মার্চে সিলেটে হৃদয়ছোঁয়া একটি অনুষ্ঠান
মো: ফয়ছল আলম:
সামনে এক ঝাঁক টগবগে যুবক। যাদের বয়স ২০ থেকে ৪০। চোখে মুখে তারুণ্যের ছাপ। তন্ময় হয়ে শুনছেন তারা বক্তৃতা। আজ যারা বক্তৃতা করছেন তারা সাধারণ কোনো নেতা নন,কিংবা রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তি নয়। আজ তাদের পরিচয় ভিন্ন। তারা হলেন স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এক মুহুর্তের স্বাক্ষী।
যাদের বয়স এখন সত্তর এর উর্ধ্বে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষণ জন্মা পুরুষ। তারা হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের সাক্ষী । তারা ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শি। একারণে একের পর এক যখন সেদিনের ঘটনার প্রত্যদর্শীরা বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন যেন মনে হচ্ছিলো এই তো রেসকোর্স ময়দান। এই তো আসছেন বঙ্গবন্ধু,এইতো সেই লাখো জনতার সমাবেশ ।
যেখানে ক্ষণে ক্ষণে শ্লোগান উঠছে জয় বাংলা। তোমার ভাই আমার ভাই মুজিব ভাই মুজিব ভাই? বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো ~বাংলাদেশ স্বাধীন করো। । কিন্তু না। যারা বলছেন তারা দিচ্ছেন বর্ণণা। আর যারা শুনছিলেন তারা দেশের নতুন প্রজন্ম। এ যেন আরেক ঐতিহাসিক মুহুর্ত। গত রবিবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যার আয়োজন করেছিলো সিলেটে জেলা যুবলীগ।
যেখানে উপস্থিত ছিলেন সেদিনকার ৭মার্চের সমাবেশে উপস্থিত থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাদ উদ্দিন আহমদ। যিনি এখন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি।আরেক প্রবীণ শিক্ষাবিদ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যাপক গকম আলমগীর । বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক। যিনি ছিলেন সিলেটে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। আর অপর জন হলেন তোফাজ্জল হোসেন হেলাল। তাদের কে দেয়া হয় সম্মাননা। এই ৪জন ছাড়াও জেলা আওয়মীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা বেগম শামনুননাহার মিনুকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এসময় অতিথিদের উত্তরীয় পরানো হয়। এরকমই এক আবেগময় মুহুর্তের অবতারণা হয়েছিলো রোববার রাতে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সন্ধার পর সেখানে আয়োজন করা হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের প্রত্যক্ষদর্শী চারজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মাননা অনুষ্ঠানের। সময় স্বল্পতার কারণে অনুষ্ঠানের শুরুতে সম্মাননা প্রাপ্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে যান সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।
সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ছিলেন পুরো অনুষ্ঠান চলাকালেই।অনুষ্টানের শেষ পর্যায়ে এসে উপস্থিত হন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সর্বউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংবাদিক নজরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ (ভিপি শামীম),সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ। এছাড়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম।
অনুষ্ঠান শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যক্তিক্রমী অনুষ্ঠানটি দেখতে তখন শহীদ মিনারে খোলা প্রাঙ্গণে জমায়েত ছিলেন কয়েক শতাধিক মানুষ।
সেখানে তোফজ্জল হোসেন হেলাল স্মৃতি চারণ করেন ঐতিহাসিক ৭মার্চের ভাষণের। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ রফিকুল হক তার বক্তৃতায় তুলে ধরলেন যুদ্ধকালীন মুহুর্তের প্রস্তুতির কথা। যেভাবে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন অবিসংবাদিত নেতা,বাংলার মানুষের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু। হলেন সকলের প্রিয় মুজিব ভাই। দলমত নির্বিশেষে সব মানুষ এক বাক্যে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দেয়,সে কথা জানালেন। বললেন বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুই। তার তুলনা তিনিই।
তিনি আরও বললেন এক দেশে দুই শ্লোগান চলতে পারেনা। জয় বাংলা মুখে নিতে যাদের দ্বিধা হয় তাদের মাঝে দেশ প্রেম থাকতে পারেনা। এই শ্লোগান দিয়েই দেশ স্বাধীন হয়েছে। প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক গকম আলমগীর বললেন জ্ঞানগর্ব কথা। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে কারণে মুক্তি সংগ্রামের আহবানে ডাকা সমাবেশে যোগ দেন ঢাকার ছাত্রনেতাদের সঙ্গে। আজও তার কানে বাজে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ। এজন্য তরুণদের উদ্দেশ্যে বললেন,তোমরা দেশটাকে এগিয়ে নাও। দেশের হাল ধরো। সৎপথে চলো। গভীরভাবে দেশটাকে ভালোবাসতে শিখো। যেভাবে বঙ্গবন্ধু ভালোবাসতেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাদ উদ্দিন আহমদ বললেন, বঙ্গবন্ধুর কর্মী হতে হলে সৎ হতে হবে। মাওলানা ভাসানির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুকে নারায়নগঞ্জে পাঠিয়েছিলেন সাংগঠনিক কাজে। দিয়েছিলেন দুই টাকা হাতে। বঙ্গবন্ধু নারায়নগঞ্জ সফর করে ফিরে এসে দুই টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। তখন ভাসানী জানতে চান তুমি নারায়নগঞ্জ যাওনি। তিনি বলেন ,আমি সাইকেলে গিয়েছি,তাই দুই টাকা রয়ে গেছে।
এমনই সৎ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সুতরাং তার আদর্শের অনুসারীদেরও এমনভাবে সৎ হতে হবে। তিনি বলেন, আমরা থাকবোনা। আমাদের সঙ্গী অনেকেই নেই। নতুন প্রজন্মকে দেশটার হাল ধরতে হবে শক্তভাবে। এই পতাকার মান রাখতে হবে।
সবশেষে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড নাসির উদ্দিন খান তাঁর বক্তৃতায় এরকম একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান করে গুণীজনদের সম্মাননা প্রদান করায় জেলা যুবলীগের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।