পরীদের গল্প

পরীদের গল্প

কামরুন নাহার 

রাতের নববী কাত হয়ে শোয় 

বিড়ম্বনার তোড়ে

সকল বতর্ক সিকায় তুলে

হাসে বিদ্রূপ হাসি।

বিশাল ভুলের মাতাল রাজ্যে

শরীর নিয়ে উপহাস! 

নীতিবোধ আর মূল্যবোধের

স্তাবক শোনায় ধৃতরাষ্ট্র। 

ভিস্ম হাসে, সদাই সে হাসে

কর্তব্য তার কাঁধে

ন্যায় অন্যায় ব্যাপার নয়

সাম্রাজ্য বাঁচাতে হবে।

ব্যাভিচার যখন ছাপিয়ে ওঠে

বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে । 

লীলার খেলা শুরু হয় তখন

যেন হঠাৎ করেই, 

তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর ভুলের থেকে

জেগে ওঠে এক রণক্ষেত্র। 

শত রমণী মাঠে ঘাটে, নর্দমায় পড়ে থাকে-

ধর্ষিতা, মৃত লাশ হয়ে। 

তার ভয়ার্ত চিৎকারে শকুনের থাবা তবু থাকে না থেমে।

সে চিৎকার বিচার ব্যবস্থার দ্বারে কখনো পৌছোয় না।

এক নারীর শ্লীলতাহানীর থেকে

যেমন শুরু হয় কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ 

যেখানে নীতিবোধ হয় গল্প। 

 

তাকে বাঁচাতে কিংবা ধর্মের খাতেরে দেখি কৃষ্ণের চটুলতা।

আর নেতারা চুপচাপ বসে দেখে যান পুরোটা খেলা।

পরীদের যুদ্ধে ধ্রুপদী নায়িকা নন। 

কিন্তু ধ্রুপদীদের যুদ্ধে

নায়ক হয়ে থাকেন অর্জুন। 

কৃষ্ণ হন বান্ধব। 

শৃক্ষন্ডী হন প্রতিশোধের অগ্নিকন্যা। 

পরীদের যুদ্ধ কুৎসা হয়ে আরও কুৎসিতভাবে ধামাচাপা পড়ে যায়।

ধ্রুপদীরা ধর্মের মায়াজালে হয়ে ওঠেন অমলিন, নির্মল ও পবিত্র।

কিন্তু পরীরা হয়ে ওঠেন অস্পৃশ্য। 

এ সমাজ ব্যবস্থায় ঘৃণ্য।

এ পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতা বড়ো বর্বরের মতো পরীদের পায়ে দলিয়ে যান।

আর পরীরা রুচিহীনতার, পদস্খলনের, নীতি হীনতার, এক ঘৃণ্য পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকেন এ সমাজে।

তবুও এ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যেন মাথা হয়ে 

এই নারী সমাজেরই আশ্রয়দাতা হিসেবে

নিজেদের কি জটিল বিজ্ঞাপনই না দিয়ে থাকেন।

আর আমরা নারী সমাজ অত্যন্ত সুখী মনে কায়মনোবাক্যে হাস্যজ্জ্বল মুখাবয়বে সব কিছু বুঝেও নির্বাক হয়ে থাকি।

কেননা এ সমাজ এখন ও বিশ্বাস করে 

নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ।

আর তাই পরীরা হারিয়ে যান খুব নির্মমভাবে। 

সহসাই তাদের মুছে দেয়া যায় এ পৃথিবী থেকে।

তবে বাস্তবতায় 

রাজ্য পরিচালনায় ভিষ্ম নেই 

আছে ঝাঁসীর রাণী লক্ষীবাঈ।

তাই প্রশ্নটা রয়ে যায় বাবেবার!!!

এবারও কি এ মানবিকতার যুদ্ধে হেরে যাবে মানুষ!

আর জিতে যাবে এ বর্বর পৌরষিকতা?