স্মৃতির তারা খসে খসে পড়ে (অণু গল্প )

স্মৃতির তারা খসে খসে পড়ে (অণু  গল্প )

কলমে: দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
       মনখারাপের বিকেলে অভীক এসে দাঁড়ালো পোড়ো বাড়িটার সামনে।ওর ছেলেবেলা যেন দুবাহু বাড়ায়ে রয়েছে দাঁড়ায়ে। স্মৃতির ডানা ঝাপটানো ভেতর ঘরে।চোখের সামনে যেন ও দেখতে পাচ্ছে, ছোট্ট ছেলেটা টলোমলো পায়ে ছুটছে। পিছনে তার ভরসার বাবা।ছুটে গিয়ে আছড়ে পড়ছে মায়ের কোলে। মুখে দেবশিশুর হাসি। রান্না ঘরের দিকে তাকাতেই দেখল,মা পাটিসাপ্টা ভাজছে আর ছেলেটার থালায় টুকটুক পড়ছে। মনের আনন্দে ছেলেটার জিহ্বায় রসাস্বাদন ! বারান্দায় দেখতে পেল,হ্যারিকেনের আলোয় মায়ের কাছে পড়তে বসেছে ছেলেটা। পড়তে পড়তে ঘুমে ঢলে পড়ছে পাশে বসা মায়ের গায়ে।মা ছেলের হাসিতে প্রাণের মালকোষ বাজছে যেন সারা বাড়িতে। হঠাৎ যেন কানের কাছে গুনগুন সুর। দেখতে পেল, জোৎস্নায় সারা বাড়ি ভেসে যাচ্ছে আর মায়ের গলায় রবীন্দ্র আবেশ "চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে...."! পেটুক ছেলেটার সারা মুখে হাসি হাসি রাশি রাশি।ইলিশ পাতে ছেলেটার চোখে স্বর্গীয় আনন্দ যেন। পাশে খেতে বসে বাবা মার দুচোখে খুশির প্লাবন !আবেশী বিকেলে স্মৃতির ফসফরাস জ্বলতে থাকে অমলিন।
        হঠাৎ আবার চেতনে ও। একটা আওয়াজে মুখ তুলে দেখলো, সেই পরিচিত কাঠবিড়ালিটা
সামনে দাঁড়িয়ে ।দুপা তুলে হাত জোড়ের ভঙ্গিতে।অভীককে অভিবাদন জানাচ্ছে যেন।লেজ নেড়ে ওর চারপাশে দুপাক ঘুরে হঠাৎ উধাও। পায়ের কাছে আওয়াজে দেখলো ,একটা আম্রপালি পড়ে।মুখ তুলে তাকাতেই কাঠবেড়ালির হাসিমুখ।ওর বন্ধুর হাতে প্রিয় আম তুলে দিতে ও সচেষ্ট তখন।অভীক আমগাছটার দিকে ঝাপসা চোখে তাকালো। ছেলে আম ভালোবাসে বলে বাবা নার্সারি থেকে আম্রপালির চারা এনে লাগিয়েছিলেন।রোজ বিকেলে ছেলেটা গাছের গোড়ায় জল দিতে দিতে বলতো :"বড়ো হ, বড়ো হ তাড়াতাড়ি।কবে আমি দিবি আমায়?" ওর মায়ের প্রাণ ভেজানো হাসি ছেলের কান্ড দেখে।
        কাঠবেড়ালিটা বেশ কয়েকটা আম ফেলেছে নীচে।অভীক বুঝল,এ যেন ওর মাতৃভূমির প্রসাদ। আমগাছটার কাছে গেল ও ধীর পায়ে।পরম মমতায় হাত বুলোতে লাগলো গাছের গায়ে। জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে বন্ধুকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে।সারা শরীরে ভালোবাসার এক সৌমনস্যতা তখন ওর। হঠাৎ গাছটা যেন নড়ে উঠলো।নাকি জানান দিল তার ভালোবাসার।অভীক চোখের জল মুছে নিল হাতের উল্টোপিঠে।