শারীরিক ধর্ষণ ও মানসিক ধর্ষণে ধর্ষিত আজ পুরা সমাজ সভ্যতা~

শারীরিক ধর্ষণ ও মানসিক ধর্ষণে ধর্ষিত আজ পুরা সমাজ সভ্যতা~

উম্মে হাবিবা আফরোজা--

"--কলঙ্কিত এক অধ্যায়ের নাম "ধর্ষণ।বর্তমানে যা ভয়াবহ আকারে বিস্তার লাভ করে জনজীবন বিধ্বস্ত করে তুলেছে। শারীরিক ধর্ষণ পত্রিকার শিরোনাম হলেও মানসিক ধর্ষণে বিপন্ন হচ্ছে হাজারো অসহায় নারী সমাজ। শারীরিক ও মানসিক ধর্ষণ রোধকল্পে এখনই সময় যার যার স্থান থেকে সজাগ হওয়া। অন্যথায় এই সমাজে বেঁচে থাকা অস্বাভাবিক হয়ে পড়বে। ধর্ষণ কেবল শারীরিক হয় না মানসিকও হয়।

শারীরিক ধর্ষণ নিয়ে সমাজে তোলপাড় হয়, কিন্তু মানসিক ধর্ষণ  ধর্ষিতার জীবনকে পুঁড়িয়ে ক্ষত করে দেয় নিরবে নিভৃতে। যার হিসাব আমরা কেউ রাখি না। শারীরিক ধর্ষণ করে বিশেষভাবে অপরিচিত ব্যক্তিরাই।আর মানসিক ধর্ষণ করতে পারে কেবল হৃদয়ে  জায়গা দেওয়া খুব কাছের মানুষরাই।যাদের একসময় চরম বিশ্বাস করে, তাদের প্রতিশ্রুতিগুলোকে সম্মান ও ভালবাসা দেখাতে গিয়ে আবেগের তাড়নায়  প্রেমের সম্পর্কের ফাঁদে পড়ে একটি মেয়ে তার সর্বোচ্চ বিলিয়ে দেয়।আর সেই পুরুষ তাদের ভোগ করার পর সকল প্রতিশ্রুতি ভুলে তাদের ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে হাজার অজুহাতে। সম্পর্ক করার সময় তাদের পরিবার থাকে না তারা থাকে এতিমরুপে আর বিয়ের কথা আসলেই বলে পরিবার তোমাকে মানছে না তাই আমার পক্ষে আর এই রিলেশন রাখা সম্ভব নয়।"
অনেকে আবার বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে শারীরিক সম্পর্কে জড়িত করে।আর পরে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নারীদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ  ঘটিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে।
এরকম নজিরও এই দেশে কম নয়।
অথচ একবারো ভাবে না একদিন এই মেয়েটি বিশ্বাস করে শুধু আমার চাওয়াতে কতটুকু ত্যাগ করেছিলো!? বরং সেই মেয়ের চরিত্র ও ভার্জিনিটির প্রশ্নই তখন প্রেমিক পুরুষের কাছে বড় হয়ে উঠে। আর তারা হয়ে যায় তখন ধোঁয়া তুলশি পাতা।
কারন ছেলেদের কলঙ্ক থাকতে নেই।তারা সবসময় নির্ভেজাল। অথচ একটা সম্পর্ক গড়ার পর যখন মেয়েটির আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব সকলে জেনে যায়, পরে মেয়েটিকে যখন প্রত্যাখান করা হয় তখন তার মানসিক অবস্থা কতোটা বিপর্যস্ত হতে পারে তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ অনুভব করা সম্ভব নয়।
অনেকে এসব হতাশা থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার মত পথও বেছে নেন। কিন্তু এসকল ধর্ষনের কথা কোন পত্রিকার শিরোনাম হয় না,হয় না প্রতিবাদের মূখ্য বিষয়ও। কারন তখন সমাজ আঙ্গুল তোলে বলবে এক্ষেত্রে পুরুষরাও নিদোর্ষ যত দোষ নারীর।
পুরুষ তো চাইবে, নারী কেন তার দেহ দিতে গেলো!?

"বিজ্ঞানের ভাষায়ও যদি বলতে যাই পুরুষের চাহিদা যেমন আছে তেমনি  আছে একটা নারীরও।"

আর "ধর্মীয় ভাবে বলতে গেলে নারীদের পর্দার কথা কেবল বলেনি  পুরুষদের নজরকেও সংযত রাখার কথাও বলা হয়েছে।"

কিন্তু এই সমাজে, 
নারীদের পাপের শাস্তি হয়, পুরুষের শাস্তি পরকালে হলেও হবে না এই ইহকালে।"

"প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কারীদের বিধাতা কখনো ক্ষমা করেন না"।পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন তম শাস্তি"। এটা আমার কথা নয় কোরআনের কথা।

কেউ কেউ বলেন__আমি ধর্ষকদের চরম ঘৃণা করি। অথচ তারা মিউচুয়াল সেক্স কিংবা মেয়ে পটিয়ে তাদের সর্বশান্ত করে রাস্তায় নামায়। কারন তারা মনে করে এটা ধর্ষণ নয় এটা দুপক্ষের সম্মতির চাহিদা পূরণ মাত্র।

কিন্তু এই ধর্ষণ করে মূলত তারা ঐ মেয়ের বিশ্বাসকে পুঁজি করে ঠকিয়ে। আমার মতে শারীরিক ধর্ষনের চেয়ে মানসিক ধর্ষণ চরম ঘৃন্নিত।কারন এখানে প্রতিবাদ করার কোন পথ থাকে না, থাকে না বিচারের পথও। শুধু ধর্ষিতাকে যাবজ্জীবন কারাবাসের মত আজীবন কষ্ট বয়ে বেড়াতে হয়।

দেহের মৃত্যু ঘটলে সবাই দেখে কিন্তু আত্মার মৃত্যুর খবর কেউ রাখে না।
এটাই আমাদের ধর্ষিতা সমাজের নিয়ম।

বর্তমান সমাজের আলোচিত বিষয়-শারীরিক ধর্ষণ।
ধর্ষণ নিয়ে দর্শনভিত্তিক আলোচনায় তোলপাড় সৃষ্টি হলেও সমাধান আজো শূন্যের কোটায়।তাও আবার পুরুষ শাসিত নয় একজন মহামান্য নারী শাসিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়।যা জাতি হিসেবে খুবই লজ্জার।নারীর ক্ষমতায়নে নারীদের এমনতর নিরাপত্তাহীনতার চিত্র অন্তত নারী সমাজে আশা করা যায় না।

২০১৯থেকে ২০২০সালের আজকের দিন পর্যন্ত ধর্ষনের পরিসংখ্যান দেখলে আতঙ্কিত হতে হয়।নারীর প্রতি সহিংসতার পরিসংখ্যানে এক ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাই।
মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯সালে ৪হাজার ৬২২জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।ধর্ষনের শিকার হয়েছে ১হাজার ৭০৩জন।ধর্ষনের চেষ্টা করা হয়েছে ২৪৫জনকে।নির্যাতনের কারনে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ২৬৪জন।সারা বছর ধর্ষণ কমেনি বরং সংখ্যায় এবং ভয়াবহতা আরো বাড়ছে।২০২০সালের জানুয়ারি মাসটাও শুরু হলো নারীর ওপর আক্রমন দিয়েই।অর্থাৎ এক বছরে ধর্ষিতার সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুন।অন্যদিকে ধর্ষকের সংখ্যাও তো বেড়েছে।এই ধর্ষকরা তো আর ভিন্ন গ্রহের নয়,তারা তো এই দেশেরই মানুষ।তারা শুধু ধর্ষণ করে তৃপ্ত নয় ধর্ষনের পর নির্মম ভাবে হত্যাও করছে।যার উদাহরণস্বরুপ বলা যায় আমাদের বোন তনু, নুসরাত আরো অনেক কোমলমতি শিশুদেরও।

আর বিচার ব্যবস্থার কথাই যদি বলি, প্রতিটি ধর্ষনের খবরেই যেন আজ রুটিনমাফিক এক কাপ গরম চায়ের সাথে একখান পত্রিকার তাজা খবর মাত্র।এইভাবে দেখতে দেখতে ও শুনতে শুনতে যেন আজ আমরা এসবে অভ্যস্ত জাতিতে পরিণত হয়েছি।

এই সমাজে ধর্ষকরা বুক ফুলিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ায়।আর মুখ থুবড়ে মরতে হয় ধর্ষিতাকে।
এই কেমন নিষ্ঠুরতা!?
এই কেমন বিচার!?
পুরা সমাজ সভ্যতাই যেন আজ ধর্ষিত সমাজে রুপ নিয়েছে।প্রতিটি রুন্ধে রুন্ধে আজ পাপচার আর অত্যাচারিদের থাবা।
কিন্তু আর কতো!?

পত্রিকায় কিছুদিন লেখালেখি হবে,তারপর সবকিছু আগের মত চলতেই থাকবে।আবার উল্লাসিত ধর্ষকরা তান্ডব লীলায় শরীক হবে।আজ পিতার সামনে কন্যা নিরাপদ নয়, স্বামীর কাছে স্ত্রী,ক্লাসে পড়ুয়া অবুঝ শিশুটিও নিরাপদ নয়, নয় ৪বছরের মাসুম বাচ্চাটাও।বাসে যাওয়া আসা করা ছাত্রীটা কিংবা চাকুরিজীবী মহিলাটাও নিরাপদ নয়।

এই কেমন সমাজে আমরা বাস করছি!?যার শুধু ধ্বংসই আছে কোন সমাধান নেই্!?

এই নারীদের নিরাপত্তাহীনতার চিত্র কী আমাদের নৈতিক অধোগামিতার এক লজ্জাজনক দলিল নয়!?

পুরুষবাদী,নারীবাদী ও রাষ্ট্রদ্রোহী এই তিন ক্যাটাগরির দর্শন চিন্তায় আজ আমরা একে অন্যকে দোষারুপ করে যাচ্ছি।কেউ বলেন- ধর্ষনের জন্য নারীর পোষাকই দায়ী, তাহলে ৪বছরের শিশুটিকে ধর্ষিতা হতো হলো কেন!?
কেউ বা বলে_পুরুষের লালসায় দায়ী।
সব পুরুষ মানুষ বুঝি এক!?
আবার রাষ্ট্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে বললে আপনি হয়ে যাবেন রাষ্ট্রদ্রোহী।

এভাবে চলছে ধর্ষনের দর্শনচিন্তা।ফলাফল শূন্যের কৌটায় স্থির দন্ডায়মান। 

সর্বোপরি আলোচনার প্রেক্ষিতে মূলত ধর্মীয় অনুশাসন,পারিবারিক শিক্ষা, রাষ্ট্রীয় আইন যথাযথ প্রয়োগ ও সমাজ সচেতনতায় পারে এই ধর্ষণমুক্ত সমাজ নির্মাণ করতে।

মাননীয় সরকার প্রধান একজন নারী, আমরা মায়ের জাতি,আমাদের দেশ ইসলাম প্রধান দেশ,যে ধর্মে নারীদের বিশেষ মর্যাদার আসনে আসিন করা হয়েছে।

তাই জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে চলুন সবাই ধর্ষনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।
এই সমাজকে ধর্ষিত সমাজ থেকে কলঙ্কিত মুক্ত করতে দৃঢ় গতিতে আইন প্রয়োগে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

সমাজের বুকে মায়ের জাতিদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকুক।প্রতিটি নারীই বাঁচুক নিরাপত্তার বলয়ে ও নির্ভরযোগ্য আশ্রয়ে।