আদিপিতা আদম আ: থেকেই রোজার সূচনা

আদিপিতা আদম আ: থেকেই রোজার সূচনা

ওলিউর রহমান খান 

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে,যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর;যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হতে পারো’।(সুরা বাকারা:১৮৩)পরবর্তিতে উম্মতে মুহাম্মাদির উপর রোজাকে ফরজ করা হয়। 

হযরত আদম আ.-এর রোজা

সৃষ্টি জীবের মধ্যে সর্ব প্রথম রোজা রাখেন হযরত আদম আ.। হযরত আদম আ. প্রত্যেক মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতেন।
আল্লাহ  বলেছিলেন গন্ধম ফলের নিকট যেও না কিন্তু শয়তানের কুমন্ত্রণায় তিনি গন্দম ফল ভক্ষণ করায় আল্লাহ তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেন। তিনি আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে লাগাতার ৪০দিন বা ৩০ দিন রোজা রাখেন। আর এটিই ছিল ইসলামের প্রথম রোজা। (কানযুল ওম্মাল ৮ম খণ্ড২৫৮ পৃষ্ঠা:২৪১৮৮)

হযরত নুহ আ.-এর রোজা

হজরত নুহ আ. ছিলেন পৃথিবীর প্রথম রাসুল। তিনি সাড়ে নয়শত বছর বেঁচে ছিলেন। এসময় তিনি আল্লাহ ভোলা পথ ভ্রষ্ট মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতেন। তার যুগেও রোজা ছিল। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ব্যাতিত সারা বছর রোজা রাখতে হত।হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বর্ণনা করেন রাসুল সা. বলেছেন ‘হযরত নুহ আ. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন বাদ দিয়ে সারা বছর রোজা রাখতেন। (ইবনে মাজাহ:১৭১৪)

 

হযরত ইদ্রিস আ.-এর রোজা

হযরত ইদ্রিস আ. ছিলেন হযরত নুহ আ. এর পূর্বসূরি। ইসলামি ইতিহাস অনুসারে তিনি মানবজাতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত তৃতীয় নবী।

হযরত ইদ্রিস আ.ও রোজা পালন করতেন। আল্লামা নিশাপুরী রহ. বলেন, হজরত ইদ্রিস আ. সারা জীবন রোজা রেখেছিলেন। (আল আরাইশ:৩৭৩৮পৃষ্ঠা)

 

হযরত সুলায়মান আ.-এর রোজা

হজরত সুলায়মান আ. ছিলেন একজন নবি ও প্রতাপশালী বাদশাহ। তিনি বর্তমান ফিলিস্তিন ভূখণ্ড শাসন করেছেন। তিনি প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোজা রাখতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হযরত সুলায়মান আ. মাসের শুরুতে তিন দিন,মাসের মধ্যভাগে তিন দিন ও মাসের শেষ ভাগে তিন দিন (মাসে ৯ দিন) রোজা রাখতেন।(কানযুল ওম্মাল অষ্টম খন্ড:২৪৬২৪)

 

হযরত ঈসা আ.-এর রোজা

হযরত ঈসা আ. ছিলেন মারইয়াম আ.-এর সন্তান। আল্লাহ তাকে জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। কিয়ামতের পূর্বে তিনি আবারও পৃথিবীতে আগমন করবেন। দাজ্জালি ফিতনার সাথে লড়বেন। তিনি সর্বদাই রোজা রাখতেন।কখনোই রোজা ভঙ্গ করতেন না।হাদিসে এমনই বর্ণিত হয়েছে। হযরত ঈসা আ. সবসময় রোজা রাখতেন,কখনও রোজা ছাড়তেন না। (সহিহ মুসলিম:১১৮৯)

 

হযরত দাউদ আ.-এর রোজা

হযরত দাউদ আ. ছিলেন একজন নবি ও আদর্শবান শাসক।কোরআনে ষোলবার তার আলোচনা এসেছে। তার উপরও রোজা ফরজ ছিল। তিনি একদিন পর পর রোজা রাখতেন। হাদিসে এসেছে যাবুর কিতাব অবতীর্ণ হয় হযরত দাউদ আ. এর উপর। তিনি একদিন পর পর রোজা রাখতেন। (সহিহ মুসলিম:১১৮৯)

 

হযরত মুহাম্মাদ সা.-এর রোজা

হযরত মুহাম্মাদ সা. হলেন শেষ নবি। পূর্বেকার নবিদের উপর যেমন রোজা ফরজ করা হয়েছে তেমনি নবী সা.-এর উপরেও রোজা ফরজ করা হয়েছে। শরিয়তে একজন মুসলমানের উপর নামাজ যেমন ফরজ তেমনি রমজানে ত্রিশটি রোজাও ফরজ। আর উম্মতে মুহাম্মাদীর রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে প্রদান করবেন।দ্বিতীয় হিজরিতে মুসলমানদের উপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে। 

হানাফি মাযহাবের অন্যতম প্রধান গ্রন্থ আদ-দুররুল মুখতারে বর্ণিত হয়েছে ‘দ্বিতীয় হিজরিতে শাবান মাসের ১০ তারিখে রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে। (আদ-দুররুল মুখতার,৩য় খণ্ড,৩৩০পৃষ্ঠা)