গ্রহণ (৫ম পর্ব)

গ্রহণ  (৫ম পর্ব)

শামীমা আহমেদ

দীপিকার রাতের বেলা এই সময়টা মনের ভেতর কেমন যেন একাকীত্ব পেয়ে বসে। শাহেদকে ভীষণভাবে মিস করে। দীপিকা মোবাইলটা হাতে নিল। শাহেদের সাথে একটা যোগাযোগ হওয়া দরকার। সেদিনের পর আর কথা হয়নি। 

kemon acho? জানতে চেয়ে বার্তা পাঠালো দীপিকা।খুব ছোট্ট করে উত্তর এলো, valo.

miss u

দীপিকা সহমত জানালো।

hu me too..

এরপর শাহেদ নীরব। দীপিকা অপেক্ষায়।

মেসেজ এলো, kal kotha hobe.

যাক, দীপিকা আস্বস্ত হলো। শাহেদ মাইন্ড করে নেই। দীপিকা যেন একটা বিশাল ধকল কাটিয়ে উঠল! সে ঘুমের প্রস্তুতী নিলো।

শাহেদের ঘুম আসছে না। সারাদিনের পরিশ্রমের পর প্রতিদিন ক্লান্তির ঘুমে চোখ ভেঙে আসে। আজ দীপিকার মেসেজে ঘুমটা মিলিয়ে গেলো। চোখে দীপিকার মুখটা ভেসে উঠল! বহুদিনের চেনা এই মুখটাকে নিয়ে কত কত রাত যে কল্পনায় ভেসেছে। ছিপছিপে আর চাপা রঙের দীপকার জন্য শাহেদ কেমন যেন তীব্র একটা টান অনুভব করে। চলনে বলনে মার্জিত আচরণের দীপিকার সাথে শাহেদ যতই চলেছে দিন দিন যেন মুগ্ধতায় ওর প্রতি দূর্বল থেকেছে।

নিরহংকারী দীপিকাও এতটুকু বুঝতে দেয়নি তার অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে সেই কোচিং করতে গিয়ে দুজনার পরিচয়। বরাবরই গাড়িতে যাতায়াত দীপিকার। তারপর দুজন একই বিষয়ে পড়াশুনায় দীপিকা দিন দিন কেমন যেন আস্থা নির্ভরতায় শাহেদকেই খুঁজেছে। এই ক্লাস কখন, এই লেকচারটা একটু বুঝিয়ে দে, এরপরের টিউটরিয়ালটা কবে?নোটগুলো চল ফটোকপি করে আনি,,, একসাথে ক্যান্টিনে চা খাওয়া, হেঁটে হেঁটে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট যাওয়া,, কত শত স্মৃতিতে শাহেদের নির্ঘুম চোখ।খুব সুন্দর ছিল সেই দিনগুলি। ধীরে ধীরে দুজন পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠল। একদিন শাহেদ দীপিকাকে ওদের বাসায় নিয়ে এলো মা আর ছোট দুই বোনের সাথে পরিচয় করাতে। মা ভীষণ খুশি হলো! দীপিকার সাথে অনেক কথা বললো। মায়ের নানাবাড়ি আর দীপিকার দাদাবাড়ি একই গ্রামে। মা যেন একজন আপনজন খুঁজে পেলো। ছোট দুই বোন তখন কলেজে পড়ে। দীপিকাকে ওরাও খুব পছন্দ করলো। অতীত হাতড়ে শাহেদ সেই সোনালী দিনগুলিতে চলে গেলো। প্রতিরাতে ঘুমাতে গেলে দীপিকার ভাবনা। ক্যাম্পাসে যতক্ষণ ততক্ষণ দীপিকা। ফিরে আসার সময় দীর্ঘক্ষণ গল্প করে কাটানো।দীপিকাদের বাসায় ফোন দেয়া নিষেধ ছিল। দীপিকার বাবার কড়াকড়ি নিয়মগুলো দীপিকা আর শাহেদ খুব মেনে চলত।

অনার্স ফাইনালের আগে আগে এক সকালে দীপিকা বেশ মুখ ভার করে ক্যাম্পাসে এলো। শাহেদ অপেক্ষায় ছিল। সবকিছু শুনে শাহেদ যেন চারিদিক অন্ধকার দেখছিলো। দীপিকার বাইরে পড়াশুনার সব ঠিক হয়ে গেছে। আগামী একমাসের মধ্যেই নতুন সেমিস্টারে জয়েন করতে হবে। এখন নানারকম কাগজপত্রের ব্যস্ততা। ক্লাসে আর সেভাবে আসা হবে না। তাছাড়া এই ডিগ্রীওতো কোন কাজে আসবে না। এরপর অতি দ্রুতই অনেক কিছু ঘটে যেতে থাকল। শাহেদ এর চেয়ে বেশি আর ভাবতে চায় না। এরপরের অধ্যায়ের ঘটনাগুলো কিছুই দুজনার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। শাহেদ পাশ ফিরে ঘুমালো। লাবনী গভীর ঘুমে। সারাদিন সংসার নিয়ে তার তুমুল ব্যস্ততা। আর ছোট্ট শায়ান সেও মাকে কম অস্থির করে তুলে না। শাহেদ মোবাইলে সময়টা দেখে নিল। রাত একটা। ঘুমিয়ে পড়তে হবে। সকালে অফিস।

চলবে....