নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে,আশা সিইসি’র

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেলিগেশন ও রাষ্ট্রদূতদেরকে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নিজেদের অবস্থানের কথা জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন, ‘মতপার্থক্য ভুলে সব দল নির্বাচনে আসবে বলেই আমরা আশা করছি।’

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) ইইউ ডেলিগেশন ও রাষ্ট্রদূতরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা সিইসির কাছে ভোটের সার্বিক প্রস্তুতির খবর জানতে চান।

এর আগেও গত বছর জুলাইতে তারা একবার কমিশনে গিয়ে নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে।

বুধবারের বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচন বর্ষে উপনীত হয়েছি। তাই উনারা পুনরায় মতবিনিময় করতে এসেছেন। মূলত আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি কেমন, তা জানতে এসেছিলেন।’

প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছে সব দল নির্বাচনে আসবে কি না, ইভিএমের উপর দলগুলো আস্থা রাখছে কি না? কাজী হাবিবুল আউয়াল তাদের এসব প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন এবং নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানান।

চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।

ইইউ প্রতিনিধি দলকে কী বলেছেন জানতে চাইলে সিইসি হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করি যে অচিরেই মতপার্থক্যটা দূর হয়ে যাবে। শেষমেষ সবদল নির্বাচনে আসবে, সে বিষয়ে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছি, তবে সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করে। আমরা বলেছি যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়, তাহলে চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে।’

তবে ইসি আবারও জানিয়েছেন, যা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য, তা দূর করার ক্ষেত্রে ইসির কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। তিনি মনে করেন, এক্ষেত্রে দায়িত্ব দলগুলোকেই নিতে হবে। তবে তারা আবেদন জানিয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ইস্যুগুলো, যেগুলো নির্বাচনের জন্য অন্তরায় হতে পারে, সেগুলোর সুরাহা রাজনৈতিক নেতাদের করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো সেটা অনুধাবন করতে হবে এবং বুঝতে হবে। তাদেরকেই সেটা অসুখ নিরাময় করতে হবে। তাহলেই নির্বাচনটা প্রত্যাশিত মাত্রায় অংশগ্রহণমূলক হবে।’

সিইসি জানান, ইভিএম নিয়ে ইইউ প্রতিনিধিদের প্রশ্ন ছিল-এটা নিয়ে অবিশ্বাস আছে কি না? তাদের জানানো হয়েছে, ইভিএম নিয়ে যে অবিশ্বাস ছিল তা অনেকটা কেটে গিয়েছিল। তবে এটাও জানিয়েছি যে ইভিএম নিয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না। আমরা কী পরিমাণ নির্বাচন ইভিএমে করতে পারব, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আমরা উপনীত হইনি।

বৈঠকে ভোটার তালিকা, সংসদীয় আসনের সীমা পুননির্ধারণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উদ্যোগসহ সার্বিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমাদের বর্তমান অবস্থানটা পরিষ্কার করেছি এবং আমরা জানিয়েছি যে আমরা প্রস্তুত। আমাদের রোডম্যাপ অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে এবং আমরা যথাসময়ে নির্বাচন করব।’

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে কথা জানিয়ে সিইসি তাদের বলেন, গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকরা যেভাবে আগে কাজ করেছিলেন, আগামীতেও সেভাবে কাজ করবেন। আমাদের তরফ থেকে কোনো অন্তরায় থাকবে না। ফরেন অবজারভার সম্পর্কে আমাদের একটা পলিসি আছে। তারা আমাদের কাছে আবেদন করবেন। আমরা সেটা পাঠিয়ে দেব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কারণ বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়ভাবে সুরাহা হতে হবে।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘জেনেছি যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিদেশি পর্যবেক্ষকে এলাউ করবেন। কারণ একটা ব্রিটিশ এমপি ডেলিগেশন উনার সঙ্গে মিট করেছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী সে আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমরাও এতে আনন্দিত, যে বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও যদি এসে আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে, গ্লোবালিও দেখবে আমাদের দেশের নির্বাচনটা সুন্দর, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

বৈঠক শেষে ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি বলেন, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায়। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে ইতিবাচক।

নির্বাচন কমিশনের কাজ এবং অগ্রগতিতে প্রযুক্তিগত এবং পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আরও আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এক প্রশ্নে হোয়াইটলি বলেন, ‘সবাই চায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তাই আমরা ইসির কাছে কোনো সুপারিশ করিনি। তারা তাদের কাজ করবে।’