বহুমত পথভ্রষ্টের সম্ভবনা বেশী

বহুমত পথভ্রষ্টের সম্ভবনা বেশী


--------আব্দুছ ছালাম চৌধুরী 

বহুমত আর বহুপথে চলতে গেলে পথভ্রষ্টের সম্ভাবনাই বেশী থাকে । আমিই ভালো কাজ করতে পারি কিংবা আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে শুধুই ভালো কাজ করবো—এই চিন্তা চেতনায় শততম রাজনৈতিক দলের প্রকাশ বহু আগেই বাংলাদেশে হয়ে গেছে। সেই একই ধ্যানধারনায় আজ আত্মপ্রকাশ করলো—
 "গণঅধিকার পরিষদ"
এই যে ড. রেজা কিবরিয়া ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হলো। তার কার্যক্রম কি? কিংবা তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কি? কোন্ আদর্শে বাংলাদেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবেন।
বলতেই চাই— 
বাংলাদেশের মানুষকে সুন্দর সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখাতে একে একে একশত বা তার অধিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে। 
এই একশত রাজনৈতিক দলকে যদি আমরা করে লক্ষ্য করে দেখি, তাহলে দেখা যায় একেকটি দলের আরও চার-চারটি পাঁচটি করে সংঘটন বা গ্রুপ আছে। 
আরেকটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,
আরও চার /ছয় ভাগে তারাও বিভক্ত। তাদের সবাইকে একত্রিত করলে এবং আরেকটু অংক কষলে দেখা যায় হাজার খানিক দল বাংলাদেশে ছাড়িয়ে যাবে বৈকি গেছে।

আমি নতুন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা করছি না। আমি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পিছনের দিকে ফিরে তাকালে দেখি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য ছিলো, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, সামাজিক মূল্যবোধ গণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা। 
প্রত্যেকটি দলই তার নির্দিষ্ট রূপ দেখায়, যে যেভাবে পারছে তার দাবি দাওয়া সরকার তথা জনগণের সম্মুখে তুলে ধরেছে। 
এখন সেই প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে আসে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের দাবীদাওয়া গণমানুষের অধিকার যদি পুনরায় সরকারের কাছে আহবান করা হয় এবং ফিরে এসে জনগণের সম্মুখে প্রকাশ করা হয়, তাহলে নতুন রাজনৈতিক দলের প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা কেনো। নিজে যদি কিছু করতে না পারেন, তাহলে ব্যর্থতা কাদের গাড়ে চাপাবেন। 
আমাদের সকল সমস্যার সমাধান কে করবে? প্রশ্নটা যদিও সহজ কিন্তু উত্তরটা খুবই জটিল।
সময় সুযোগ করে প্রায় সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে সামনে রেখে একটা ঐক্যমত প্রকাশ করেন। 
রাজনৈতিক জোট তৈরী করে ৭-১৪-২০ দলের মানে নতুন রূপরেখা প্রণয়ন করেন। 
একটা কমন প্লাটফর্মে সবাইকে দেখা যায়। যদি ভোটের মাঠে এক হতে পারেন তবে রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে এক হতে পারেন না কেনো? 
সহজেই বোধগম্য আমার দল বাদে সবাই— লুঠেরা। 
এই একই স্লোগান আপনারই একে অন্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন—চোর ডাকাত লুঠেরা সৈরাচার ইত্যাদি ইত্যাদি। 
আমরা সাধারন জনগন এই সকল টাইটেল নিজ থেকে আবিষ্কার করিনি, সেটা আপনারাই বলে বেড়াচ্ছেন বলেই বলি।
আরও বলেন যে— 
ক্ষমতা মানে টাকা কামানোর উৎস। কোটি টাকার মালিক হওয়া, গাড়ি বাড়ি বিদেশে অর্থ পাচার । 
অর্থাৎ— যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ। 

এই প্রসঙ্গটি শুধু গণ অধিকার পরিষদের বেলায় বলছি না। আমি বলছি প্রত্যেকের বেলায়। 
ইতিপূর্বে যতো দল যতো মত প্রকাশ হয়েছে, সেগুলো কোনো না কোনোভাবে নতুনরূপ দিতে চেষ্টা করেছেন। নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা মানুষের সম্মুখে উপস্থাপন করতে ও তারা দ্বিধাবোধ করেননি।
বাংলাদেশে রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় শক্তি হলো রাজনৈতিক দলগুলোকে রাস্তায় ঠিকে থাকা। 
যদি রাস্তায় টিকে থাকলে দেশ উন্নত হতো, তাহলে ঢাকা শহরে বিশ পার্সেন্ট মানুষতো রাস্তায় আছেই, যারা রাস্তায় থাকে। এভাবে প্রতিটি শহরে গননা করলে ১০/১৫ শতাংশ মানুষ রাস্তায় থাকে। 
সেইসব মানুষগুলো নিয়েই মাঠ গরম করেন!
না, তা আর হয় না—
কেনো হয় না?
ওরা দিনমজুর। 
আপনারা সবাই এদের কথা ভাবলেও সেইসব মানুষের সুদিন আর কখনো ফিরে না। তাদের সংসারে দু'বেলা দুমুঠো ভাত জোটে না।
----এবার আমরা একটু বহিঃবিশ্বের দিকে ঘুরে আসি, উন্নত দেশ বলে যাদের পরিচিতি আছে, তাদের হালহকিকত দেখে আসি। যদি আমরা সেইসব দেশের দিকে তাকাই, তবে দেখি বড়জোর তিন চারটি রাজনৈতিক দল সক্রিয় আছে। 
বিগত ৪০/৫০ বছর ধরে একটি মাষ্টার মাইন্ড বাস্তবায়ন করতে দিনরাত সবাই মিলে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আবার কোনো কোনো দেশে তো ১০০/১৫০ বছর ধরে ওই একই নিয়ম একই মাষ্টার প্লান বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
সরকার পরিচালনা পরিবর্তন হলেও মূলনীতি বাস্তবায়ন ভুল হয় না।
 --আমরা যতই রাজনৈতিক দল করি যতই মতাদর্শের অধিকারী হই না কেনো, আমাদের মূল প্লান থাকতে হবে এক অদ্বিতীয় । নতুবা বাংলাদেশ আরও ৫০ বছরেও উন্নত দেশের ধারে কাছেও যেতে পারবেনা। 
যেসব দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে  সেইসব দেশে তড়িৎ গতিতে উন্নতি লাভ করেছে। এটা পরিক্ষিত। 
পরিশেষে—
আমার একটি প্রশ্ন এতো মত এতো পথের কি বা দরকার আছে।
এভাবে যদি বারবার দেশের মানুষেরা রাজনৈতিক আদর্শগত নীতির পরিবর্তন করেন, তাহলে পথভ্রষ্ট ছাড়া আর কোন উপায় খোলা থাকে না। 
মনে রাখতে হবে তোমার পরে আরও আছে, ঘুমন্ত মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে তারাও একদিন এগিয়ে আসবে।