হতদরিদ্র বনাম আভিজাত্য

হতদরিদ্র বনাম আভিজাত্য

 তাহমিনা চৌধুরী 

মাঝে মাঝে অবাক হই, কিছু মানুষের কীর্তি কলাপ দেখে। সম্প্রতি একটি দাওয়াতকে কেন্দ্র করে আমি আমার এক বান্ধবীর স্কুল পরিচিত বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে গেলাম। সরাসরি আমার পরিচিত না হলেও উনার জন্য আমার যাওয়া। তাছাড়া বান্ধবীর বান্ধবী আমাদের এলাকায় নতুন এসেছেন। কৌতুহল বসত আমি আর মানা করিনি।

তাই গেলাম---

বাসায় গিয়ে বসতেই কথা প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক বন্যার কথা উঠলো। আমার সঙ্গে থাকা অন্য বন্ধুরা বন্যা কবলিত মানুষের পাশে থেকেছেন কিংবা আরও থাকতে অঙ্গিরার করলেও যার বাড়িতে বেড়াতে গেলাম, সে তেমন সায় দিলো না। তার কথায় বুঝলাম,,, সবই নাকি "ম্যান মেইড"। 

তর্কের খাতিরে তার এহেন মনোভাবে কষ্ট হলো। এতোদিন আমি তথা আমার অন্য বন্ধু মহল তা অনুধাবন করতে পারি নাই।

চোখ মেলে তার বাসার চারিদিকে অভিজাত্য আর চাকচিক্যতার ছোঁয়া চোখে পড়লো। ক্ষানিকটা মোহনীয় হলেও হীনমন্যতার কারণে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা জন্ম নিতে লাগলো। যা আজ স্ব-চক্ষে আজ দেখে এলাম। ঘরের ভেরত সোনা রঙ্গে মোড়ানো নানান ছবি দেখে মনে হলো এ যেনো কোনো-এক রাজ প্রাসাদ । 

যদিপ তার প্রাচুর্যে আমার ভাবনার কারন নয়। তবে ভাবনাটা হয়েছে তার ঈর্ষণীয় কথাবার্তার।

কথায় কথায় শুধুই টাকার গল্প আর প্রাচুর্যের অহংকার। 

নিজ মুখে বলতে লাগলেন, আমার তিনটি বাড়ি আছে। আরো পাঁচটি না করলে লোকে তাকে বড়ো লোক বলে ভাববে না। এবার নাকি নগদ টাকায় আরেকটা বাড়ি কিনবেন ।

মনে মনে ভাবলাম আর যাই হোক আমরা তো তোমার বাসায় বেড়াতে এসেছি। এখানে টাকার আর প্রাচুর্যের এতো গল্প কেনো!

মনে মনে আফসোস করলাম, আহারে! টাকার গরম।

কিছুক্ষন পরে আবারও প্রসঙ্গক্রমে ইচ্ছে করেই বাংলাদেশের কথা তুললাম। প্রশ্ন করলাম, বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবার কি কোনো চেষ্টা করেছেন? হতদরিদ্রদের পাশে একটু দাঁড়াতে কি মনস্থির করেছেন।

উত্তরে ড্যাব ড্যাবাইয়া চেয়ে চেয়ে সরে গেলেন।

কিছুক্ষণ পর আবারও বাসা বাড়ির কথা তুললেন। 

ইচ্ছে হচ্ছিলো এক্ষুণি বেরিয়ে যাই। সাথে থাকা অন্য বন্ধু ইশারায় বললো,,, 

আপা— দেন,,, আজ একটু ধুইয়ে দেন।

আমি বললাম,, শোনো বোন,

আপনি কি জানেন,কতো মানুষ কোমর সমান জলে হাঁটছে, কতোজন নাক বরাবর জলে হাঁটছে, কতো মানুষ গৃহহারা, কতো মানুষ রাস্তায় থাকছে, যাদের মাথার উপর কোনো ছাদ নেই। 

উপরে আকাশ আর নীচে একখণ্ড ভেজা ভেজা মাটি। তাতেই কোনোমতে ইট বা পাথর শিওরে রেখে রাত পার করছে। শরীর আবৃত করার জন্য শুকনো কাপড় নেই। শরীরের গরমে পরনের কাপড় শুকিয়ে যাচ্ছে, আর আবারও ভিজছে। ওরা, শুধু মাত্র বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। সহায় সম্বলহীন অসহায় এই মানুষ গুলো দেখে পুরো বিশ্ব হতভম্ব । 

যার যা কিছু সম্বল ছিলো সবই বানের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। সর্বস্তরের জনগণ নগদ টাকা এবং ত্রাণ দিয়ে নানান ভাবে সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছেন। আপনাদের এতো প্রাচুর্য থাকার পরও কেনো এগিয়ে আসছেন না।

পরক্ষণেই তিনি ক্ষাণিক চুপ থাকলেন---

আমি বললাম যারা ধনাঢ্য পরিবার, তাদের কি কোনো দায় নেই? তারা তো আমাদের সমাজের অংশ। তারাই তো আমাদের জন্য দিনমজুরি করে। আমাদের সুখের জন্য শরীরে ঘাম ঝরায়। অট্টালিকা তৈরী করতে আঘাত প্রাপ্ত হয়। একটু ভালো ভাবে বাঁচার জন্য প্রতিনিয়ত নানান সংগ্রামের মধ্যে ওরা বড় হচ্ছে। 

বারবার ধনাঢ্যদের কাছে স্মরণাপন্ন হচ্ছে। কেবলমাত্র দু'মুঠো ভাত এবং বছরে একটি নতুন কাপড় পরিধানের জন্য জন্মান্তর ধরে ওরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যাচ্ছে। তাতে ও আবার কেউ কেউ সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন।

যদিও আজ আমার কথা গুলো আপনার অপ্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে, তবুও বলবো। একটু সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিন। এতে বিলাস বহুল জীবনে একটুও ভাটা পড়বে না। এ কথা শোনার পর অনুধাবণ করতে লাগলাম, তিনি আমার কথা শুনে বিব্রতবোধ করছেন।

বললাম বন্ধুগণ,,, আমি উঠি,,, 

ছেলেমেয়েরা আসার সময় হলো। আমার সাথে থাকা অন্য বন্ধু ও একই কথা বললেন--

বেরিয়ে এসে আমার এক বন্ধু বললো, আর কখনো এ বাসায় আসবো না। অহংকারী মানুষ আমার মোটেই পছন্দ না।

আমি বললাম শোনো-

উনার মনমানসিকতা খুবই ক্ষীণ, উনার মাঝে মানবতার জন্ম হয়নি’’!

আসলেই ছোট বেলায় শুনেছিলাম ‚‚যার ধন আছে, মন তার নেই‚‚ "আর যার মন আছে, তার ধন থাকে না । আমার বান্ধবীর চালচলনে সে কথাটি মনে হলো।

মহান আল্লাহ তায়ালা সিলেট সহ সমস্ত দেশবাসী কে বন্যার কবল থেকে হেফাজত করুন। -------আমিন।

----------০---------