বাংলার বাঘিনিদের আজ শ্রীলঙ্কা ‘বধ’ মিশন

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বর্না আক্তারের মারা বিশাল এক ছক্কা ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার মারা সেই বিশাল ছক্কা গ্যালারিতে গিয়ে পড়ে। ক্রিকেটে ছক্কা মারা মামুলি ব্যাপার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হলে তো কথাই নেই। হরদম এ রকম এক একটি ছক্কা গ্যালারিতে গিয়ে আছড়ে পড়ে। কিন্তু স্বর্ণারটা ভাইরাল হওয়ার কারণ তিনি একজন নারী। তাও আবার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের।

যে ছক্কাটি তিনি মেরেছেন, তা ছিল অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। আসরটিও আবার আইসিসি প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে। মেয়েদের হাত থেকে এ রকম ছক্কা সচরাচর খুব একটা দেখা যায় না। তাই এক ছক্কাতেই স্বর্ণার বাজিমাত। তার এই ছক্কার সঙ্গে যোগ হয়েছিল আবার অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে হারানোর সুখ স্মৃতিও। বাংলাদেশ জিতেছিল ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। সব মিলিয়ে স্বর্ণা যেমন ভাইরাল হয়েছেন, তেমনি বাংলাদেশ দলকেও নিয়ে চলছে বন্দনা। এমন একটি রোমাঞ্চ মাখানো পরিবেশের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ দল আজ দক্ষি আফ্রিকার বেনোনিতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২ টায়।

সুপার সিক্সে যাওয়ার জন্য দুই দলের জন্যই আজকের ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শ্রীলঙ্কাও তাদের প্রথম ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল ৭ উইকেটে। আজকের ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশের সুপার সিক্সে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে যাবে। কারণ গ্রুপের শেষ ম্যাচ তারা খেলবে ১৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে।

বাংলাদেশের মেয়েরা যে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছে, এ খবর অনেকেই বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ে সবার সম্বতি ফিরে আসে। সবাই খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন। যে কারণে আজকের ম্যাচটি নিয়ে সবার মাঝে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়কে অনেকেই বাংলাদেশ দলের জন্য ‘অঘটন’ বলেই মনে করছেন। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচের দিকে ফিরে তাকালে এটিকে তখন আর কেউ অঘটন বলে মনে করবেন না। বাংলাদেশ ২টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে দুইটিতেই জয় পেয়েছিল। প্রথমে তারা ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ৭ রানে হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। পরের ম্যাচে ভারতকে হারিয়েছিল ৩ রানে। তারই ধারাবাহিকতা অধিনায়ক দিশা বিশ্বাসের সৈনিকেরা ধরে রাখতে পেরেছিলেন। এবার লঙ্কা ‘বধ’ পালা।

প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ২০ ওভার খেলতে দিয়ে ৯ উইকেটে মাত্র ৯৮ রানে আটকে রেখেছিল। জাতীয় দলের মারুফা মাত্র ১৩ রানে নিয়ে ছিলেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট নিয়েছিলেন অধিনায়ক দিশা বিশ্বাস ও দিপা খাতুন। বাংলাদেশ ছিল জয়ের পথেই। ১৪ ওভারে ৪ উইকেটে ৭২ রান করার পর বৃষ্টি আসলে পরে বৃষ্টি আইনে ম্যাচ জিতেছিল ৭ রানে। স্বর্না সেই ম্যাচে করেছিলেন ২০ রান। ১৯ রান করেছিলেন আফিয়া। মারুফার ব্যাট থেকে এসেছিল ১৪ রান।

দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচেও বাংলাদেশের বোলাররা নিজেদের সেরাটা মেলে ধরেন। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে ৭ উইকেটে মাত্র ১২১ রান করেও বোলারদের দাপটে ভারতকে ১১৮ রানে আটকে রাখে। অথচ ভারত উইকেট হারিয়েছিল মাত্র ২টি। এই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ভালো করতে না পারলেও স্বর্ণা এক প্রান্ত আগলে রেখে মাত্র ৪৮ বলে ৭ ছক্কা ও ২ চারে ৭৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসরের উদ্বোধনী ম্যাচেও বাংলাদেশের বোলাররা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব আবারও প্রদশর্ন করেন। এবার অস্ট্রেলিয়াকে আটকে রাখা হয় ৫ উইকেটে ১৩০ রানে। মারুফা ও দিশা ২টি করে উইকেট নেন। কোনো উইকেটে নিতে না পারলেও আটোসাটো বোলিং করেন রাবেয়া ও দিপা। এরপর ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই ওপেনার মিষ্টির সাহার উইকেট হারালেও আফিয়ার ২টি করে চার ও ছক্কায় ২২ বলে ২৪, দিলারার ৭ চারে ৪২ বলে ৪০, স্বর্ণার ১৮ বরে ১ ছক্কা ও ২ চারে অপরাজিত ২২ ও সুমাইয়ার ২৫ বলে ৫ বাউন্ডারিতে অপরাজিত ৩১ রান বাংলাদেশকে ২ ওভার বাকি থাকতেই সহজ জয় এনে দিয়েছিল।