হিম রাজার তিন কন্যা
রহমান মিজানুর "
হিমালয়ে হিম রাজার তিনজন রাজকন্যা
ছোটটি মেঘ; বৃষ্টি মেঝো; বড়টির নাম বন্যা।
ভিনদেশি এক রাজপুত্রের বজ্র ছিলো নাম,
শৌর্যবীর্যে তুলনাহীন; সুদর্শন সুঠাম।
যুদ্ধনেশায় উম্মাদপ্রায় রাজ্যজয়ের আশা
খেলতো মাথায় সর্বক্ষণ চিন্তা সর্বনাশা !
এহেন এক রাজপুত্রের ভবিষ্যৎ কি হবে
ভাবেন পিতা, পুত্রটি তার শান্ত হবে কবে?
বসলো রাজা রুদ্ধদ্বারে দরবারীদের নিয়ে
দরবারীগন বললো, হুজুর, দেন করিয়ে বিয়ে।
ভাল বুদ্ধি, তাই করবো, পাত্রীর খোঁজ করো
বিশ্বসেরা ঘটক যারা, তাদের আগে ধরো।
পাত্রী কিন্তু হতে হবে রূপে গুণে রাণী
একনজরেই মন যেন হয় আগুন থেকে পানি!
অনেক খুঁজে পাওয়া গেল হিম রাজার কন্যা
সর্বগুনে গুণান্বিত রূপেও সে অনন্যা।
নানান খ্যাতি বন্যার ছড়াচ্ছিলো দ্যুতি
শুনে রাজা মনে পেলেন সুখের অনুভুতি।
এই মেয়েকেই দেখ বজ্র, বাজুক বিয়ের সানাই
বন্যাই হোক পুত্রবধূ, আজ তোমাকে জানাই।
পিতার আদেশ, পঙ্খীরাজে রাজপুত্রের বেশে
বজ্র গেল তীরের বেগে হিম রাজার দেশে।
রাজপ্রাসাদে বাগান জুড়ে হরেক জাতের ফুল
তিন কন্যা হেথায় বসে আড্ডাতে মশগুল।
হঠাৎ করে সামনে তাদের বজ্র হাজির হলে
চক্ষু তাদের ছানাবড়া, পালালো সদলে।
আড়াল থেকে অবাক চোখে তাকায় বারে বারে
কান্তিময় এ যুবা পুরুষ, কেইবা হতে পারে?
বজ্রওতো একটা ঝলক দেখেছিলো তাদের,
আহারে; তিন কন্যা যেন তিন টুকরো চাঁদের !
বড় মেয়ের শান্ত মুখে জ্যোৎস্না কিরন মাখা
ছোট দু'জন আগুন পরী, নাই শুধু যে পাখা!
বজ্র আসার হেতু জেনে আনন্দে হিম রাজাও
হুকুম দিলো গোটা রাজ্যে, সুখের বাদ্য বাজাও।
বললো, বাবা- বন্যাকে কি করতে চাও বিয়ে?
বন্যা মা'ও থাকতে রাজী তোমায় সঙ্গে নিয়ে।
বজ্র ভাবে, সন্দেহ নাই রূপবতী বন্যা
তারও চেয়ে টানছে যে মন অন্য দু'টি কন্যা!
ক্রুর হেসে বললো বজ্র, আগ্রহী মেঘ বৃষ্টিতে
সুখ পাই আমি নজিরবিহীন ইতিহাস সৃষ্টিতে।
মেঘ বৃষ্টি দুই বোনকেই সাজিয়ে দেন কনে
আমি বিয়ে করতে রাজী, একাই তাদের সনে।
হিম রাজা হতভম্ব, পায়না খুঁজে ভাষা,
একি কথা বলছে বজ্র, বড়ই সর্বনাশা !
ধমক দিলো, খামোশ বজ্র- বলছো কথা হুঁশে?
রাজপুত্র, তাই দেবে কি মান ধূলায়ে মিশে!
কয়েদ করো, হুকুম দিলো ভীষন রেগে রাজা
এটাই হবে বেয়াদবির উপযুক্ত সাজা।
সাস্ত্রী সেপাই ধরতে তাকে আসছিলো যেই ছুটে,
মুখোশ খুলে ভদ্রলোকের, বজ্র দাঁড়ায় উঠে।
খাপ থেকে এক টান দিয়ে যেই তরবারীটা নিলো
আকাশ ফেটে অগ্নি জিহ্বা ঝিলিক দিয়েছিলো।
সবেগে সে হানলো আঘাত হিম রাজার ঘাড়ে
প্রবীন রাজা; বজ্রের আঘাত কেমনে সইতে পারে !
জমির উপর লুটিয়ে পড়ে রাজা হলো হত
পালিয়ে গেল লোক-লস্কর কাপুরুষের মতো।
হাঁকলো বজ্র, তোমরা কোথায়- মেঘ বৃষ্টি এসো
ইচ্ছায় বা অনিচ্ছাতেই, পঙ্খীরাজে বসো।
দুই বোনকেই করবো বিয়ে, একসাথে একদিনে
নাহয় ভাল থাকবোনা যে; মেঘ বৃষ্টি বিনে।
বজ্রের সেই ভয়াল মূর্তি দেখে দু'বোন ভয়ে
অনিচ্ছাতেও হলো রাজী, অসীম কষ্ট লয়ে।
তাদের নিয়ে পঙ্খীরাজে বজ্র দিলো উড়াল
দু'বোন ভাবে নিজের পায়ে মারছেনাতো কুড়াল?
এদিক বন্যা বসে আছে পাগলিনীর বেশে
বুকের মাঝে পুড়ে অঙ্গার; জ্বলছে আগুন তুষে।
অশান্ত আজ শান্ত মনে তুমুল ঝড়ের ঝাপটা
রাজার চেয়েও অধিক প্রিয় ছিল যে তার বাপ টা!
দুই বোন তার নয়ন মনি; কলিজার দুই অংশ
বজ্র নামের রাক্ষস তার শেষ করেছে বংশ।
রক্ত মাথায় চড়ে গেল প্রতিশোধের খেয়ালে
নেবেই নেবে বদলা সে, পিঠ ঠেকেছে দেয়ালে।
অসহায়া কন্যা যখন অপমানে নিঃস্ব-
কি ভয়ানক হতে পারে দেখবে এবার বিশ্ব !
শক্ত হলো, হার মানতে বন্যা রাজী নয়
সব হারিয়ে সর্বহারা, নেই হারানোর ভয়।
যেমন করে বিষাক্ত সাপ ছোবলে বিষ ঢালে
সেও ঢালবে ধ্বংসের বিষ, অত্যাচারীর গালে।
রিক্ত তাকে করলো যারা; মারবে তিলে তিলে
মেঘ বৃষ্টি থাকবে সাথে, যুদ্ধ তিনে মিলে।
সেদিন থেকেই হলো শুরু জীবন মরন যুদ্ধ
করবে কে আর সমঝোতা, পথতো সবই রুদ্ধ।
তিন বোনের এক পক্ষ এদিক, বজ্র আরেক পক্ষ
কেউ কারো'চে কম যায় না, ধ্বংসে সবাই দক্ষ !
মেঘ বৃষ্টির কানে কানে বন্যা দিলো মন্ত্র
ছড়িয়ে গেল জটিল কুটিল প্রাসাদ ষড়যন্ত্র।
বাইরে থেকে চতুর্দিকে বন্যা ধরে ঘিরে
বজ্রের বুক ফালাফালা করতে সে চায় চিরে।
টের পেয়ে যায় বজ্র যখন, আগুনের তীর ছুঁড়ে
ঝলকানিতে শত্রুদলের মুখ যেতে চায় পুড়ে।
কি যে বিকট শব্দ সাথে, বুকে কাঁপন জাগায়
লক্ষ্যে যেতে তিনটি বোন দৃঢ় চিত্তে আগায়।