বঙ্গবন্ধু আর নয় অভিমান
মো: মনিরুজ্জামান সিদ্দিকী
নভোলোকে নক্ষত্র গুনে দেখা হয়নি আজও
পঙ্খীরাজে চড়ে এলোকেশী রাজকুমারীর
চাঁদমুখের হাসি দেখা হয়নি স্বপ্নেও
কচু পাতার উপর সর্বনাশী হাওয়ায়
দু-ফোঁটা স্থির জল হয়ে থাকা হয়নি কখনো;
নচিকেতার নীলাঞ্জনা, প্রেমিক মনের কল্পনায়
আঁকা হয়নি কবিতার খাতায় আজও!
বুকে সাহস নিয়ে, মনের বদ্ধ দুয়ার খুলে ...
শুভ্র বরফের বসন জড়িয়ে, দেখা হয়নি হিমালয়।
তবুও দূর নীলিমায় শুভ্র সফেন মেঘে দেখেছি
আত্মবিশ্বাসী, স্বপ্ন ফেরিওয়ালা বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়মুখ।
দখিনা হাওয়ায় ভেসে ভেসে কানে আসে
৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেয়া তোমার ভাষণ,
সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর স্বপ্ন ছোয়া জাগরণে
জীবনের স্বপ্ন বিসর্জন দেয়া দুঃসহ স্মৃতিময়
৪৬৮২ দিনের কারাবন্দি জীবনের গল্পকথা।
১০ই জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস
আবেগে ভাসা, দুরু দুরু বুকে -
হৃৎপিন্ডের প্রকোষ্ঠ থেকে ছুঁড়ে ফেলি হুংকারে
বাঁচা-মরার অক্সিজেন।
কন্ঠে ছোয়া আবেগ আর থরথর কাঁপা দেহ
প্রতিবাদের খেয়া সামনে এলেই
হয়ে যায় যেন মুখে ঠুলি আটা শবদেহ!
প্রেয়সীর হাতে হাত রেখে কাশবনে
কখনোবা শিউলি তলে বিষণ্ন বৃষ্টিতে ভিজে
স্বদেশপ্রেমে উদ্বেলিত অন্তর্মুখী এ মন।
কোথায় আজ ভাষা আন্দোলনের শহীদান করা
সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত?
অগুনতি সাহসী শিক্ষক, ডাক্তার, সাংবাদিক ও সৈনিক,
স্বাধীনতার বিরহে রকিবুল হাসানের ব্যাটে লেখা 'জয়-বাংলা' শ্লোগান!
অন্তরে যদি থাকে মানবতা, নির্মোহ ভালোবাসা
জর্জ হ্যারিসন নামটি শুনেছো কি কখনো?
জনপ্রিয় গায়ক, গিটারে বাঁধা মন-প্রাণ
ম্যাডিসন স্কোয়ারে মানবতার ঝড় তোলা সুরে -
হাহাকার বুকে বাজে গান "বাংলাদেশ...বাংলাদেশ",
কিম্বা স্বাধীনতা যুদ্ধে বিদেশী বীর প্রতীক প্রাপ্ত
অস্ট্রেলীয় উইলিয়াম ওডারল্যান্ড!
জ্ঞাতি-গুষ্ঠি ভাই, স্বদেশজাত হায়েনার রক্তাভ থাবা
প্রতিবাদে কাঁধে কাঁধ রেখে বলে
ভয় কি সংগ্রামী সাথী ?
আমরাও আছি পাশে দুর্বার, দুর্গম এই পথচলা,
অন্যায় প্রতিরোধ করে ছিনিয়ে আনবো অধিকার;
অধিকার আদায়ে দৃঢ় মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী
যাদের যৌথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এদেশের মাটি,
কলঙ্কিত হয়েছেন দুই লক্ষ মা-বোন-প্রিয়তমা,
অতঃপর রচিত হয়েছে এক অমচোনীয় ইতিহাস।
এমন মানবতাবাদী, দুর্জয় এদেশেও আছে ...
আঁখি খুলে দেখোনি কো তারে,
দেখোনি শিশিরে ভেজা সবুজ ঘাসে -
রক্তের ছোপ-ছোপ লাল দাগ!
বোঝোনি জাতীয় পতাকায় আঁকা লাল-সবুজে
বেদনার কাব্য কথা;
আছো মশগুল ..., হাতে হাত, চোখে চোখ
নিরালায় সব জোঁক! প্রেয়সীর কাঁধে হেলে,
আনমনে দিন যায় স্বপনে ভেসে ভেসে একাকী।
গিটারের তারে যদি পরে তাঁর হাত
তারে তারে কথা কয় . সুরের ঝরনা বয়
স্বদেশভূমিতে কিম্বা বিদেশভূমিতে অবলীলায়;
মাতৃভূমির অপমানে ব্যাথাতুর হৃদয় তাঁর
তাই 'আইভেনিস' গিটারে তোলে প্রতিবাদের সুর
অপলক চেয়ে কান পাতে মোহিত মার্কিন দোকানী,
দেশপ্রমিক গিটারিস্ট যুবকের হুংকার -
" যে গিটারের জন্য আমার দেশ অপমানিত হয়,
আইয়ুব বাচ্চু সে গিটার দ্বিতীয়বার বাজায় না "।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও খুঁজে ফিরি তাই ...
নতুন প্রজন্মের দেশপ্রেমী এমন আইয়ুব বাচ্চুকে!
খুঁজে ফিরি .এক সাগর রক্তের বিনিময়ে,
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা ..
এমন দুর্জয় সালাম, রকিবুল, হ্যারিসন, ওডারল্যান্ড, বাচ্চু ...
লুকিয়ে আছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি হয়ে প্রেয়সীর রাঙা নরম ঠোঁটে।
কিম্বা ছলনাময়ীর উষ্ণ বুকে মাথা রেখে নির্বোধ -
তপ্ত কামনায়, কল্প বাসনার রোমান্টিক মুডে আধমরা হয়ে।
বঙ্গবন্ধু ঘুম ভেঙে ওঠো তুমি,
নয় আর অভিমান
তোমার দুর্জয়-দামাল ছেলেদের শিউলীতলে আজ
প্রেয়সীর আঁচলে স্তিমিত বুকের সাহস, শ্লোগান!
যেন ধূসর পান্ডুলিপির ক্ষয় ধরা বেসুরো গান।
আর একবার গর্জে উঠুক তোমার কন্ঠ ..
হাতে ধরা পাইপে উঠুক ধোয়া সুগন্ধময়,
ধমনীতে কম্পন উঠুক বেজন্মা দুর্নীতিবাজ-ঠকদের
নির্লিপ্ত, মৃতপ্রায় যুবাদের ধমনীতে আসুক -
রক্তের তির্যক আঘাত।
এ লজ্জা আর যে সয় না
না, সয় না আর!
যাতনায় ভরা হৃদয় বইতে পারে না আর .
গর্জে উঠুক আর একবার সেই বজ্র কঠিন হুংকার।
শিড়দাঁড়া খাড়া করে সোনার বাংলা গঠনে -
জেগে উঠুক আরো একবার বাংলা মায়ের সূর্য সন্তানেরা,
বঙ্গবন্ধু ভুলে যাও, ভুলে যাও সব অভিমান .
সব অভিমান.
ভুলে যাও তুমি বঙ্গবন্ধু,
ভুলে যাও . সব অভিমান।