বিদ্রোহী কবিতার গল্প
কামরুল ইসলাম বুলবুল।
১৯২১ থেকে ২০২১ খ্রিস্টাব্দ।
বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বীর্যশালী
এক কবিতা-- "বিদ্রোহী" __
এর শত-বার্ষিকী পূর্তি।'বিদ্রোহী' কবিতা
লেখার আগেই কাজী কবি হিসেবে
সর্বমহলে পরিচিত, আলোচিত।তবুও
সব কবির-ই কোনো একটি নির্দিষ্ট
কবিতা থাকে; যা তাঁকে পুরোপুরি ধারণ
করে, তাঁর ক্লাস বুঝিয়ে ও চিনিয়ে দেয়।
তেমনি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ক্লাস
ও মানস চিনিয়ে দিলেন 'বিদ্রোহী' কবিতা
দিয়ে।যেন ভেতরে-ভেতরে দৃঢ়-মানসে
এমন একটি কবিতা লিখতে উদ্বুদ্ধ
হন কাজী।সালটা ১৯২১, ডিসেম্বর
মাসের শেষ সপ্তাহের একটি সোনালি নিশি
বেছে নিলেন কবি।ঐ এক রাত্রিতে রচে
নিলেন বাংলা কবিতার ইতিহাসের সবচেয়ে
শ্রেষ্ঠ ও সর্বশ্রুত এক কবিতা।তার ইতিহাস
-আলেখ্য আমরা তাঁর বন্ধুসম অভিভাবক
কমরেড মুজফফর আহমদের কাছ থেকে
জেনে নিই।তাঁর স্মৃতিকথায় এভাবে বলেছেনঃ-
"সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে এসে
আমি বসেছি এমন সময়ে নজরুল বলল,
সে একটি কবিতা লিখেছে।পুরো কবিতাটি
সে তখন আমায় পড়ে শোনালো।
" বিদ্রোহী" কবিতার আমিই প্রথম শ্রোতা।
আমার মনে হয় নজরুল ইসলাম শেষ
রাত্রে ঘুম থেকে উঠে কবিতাটি লিখেছিল।
তা না হলে এত সকালে সে আমায়
কবিতা পড়ে শোনাতে পারতো না।---
সে কবিতাটি প্রথমে পেন্সিলে লিখেছিল।
সামান্য কিছু বেলা হতে 'মোসলেম ভারতে'র
আফজালুল হক সাহেব আমাদের বাড়িতে
এলেন।নজরুল তাঁকেও কবিতাটি পড়ে
শোনালো।তিনি তা শুনে খুব হইচই শুরু
করে দিলেন, আর বললেন, 'এখনই
কপি করে দিন কবিতাটি, আমি সঙ্গে
নিয়ে যাব।' পরম ধৈর্যের সহিত কবিতাটি
কপি করে নজরুল তা আফজাল সাহেবকে
দিলো।তিনি এই কবিতাটি নিয়ে চলে গেলেন।
আফজালুল হক সাহেব চলে যাওয়ার পরে
আমিও বাইরে চলে যাই।
তারপরে বাড়িতে ফিরে আসি বারোটার কিছু
আগে।আসা মাত্রই নজরুল আমায়
জানালো যে, অবিনাশদা এসেছিলেন।
তিনি কবিতাটি শুনে বললেন, 'তুমি
পাগল হয়েছ নজরুল, আফজালের কাগজ
কখন বার হবে তার স্থিরতা নেই, কপি করে
দাও; 'বিজলী'তে ছেপে দিই আগে।'
তাঁকেও নজরুল সেই পেন্সিলের লেখা
হতেই কবিতাটি কপি করে দিয়েছিল।
১৯২২ সালের ৬-ই জানুয়ারি তারিখে
শুক্রবারে 'বিদ্রোহী' 'বিজলী'তেই
প্রথম ছাপা হয়েছিল। বৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও
কাগজের চাহিদা এত বেশি হয়েছিল যে,
শুনেছিলাম সেই সপ্তাহের কাগজ
দু'বার ছাপা হয়েছিল।".....