কিত। সিইসি যেভাবে নিরপেক্ষ মাঠ প্রস্তুত রাখার কথা সেখানে তিনি সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই সাফাই গাইছেন। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কী হয়- সেটি আল্লাই জানেন। তবে- আমি বিশ্বাস করি, নগরবাসী জেগে উঠলে সব ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ছিন্ন করে সিলেটে লাঙলের জয় হবেই ইনশাল্লাহ। এবং সিলেট নগরবাসী জেগে উঠতে শুরু করেছেন ।

বাবুল আর বলেন- মঙ্গলবার আমি সশরীরে হাজির হয়ে নির্বাচন কমিশনে আচরণবিধি লঙ্গনসহ নানা বিষয় উপস্থাপন করেছি। কিন্তু এখনো কমিশনের ঘুম ভাঙছে না। আমি নির্বাচন কমিশনে যে সব অভিযোগ উপস্থাপন করেছি, এর মধ্যে উল্লেযোগ্য হলো- সিলেটের নির্বাচনে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সরকারী দলীয় প্রার্থী ক্রমাগত নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গ করে ভোররাত পর্যন্ত নির্বাচনী সভা, পথসভা, গণসযোগ, মিছিল, মিটিং অব্যাহত রেখেছেন। নির্বাচন কমিশন প্রচারণার যে নিয়ম বেধে দিয়েছেন তার কোনো তোয়াক্কা করছেন না। আমাদের ব্যানার, পোস্টার ও নির্বাচনী সরঞ্জামাদি ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। আড়াল থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে নির্বাচনী মাঠে থাকা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের। আমাদের কর্মসূচিতে নানাভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট প্রমানিত হচ্ছে; তারা আমাদের গৃহবন্দি করে রাখতে চায়। কিন্তু সিলেটের নির্বাচনী কর্মকর্তা আমাদের দাবি আমলে না নিয়ে আমাদের উপর বেশি পরিমান কড়াকড়ি করছেন।

বাবুল বলেন- ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন। হলফনামায় দেওয়া তার তথ্যর সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। গতকাল দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম সহ সব মাধ্যমে এসেছে- আওয়ামী লীগ প্রার্থীর হলফনামায় অসত্য তথ্য দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেছেন সিলেট নগরের নরসিংটিলা এলাকার বাসিন্দা এ কে এম আবু হুরায়রা (সাজু)। 

মেয়র প্রার্থী বাবুল বলেন- সিলেটের প্রস্তুত করা মাঠে নানা আশঙ্কা থাকায় নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। বরিশালের ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনে প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান । এখন সিলেটে টার্গেটে আমি। আমাকে নানাভাবে বিপর্যস্থ করে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু আমি এই সিলেট শহরের সন্তান। সিলেটের মানুষের জন্য প্রয়োজনে জীবন দেবো, তবু পালাবো না । শেষ পর্যন্ত দেখবো। 

চলমান সিটি করপোরেশন নিরপেক্ষ হলে দেশ-বিদেশে সরকারেরই ভাবমূর্তি উজ্জল হবে বলে মন্তব্য করেন বাবুল। তিনি বলেন- এতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশের রাজনৈতিক সব দল অংশগ্রহণের আস্থা খুঁজে পাবে। নতুবা সিলেটের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে এবারের সিটি নির্বাচন ।