আশা জাগিয়েও হার এড়াতে পারল না বাংলাদেশ

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

পুঁজি মাত্র ২০৯ রান। হাল জমানার ওয়ানডে ক্রিকেটে এই রান মোটেই নিরাপদ নয়। বলা যায় হারকে মেনে নিয়েই বোলিং করতে নামা। তারপরও যদি বল হাতে বোলাররা অবিশ্বাস‌্য ভালো কিছু করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে চিত্রনাট‌্য পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাংলাদেশের বোলাররা সেই চিত্রনা‌ট‌্য বদল করতে পারেননি। কিন্তু সহজে জিততে দেয়নি ইংল‌্যান্ডকে।

আসলে চিত্রনাট‌্য বদল করতে দেননি ডেভিড মালান। এক প্রান্তে বাংলাদেশের বোলাররা উইকেট নেওয়ার মিছিলে শামিল হলেও অপরপ্রান্তে মালানকে আর আউট করতে পারেননি। ফলে ম‌্যাচও জেতা হয়নি। তাদের অসাধারণ বোলিংয়ে কয়েকবার ম‌্যাচের বাঁক বদল হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত ইংল‌্যান্ড জিতলেও তাদের টেনশনের পারদ বাড়িয়ে দিয়ে তবেই জয় পেতে হয়েছে ৩ উইকেটে।

বাংলাদেশের ২০৯ রানের মামুলি সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে ইংল‌্যান্ডকে হারাতে হয়েছে ৭ উইকেট। ওভার খেলতে হয়েছে ৪৮.৪টি। মালান শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১১৪ রান করে।

বাংলাদেশের ঝড়ো সূচনার পরও ইনিংস ২০৯ রানে আটকে যায়। পুরো ৫০ ওভারও খেলা সম্ভব হয়নি, তখনই কিছুটা বোঝা গিয়েছিল পিচ তার চরিত্র বদল করেছে। ইংল‌্যান্ডের ইনিংসের শুরুতে সেই বদলে যাওয়া চিত্রটি বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠে।

বদলে যাওয়া পিচের সুবিধা নিতে অধিনায়ক তামিম ইকবাল স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। তার ফায়দাও তুলে নেন প্রথম ওভারেই জেসন রয় ফিরে গেলে। সাকিবের বলে মিড অনে তার সহজ ক‌্যাচ ধরেন তামিম।

এমনিতে উইকেট পেলে গ‌্যালারিতে উল্লাসের জোয়ার বয়ে যায়। সেই উইকেট ছিল আবার ইনিংসের শুরুতে। টার্গেট আবার যেখানে কম। জয় পেতে হলে বা লড়াই করতে হলে শুরুতে এরকম একটি ধাক্কা দেওয়ার ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তাই সাফল‌্য আসায় দর্শকদের উল্লাসের মাত্রা ছিল একটু বেশি। এই বেশির কারণ ছিল কিন্তু আরেকটি। আর তা হলো সাকিবের বলে তামিমের ক‌্যাচ ধরা। বাংলাদেশ এই ম‌্যাচ খেলতে নেমেছিল বিসিবি সভাপতি কর্তৃক সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব প্রকাশ করার মাথাভারী দায় নিয়ে। এসময় অনেকেই ঠাট্টা করে বলাবলি করছিলেন এই ক‌্যাচতো তামিমের ধরার কথা নয়!

অপরপ্রান্তে তাসকিন উইকেট না পেলেও উইকেটে ব‌্যাটারদের আটকে রাখতে পেরেছিলেন। ৬ ওভার পর দুই প্রান্ত দিয়েই তামিম স্পিন আক্রমণ শুরু করেন। একপ্রান্তে তাইজুল, অপরপ্রান্তে মিরাজ। মিরাজ রান চেক দিতে পারলেও তাইজুল পারছিলেন না। কিন্তু তিনি কাজের কাজটি করেন তার ৫ ওভারের প্রথম স্পেলে ২ উইকেট তুলে নিয়ে। ৩০ রান দিয়ে তিনি একে একে আউট করেন ফিল সল্ট ও ভিন্সকে। সল্টকে (১২) নোনা স্বাদ দেন বোল্ড করে। ভিন্সকে (৬) স্টাম্পিং করেন মুশফিকুর রহিম। ইংল‌্যান্ডের রান ১২.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৪৫।

৩ ওভারের প্রথম স্পেলে মাত্র ৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকা তাসকিন দ্বিতীয় স্পেলে এসেই প্রথম বলে অধিনায়ক জস বাটলারকে (৯) ফিরিয়ে দিয়ে খেলায় বাংলাদেশকে শক্তভাবে ফিরিয়ে আনেন। তাসকিনের গতিতে পরাস্ত হয়ে প্রথম স্লিপে ক‌্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্তকে। ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ইংল‌্যান্ড তখন বেশ চাপে।

ডেভিড মালান ও উইল জ‌্যাকস জুটি বেঁধে দলকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা চালান। এসময় তারা সাকিব, তাইজুল, তাসকিন, মিরাজের বল মোকাবিলা করে উইকেট পড়তে দেননি। জুটি টিকে যাওয়ায় তামিম ২১তম ওভারে আক্রমণে নিয়ে আসেন মোস্তাফিজকে। প্রথম ওভারেই তিনি উইকেট পেয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু উইল জ‌্যাকসের কঠিন ক‌্যাচ নিজে আর তালুবন্দী করতে পারেননি। জীবন পেয়ে উইল জ‌্যাকস এগোতে থাকেন মালানের সঙ্গে। জুটিও অনেকটা দাঁড়িয়ে যায়। ক্রমেই যখন বাংলাদেশের জন‌্য হুমকির কারণ হয়ে উঠছেন, তখনই আঘাত হানেন মিরাজ। দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়েই চতুর্থ বলে তিনি ফিরিয়ে দেন ৩১ বলে ১ ছক্কা ও ৩ চারে ২৬ রান করা উইল জ‌্যাকসকে। ছক্কা মারতে গিয়ে তিনি মিড উইকেটে আফিফের হাতে ধরা পড়েন।

জ‌্যাকস ফিরে যাওয়ার পর মঈন আলীকে নিয়ে মালান আবারও দাঁড়িয়ে যান। অবস্থা ভালো করে দলকে জয়ের রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার মতো রান (৩৮) যোগ করেন তারা। মিরাজ অসাধারণ এক ডেলিভারিতে মঈন আলীর (৩২ বলে ১৪ রান) স্টাম্প ভেঙে দেন। কিছুক্ষণ পর তাইজুল তার তৃতীয় শিকার ধরেন মিড অন থেকে দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে তামিম ইকবাল ক্রিস ওকসের ক‌্যাচ ধরলে (৭)। এসময় দলের রান ছিল ৩৮.৫ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬১। খেলায় আবার ফিরে আসে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের জন‌্য পথের কাঁটা হয়ে ছিলেন ডেভিড মালান। এক প্রান্তে উইকেট পড়ছে, আর অপরপ্রান্তে তিনি ছোট ছোট জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যেতে থাকেন। আদিল রশিদকে নিয়ে জুটি গড়ার পর আর কোনো উইকেট পড়তে দেননি।

এই দুই ব‌্যাটার যখন জুটি বাঁধেন, তখন ইংল‌্যান্ডের জয়ের জন‌্য প্রয়োজন ছিল ১১.১ ওভারে ৪৯ রানের। দুইজন সেই কাজটি করেন ১০ বল হাতে রেখেই। ২ ছক্কা ও ১ চারে ৯২ বলে মালান প্রথমে তুলে নেন ক‌্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। তাসকিনের বলে বাউন্ডারি মেরে ১৩৪ বলে ৪ ছক্কা ও ৬ চারে পূর্ণ করেন চতুর্থ সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত আর তাকে আউটই করা সম্ভব হয়নি। ১৪৫ বলে ৪ ছক্কা ও ও দ্বিগুণ চারে ১১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগের ম‌্যাচে তিনি করেছিলেন ১১৮ রান। তার সঙ্গে আদিল রশিদ অপরাজিত থাকেন ২৯ বলে ১ চারে ১৭ রান করে।

সেরা একাদশে ফিরেই তাইজুল ১০ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে নেন ৩ উইকটে। মিরাজ ১০ ওভারে ৩৫ রানে নেন ২ উইকেট। তাসকিন ২৬ ও সাকিব ৪৫ রানে ১টি করে উইকেট নেন।