শাহারা খান এর দুটি অনু গল্প

শাহারা খান এর দুটি অনু গল্প

শাহারা খান 

টাকা(১)

ক’দিন থেকে রাসেলের মতিগতি ভালো লাগছেনা লাইলীর।মাস পুরার আগেই টাকার বান্ডিল এনে তার কাছে দেয়।লাইলী একবার জিজ্ঞেস করেছিল,তুমি তো বেতন পাও মাসের ৩/৪ তারিখে।এখন আবার মাস শেষ হবার আগেই এত টাকা কোথায় পেলে?রাসেল এক ধমক দিয়ে বলেছিল,তোমার এতকিছু জানার দরকার কি?সংসার কেমনে চলে কিছু টের পাওনা তো।টাকা দিয়েছি ব্যস যত্ন করে রেখে দাও।এরপর লাইলী আর প্রশ্ন করার সাহস পায়নি।এভাবে প্রায়ই রাসেল বেশ টাকা এনে কখনও লাইলীর কাছে দেয়,কখনও নিজের কাছে রাখে।অনেক সময় রাত জেগে রাসেল টাকা গুনে।লাইলীর খুব ভয় হয়।রাসেল এই টাকা কোথা থেকে নিয়ে আসে?সরকারী একটা অফিসে দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা রাসেল।তার তো এত টাকা মাইনে হওয়ার কথা না।আর মাইনে হলে মাসে একবার পাবে,মাসের ভিতরে এত টাকা সে কেমনে আয় করে?বদ মিজাজী রাসেলকে কিছু বলতে গেলে তো তুলকালাম কান্ড ঘটাতেও দ্বিধা করবেনা।লাইলী ভেবে পায়না রাসেলকে এই পথ থেকে ফেরাবে কিভাবে?

ব্রেইন টিউমার(২)

  তিনটা মেয়ে নিয়ে দশ বছর ধরে সুজাতা লন্ডনে বসবাস করছে।গত দুই বছর ধরে সুজাতা মাথা ব্যথায় খুব কষ্ট পাচ্ছে।ডাক্তারের কাছে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই পেইন কিলার দিয়ে কর্তব্য শেষ করে।প্যারাসিটামল খেয়ে খেয়ে কোন কাজ হচ্ছেনা।রাত্রে ঘুম হয়না সুজাতার।এই ঠান্ডার মধ্যেও বারবার মাথায় পানি ঢালে।এভাবেই দিন যাচ্ছে।একটা হোটেলে ব্রেড এন্ড ব্রেকফাস্টে কাজ করে সুজাতা।যথারীতি সেদিন কাজে গিয়েছে।কাজে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সে অনুভব করলো প্রচন্ড মাথা ব্যথা,কিছুতেই পা চলাতে পারছেনা,চোখে ঝাপসা লাগছে।কোনরকমে বড় মেয়েকে ফোন দেয় সুজাতা।বড় মেয়ে(২২) এসে মাকে হাসপাতাল ইমার্জেন্সি বিভাগে নিয়ে যায়।সেদিনও ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই বলে,পেইন কিলার খেয়ে,রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।বড় মেয়ে ঐদিন নার্সদের কাছে অনুরোধ করে,তার মাকে MRI পরীক্ষা করা হোক।কেন বারবার মাথা ব্যথা করে।তার মা রাতে ঘুমাতে পারেনা।তারপর আজ হাঁটতে পারছেনা,চোখে ঝাপসা দেখছে।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেয়েটির অনুরোধ গ্রাহ্য করে নাই।পরে মেয়েটি অনেক তর্ক করার পর তারা রাজি হয় MRI পরীক্ষা করতে।ঐদিনই পরীক্ষা করার পর তারা জানায়,সুজাতার ব্রেইন টিউমার হয়েছে।অপারেশন না করালে জীবনের ঝুঁকি হয়ে যাবে।সাথে সাথে তারা সুজাতাকে হাসপাতালে ভর্তির আদেশ করে।তিনদিন পর অপারেশন করা হয়।সুজাতা বর্তমানে সুস্হ আছে।