এম সাইফূর রহমানের সেই দূর্লভ সাক্ষাৎকার : মেজর ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে

এম সাইফূর রহমানের সেই দূর্লভ সাক্ষাৎকার : মেজর ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে

বাংলাভাষী ডেস্ক :

প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ১৯৯৬ সালের শেষার্ধে এক সাক্ষাতকারে সেসময়কার অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছিলেন বাংলা দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার সঙ্গে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাহিত্য সম্পাদক ব্রাত্য রাইসু ছিলেন ওই সাক্ষাত গ্রহণকারী দুই সাংবাদিক ছিলেন
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: রাজু আলাউদ্দিন ও ব্রাত্য রাইসু। আজ ৫ সেপ্টেম্বর। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফূর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিডিনিউজ সূত্রে প্রাপ্ত সেই সাক্ষাৎকার বাংলাভাষীর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

দুই সাংবাদিক যেভাবে সেই সাক্ষাৎকারের লেখা শুরু করেন: সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখে সাইফুর রহমানের মতিঝিলের রহমান-রহমান-হক অফিসে বাংলাবাজার পত্রিকার জন্য এই সাক্ষাৎকারটি নিতে যাই আমরা। সকাল ১১ টার দিকে আড়ম্বরহীন অফিসে তিনি আমাদের সময় দেন। সাইফুর রহমান তখন আর দেশের অর্থমন্ত্রী নন। তিন মাস আগে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর সরকার গঠন করেছে। সরকারের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন শাহ এ এস এম কিবরিয়া। সাইফুর রহমান শাহ কিবরিয়ার করা কিছু মন্তব্য বিষয়ে তাঁর অভিমত জানান এই সাক্ষাৎকারে। এছাড়া আঞ্চলিক উন্নতি, বাজেট বক্তৃতা, নির্বাচনের বিদেশী অবজার্ভার, সানসেট ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি বিষয়ে তিনি কথা বলেন। তিনি কথাচ্ছলে ফিনান্সিয়াল জার্নালিজম সম্পর্কে বেশ মজার মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, "সব জার্নালিস্টদিগকে বিলাতে আর আমেরিকাতে পাঠানো উচিত" ফিনান্সিয়াল জার্নালিজম সম্পর্কে পড়াশোনার জন্য।
কয়েকবারই তিনি ইন্টারভিউ দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি আমাদের জানিয়ে দেন, "তোমাদের দ্বারা এই সমস্ত ইন্টারভিউ হবে না।" সহ সাক্ষাৎকারগ্রহীতা রাজু আলাউদ্দিন এক পর্যায়ে সাইফুর রহমানকে বলেন, রেগে যাওয়ার কারণে তাঁর সঙ্গে আমাদের কথা বলায় অসুবিধা হয়। তিনি বেশ চমৎকার ভাবে বলেন, "না, না, আমি মায়া কইরা রেগে যাই, রাগ কইরা না। রাগ কইরা রেগে যাই না। আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য হলো আই এ্যাম ফর বিএনপি, সামবডি ফর আওয়ামী লীগ, সামবডি ফর জাতীয় পার্টি, নোবডি ফর বাংলাদেশ। সব পার্টিই বলে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় কিন্তু আলটিমেটলি দেশ আসে সব শেষে।"
রাজু আলাউদ্দিন: আমি তো আপনার এলাকায় একবার বেড়াতে গেছিলাম, সেখানে আপনার উন্নয়নের অনেক ছোঁয়া দেখলাম। একেবারে গহীন গ্রামেও বেশ পাকা রাস্তাঘাট করেছেন।
সাইফুর রহমান: শুধু আমার এলাকায় কেন, সারা বাংলাদেশেই উন্নয়ন হয়েছে।
রাজু: আমার মনে হয় সিলেটে একটু বেশি।
সাইফুর: আমার তো মনে হয় নর্থ বেঙ্গলেই সবচে' বেশি।
ব্রাত্য রাইসু: ঐটা তো এরশাদ সাহেব করছেন।
সাইফুর: যে-ই করুক...
রাজু: আমি বলছিলাম আপনার আমলের কথা। আপনার হাত দিয়ে যে-জায়গাগুলো ডেভেলপ হয়েছে সেই জায়গাগুলোর কথা বলছিলাম। সেইদিক থেকে কি সিলেটের প্রতি আপনার একটু পক্ষপাত ছিলো না?
সাইফুর: না, কোনো পক্ষপাত ছিলো না, ভবিষ্যতে সিলেটের আরও বেশি পাইতে হবে। গত ৫০ বছর যাবত সিলেট ডিপরাইভড হইছে, পাকিস্তানের পর থেকে।
রাজু: সেই ক্ষতিটা এখন পূরণ করে নিচ্ছেন?
সাইফুর: বর্তমান সরকারকে আরও পূরণ করতে হবে।
রাজু: বর্তমান সরকার বোধহয় এই কারণে তাঁর সরকারে সিলেট থেকে বেশি লোক নিলেন?
সাইফুর: ভালো তো এটা। খুব ভালো। আচ্ছা এই ইন্টারভিউটা কীসের উপরে?
রাজু: আপনার যা বিষয় আশয়এগুলো নিয়েই।
সাইফুর: এখন এই যে পত্রিকা [সামনে রাখা দু'টি দৈনিক পত্রিকা দেখিয়ে], এই কাগজগুলো সাদা কাগজ, এগুলো ইম্পোর্টেড নাকি?
রাজু: ইম্পোর্টেন্ট কিনা?
সাইফুর:না, মানে ইম্পোর্টেড নাকি?
রাজু: হ্যাঁ, ইম্পোর্টেড।
সাইফুর: বাংলাবাজার পত্রিকা দেখলাম বেশ ভালো কাগজে ছাপা হচ্ছে। এখন ওরা খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল থেকে কাগজ আনে না?
রাজু: ওখান থেকে আনে কিন্তু কী কারণে জানি ওরা আর ঐ কাগজে পোষাতে পারে না। যেমন ধরেন, যারা কালার করে। নিউজপ্রিন্টে তো কালারের রেজাল্ট ভালো আসে না। আর এই কাগজের সাথে নিউজপ্রিন্টের দামের ডিফারেন্স সামান্য। আরও কী কী ভাবে যেন পোষায় না।
সাইফুর: হ্যাঁ, ডিফারেন্স সামান্যই হবে। আমি তাই বলতে ছিলাম। ওরা খামকা এগুলা খুলনা নিউজপ্রিন্টের জন্যে ঝামেলা করে। ইম্পোর্টেড ডিউটি ফ্রি...
রাইসু: কিন্তু এইভাবে ইম্পোর্ট করতে থাকলে তো আমাদের মিল বন্ধ হয়ে যাবে।
সাইফুর: না না, বন্ধ হবে না। বন্ধ হবে কেন। হ্যাঁ, বলেন।
রাজু: বলছিলাম যে বাজেট সেশন তো মাত্র শেষ হলো। আপনি বর্তমান সরকারের বাজেট সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, এই বাজেট পশ্চাদমুখী, কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আপনার এই প্রতিক্রিয়ার জবাবে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আপনাকে ঘুরে দাঁড়াতে বলেছিলেন। আপনি ঘুরে দাঁড়ালে নাকি আর পশ্চাদমুখী মনে হবে না। আপনি কি ঘুরে দাঁড়ানোর পক্ষে?
সাইফুর: বাজেট পশ্চাদমুখী মানে, আমি তো পশ্চাদমুখী বলি নাই। বাজেট বক্তৃতাকে পশ্চাদমুখী বলছি। বাজেটকে তো পশ্চাদমুখী বলি নাই।
রাজু: বিচিত্রা তো আপনার কথা কোট করে বলেছে 'নয়া বাজেট পশ্চাদমুখী, কোনো নির্দেশনা নাই।'
সাইফুর: বিচিত্রা কোট করলে, বিচিত্রা... আমাদের নিউজপেপারওয়ালাদের তো আর অন্য কাজ নাই। অবশ্য নিউজ পেপার বাজেটকে, এরা বাজেট বক্তৃতাকেই বাজেট ধরে নিয়েছে। বাজেট বক্তৃতাটা বাজেট না। একচুয়ালি বাজেট ইজ দ্য ডকুমেন্ট দ্যাট ইজ প্লেসড বিফোর দ্য হাউজ। বাজেট বক্তৃতা তো, ফাইনান্স মিনিস্টারের বক্তৃতা গিভিং দি পলিসি গাইড লাইন। বাজেট বক্তৃতাটা...
রাইসু: বাজেট পশ্চাদমুখী সেটা তো আপনি বলেন নাই, আপনি বললেন, বাজেট বক্তৃতাটা পশ্চাদমুখী--এটা তো বলার কোনো কারণ ছিলো না আসলে।
সাইফুর: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই কারণ ছিলো। বক্তৃতায় বলা হলো গত ২১ বছরে দেশে কিছু হয় নাই। দ্যাট ইজ সিলি স্টেটমেন্ট।
রাইসু: আপনি বাজেটের সমালোচনা করতে গিয়া বাজেট বক্তৃতার সমালোচনা করলেন।
সাইফুর: হ্যাঁ, তা তো বলবোই। বাজেট বক্তৃতা ইজ দ্য কাভারিং অব দ্য বাজেট। প্রথমে বলছে গত ২১ বছরে দেশে কিছু হয় নাই।
রাইসু: তাইলে বক্তৃতা পশ্চাদমুখী হওয়া ছাড়া উপায় নাই। আপনাদের আমলের কথা যদি বলতে হয় বাজেটে তা হলে সেটা পশ্চাদমুখী হতেই হবে।
সাইফুর: আমাদের কথা মানে?
রাইসু: আপনাদের সময়কালের বাজেটের কথা যদি বলতে হয় সেটা তো পশ্চাদমুখী হওয়া ছাড়া উপায় নাই।
সাইফুর: উনি বলছেন '৭১, '৭২, '৭৫-এর কথা। তখন গোল্ডেন এজ ছিলো বাংলাদেশের ইকোনমির, সোনার বাংলা!
রাজু: আপনার কী মনে হয়?
সাইফুর: আমার তো মনে হয় শ্মশান বাংলা ছিলো। শ্মশানের বাংলা ছিলো। দুর্ভিক্ষের বাংলা ছিলো।
রাইসু: কিন্তু একটা বাংলা যখন পাকিস্তান থেকে আলাদা হয় সেটাকে তো সোনার বাংলাই বলতে হবে আমাদের। আমাদের নিজস্ব বাংলা সেটা, পাকিস্তানের আন্ডারে তো বাংলা না।
সাইফুর: ঠিক আছে বাবা, তোমাদের সাথে আমার ইন্টারভিউ হবে না। আই থিংক ইউর নলেজ এন্ড মাই নলেজ ইজ কোয়াইট ডিফারেন্ট।
রাইসু: ঠিক আছে, আমরা বাজেটের দিকেই যাই।
সাইফুর: এই সমস্ত কথা বলে ইন্টারভিউ হবে না, বিকজ ইউ হ্যাভ টু হ্যাভ এ লেবেল অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং, টু ডিসকাস। তুমি কি বাংলাবাজারের সঙ্গে?
রাইসু: জ্বি।
সাইফুর: কোন বিভাগে আছো?
রাইসু: সাহিত্য।
সাইফুর: শুধু সাহিত্য দেখো? সাহিত্যই তো হয়।
রাজু: যাই হোক, বর্তমান বাজেট সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
সাইফুর: এই বাজেটটা একচুয়ালি আমি প্রিপেয়ার করছি। আমি বক্তৃতায় বলছি, বাজেটের কাজ শুরু হয়, বাজেটের গাইড লাইনে, বাজেটের কী স্ট্রাটেজি থাকবে, কী পলিসি হবে, মনিটারির উপর বেশি জোর দেয়া হবে কিনা এ সমস্ত সব পলিসি গাইড লাইন মোটামুটি জানুয়ারি মাসের দিকে দেয়া হয় অর্থমন্ত্রণালয়কে এবং এগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে জানাইয়া দেয়া হয়, এই আমাদের বাজেট স্ট্রাকচার, এই মোটামুটি আমাদের পরিধি, বাজেটের ডিটেইল কাজ বাই জানুয়ারির মাঝামাঝি শেষ হয়। বাজেটের স্ট্রাকচারটা মোটামুটি ফেব্র"য়ারি মাসের দিকে শেষ হয়। এবং মার্চ মাসে বাজেটের ফাইনাল শেপ দিয়ে দেয়া হয়। কনসোর্টিয়াম মিটিংটা হয় এপ্রিলে, অনেক সময় ১২ থেকে ১৪ তারিখের ভিতরে। সুতরাং... আমরা ক্ষমতা থেকে গেলাম কখন, মার্চ মাসে না?
রাজু: জ্বি, মার্চে।
সাইফুর: সুতরাং মার্চ মাসের বাই টুয়েন্টি ফিফথ আই হ্যাভ প্রেজেন্টেড বাজেট স্ট্রাকচার টু দ্য নেক্সট কেবিনেট, সুতরাং বাজেটটা মার্চ মাসের দিকেই ফাইনালাইজ করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে এটাকে ফাইনাল শেপ দিয়েছে। কারণ আমরা তো আর ক্ষমতায় নেই। এরপরে জুন বা জুলাই মাসে এসে বাজেট করার কোনো উদ্যোগ... এই সময়ের মধ্যে সমস্ত একাউন্ট ক্লোজই হয়ে যায়। আমরা কখন আসলাম এই পার্লামেন্টে, জুলাই মাসে না?
রাজু: হ্যাঁ, জুলাই মাসে।
সাইফুর: জুলাই মাসে এই সরকার এসে এই বাজেট প্রিপারেশন করার আর কোনো স্কোপ নাই। এরা এইটুকু করতে পারে, আগের বাজেটের উপর কিছু নিজেদের ধ্যান ধারণার ভিত্তিতে এডজাস্টমেন্ট করতে পারে। বলতে পারে যে ট্যাক্স কমাও বা এক্সপেন্ডিচার, ঐ কৃষিখাতে, হয়তো অন্য খাত থেকে কমাইয়া এডজাস্ট করতে পারে বা বলতে পারে: আমরা মনে করি রেভিনিউ কালেকশন আরও বেশি হতে পারে। সুতরাং এইগুলোর সঙ্গে...
রাইসু: এক অর্থে তো এটাকে বিএনপির বাজেট বলাই ভালো, বিএনপি এটাকে ঠিকঠাক কইরা দিয়া গেছে যেহেতু?
রাজু: মানে আপনার করা।
সাইফুর: বাজেট প্রিপারেশন স্টার্টেড ডিউরিং দ্য বিএনপি পিরিয়ড। আওয়ামী লীগ গভমেন্ট যখন আসলো তখন ইট ওয়াজ ঠু লেট টু ডু এ নিউ বাজেট ইন অলটুগেদার, ইটস এ আওয়ামী লীগ, ইটস এ বিএনপি বাজেট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাজেট এডজাস্টেড বাই আওয়ামী লীগ টু দ্য এক্সটেন্ড পসিবল। সুতরাং উই হ্যাভ এ ভেরি লিটল টু ক্রিটিসাইজ দ্য বাজেট।
রাজু: আচ্ছা আপনার সম্পর্কে মানে আপনার আমল সম্পর্কে বর্তমান অর্থমন্ত্রী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে সাইফুর রহমান সাহেব তাঁর আমলের কৃতিত্ব বোঝানোর জন্যে বারবার বিদেশী পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এই সূত্রে তিনি এই বলেছেন যে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। এটা তাঁর ব্যর্থতা ঢাকার প্রয়াস। আপনি এই বক্তব্যের সাথে একমত কিনা?
সাইফুর: সম্পূর্ণ দ্বিমত। এটা একটা সুপারফিসিয়াল স্টেটমেন্ট।
রাজু: আপনি বলতে চাচ্ছেন এটার মধ্যে কোনো সত্যতা নাই?
সাইফুর: কোনো সত্যতা নাই, এটা সম্পূর্ণ রিফলেক্টিং দ্য ইগনোরেন্স অব দ্য... ইট ইজ নট ফেন্সি। বাজেট সাহিত্য না।
রাজু: আপনি বলতে চাচ্ছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী সাহিত্য করছেন?
সাইফুর: ওইটা না, আমি যেটার কথা বলছি... এগুলো আমি ইন্টারভিউ দেই না, এই সমস্ত কোয়েশ্চেনের।
রাজু: আপনার কথার সূত্রেই তো এই প্রশ্নটা আসছে।
সাইফুর: আমি বলছি বাজেট সাহিত্য না। বাজেট ফ্যাক্টস এন্ড রিয়ালিটি। বাজেট ফিগারের উপর। সুতরাং বাজেট ভালো না খারাপ, আমাদের সময়ে বেশি উন্নতি হইছে না উন্নতি হয় নাই, রেভিনিউ বাড়ছে না রেভিনিউ কমছে--সব হচ্ছে ফ্যাক্টস এন্ড ফিগারসের উপর নির্ভরশীল। ওখানে কোনো ভাবধারা বা সাহিত্যরসের কোনো অবকাশ নাই। এই যে বইটা বানাইছেন অর্থমন্ত্রী সাহেব, এই যে বই [বই ওল্টাতে থাকলেন] এটা উনিই বলছেন ১৯৯৫/৯৬ অর্থবছর একটি ঘটনাবহুল, এই বছরের শেষের দিকে গণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব... প্রাকৃতিক দুর্বিপাক, রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রায় সারাবছর ধরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করে। উনি নিজেই বলছেন ওনার বই, ওনার বাজেট এটি। সুতরাং... উনি বলছেন... তারপর প্রবৃদ্ধি কত পারসেন্ট হইছে না হইছে এগুলো সবকিছু, নাইন্টি ওয়ানে কী ছিলো, নাইন্টি ওয়ানে জিডিপি কত ছিলো, নাইন্টি ওয়ানে দেশজ বিনিয়োগ, ইনভেস্টমেন্ট জিডিপি রেশিও ছিলো ইলেভেন পয়েন্ট ফাইভ, আমি রেখে আসছি সেভেন্টিন, নাইন্টি ওয়ানে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিলো ফাইভ পয়েন্ট এইট, আমরা রেখে আসছি টেন পয়েন্ট সেভেন। দিজ আর অল ফ্যাক্টস, এখানে ইতিহাস নাই, সাহিত্য নাই।
রাজু: এরশাদের আমলে জিডিপি বেশি ছিলো না?
সাইফুর: না।
রাজু: কোন সময়টায় জিডিপি বেশি ছিলো? আপনাদের আমলে?
সাইফুর: জিডিপি বোঝো?
রাজু: না বোঝার কারণ নেই। বাংলায় প্রবৃদ্ধির হার।
সাইফুর: প্রবৃদ্ধি কীসে হয়? জিডিপি বাড়লেই দেশের উন্নতি হয় না। জিডিপি কমলেই দেশের খারাপ হয় না। নির্ভর করে জিডিপিটা কোথা থেকে আসতেছে। যদি কোনো দেশে এগ্রিকালচারাল গ্রোথ হয় আমাদের দেশের মত তাহলে এটা দেশের জন্যে মঙ্গল হয়। জনগণ তখন কাজ-টাজ পায়। কিন্তু জিডিপি বাড়তে পারে--আমরা দেশে যদি একটা এয়ারপোর্ট করি, করে ওখানে এক হাজার কোটি খরচ করলাম, ওইটায় যে জিডিপি গ্রোথ হবে, দিস জিডিপি গ্রোথ উইল নট গিভ...। এই এক হাজার কোটি টাকা যদি আমরা খরচ করি এগ্রিকালচারাল সেক্টরে... বাংলাদেশের মত দরিদ্রসংকুল দেশে জিডিপি গ্রোথ হোয়েন প্রমটেড বাই দ্য এগ্রিকালচার এন্ড ভিলেজ একটিভিজ এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট একটিভিটিজ। জিডিপি গ্রোথ ডাজ নট নেসেসারিলি মিন দ্যাট... দিস ইজ এ ভেরি হাইলি কমপ্লেক্স সাবজেক্ট। জিডিপির কমপোনেন্ট হচ্ছে শস্য, খনিজ সম্পদ, শিল্প, বিদ্যুৎ, গ্যাস, নির্মাণ কীসের উপর থেকে জিডিপি গ্রোথ হইছে। ওই গ্রোথের উপর দেখে বুঝতে হবে--ওই জিডিপি দেশের জন্যে। জিডিপি গ্রোথ ইন জেনারেল তো ভালো--এটা তো কেউ বলতেছে না। কিন্তু জনগণের উপকারে বাংলাদেশের মত দেশে বা ইন্ডিয়ার মত দেশে আজকে যে জিডিপি গ্রোথ এগ্রিকালচারাল বেজ, রুরাল ইন্ডাস্ট্রি বেজ রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার বেজ... গ্রামে যদি একটা রাস্তাঘাট হয়, তাহলে কী হয়? এই রাস্তাঘাটের জন্যে মানুষ মাটি কাটবে, পাথর ভাঙবে। ইট ফালাবে তাই না? অনেকগুলো লোক সেখানে কাজ করবে।
রাজু: অনেক ধরনের কাজের একটা সমন্বিত প্রকল্প।
সাইফুর: দিস ইজ প্রো-এমপ্লয়মেন্ট জিডিপি গ্রোথ। শহরে বড় বড় কয়েকটা ফ্যাক্টরি করে, দশ বারো জন লোক... লেট আস সে একটা ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি, একটা ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি করতে কিন্তু প্রায় ষোল শ' কোটি টাকার মত লাগবে। এই ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরিতে মাত্র বারো শ' থেকে দুই হাজার লোক কাজ করবে। ষোল শ' কোটি টাকা বা পনের শ' কোটি টাকা যদি আমি গ্রামবাংলার রাস্তাঘাট বানাইতে খরচ করি তাহলে কত লোক কাজ পাবে? হাজার হাজার লোক। মানুষের কত সুবিধা হবে। রাস্তা খোলা যাবে--বন্দের মধ্যে যাবে, হাওড়ের মধ্যে যাবে, হাওড় থেকে লোক মাছ নিয়ে আসতে পারে, তাদের খড় নিয়ে আসতে পারে, তাদের গরু নিয়ে আসতে পারে, তাদের শস্য নিয়ে আসতে পারবে। মার্কেট কমিউনিকেশন ভালো হবে। এখন মনে করেন এই যে [বাজেট বই খুলে]... জিনিসটা বুঝাইতে হয়। এই জন্যে আমি বলছিলাম যে সব জার্নালিস্টদিগকে বিলাতে আর আমেরিকাতে পাঠানো উচিত।
রাজু: আপনি আবার ক্ষমতায় গেলে নিশ্চয়ই পাঠাতে পারবেন।
সাইফুর: আমেরিকা, বিলাত পাডাইলে ঐ যে লেইটেস্ট ফিনান্সিয়াল জার্নালিজমের উপরে অনেক দক্ষতা তারা অর্জন করতে পারবে। ফিনান্সিয়াল জার্নালিজম এই দেশে এখন অনেক পিছিয়ে আছে।
রাজু: এ রকম একটা ইন্সটিটিউট কি আমাদের সোনার বাংলায় করা উচিত না?
সাইফুর: করা উচিত।
রাজু: তাইলে তো আর আমাদের এতোদূর যাইতে হয় না।
সাইফুর: আমি নিজে করতাম। এখানে করলেই হবে না, ঐ এনভায়রনমেন্টে যেতে হবে। এখানে বাংলাদেশে বসিয়া, কানে শুনিয়া একটা লেইখা দিলেই হবে না, এটা সত্য না মিথ্যা একটা লেইখা দিলো, হইয়া গেলো জার্নালিজম।
রাজু: এই জন্যেই তো আমরা রেকর্ডিং সিস্টেমে গেছি।
সাইফুর: এই যে [বাজেট বই খুলে], পশু সম্পদ। মৎস্য সম্পদ ফাইফ পয়েন্ট এইট পারসেন্ট গ্রোথ নাইন্টিন নাইন্টি ওয়ানে। তারপরে পশু সম্পদ আমরা পেয়েছিলাম টু পয়েন্ট টু পারসেন্ট...।
রাজু: নাইন্টি সিক্স-এ এই যে মৎস্য সম্পদের গ্রোথ থ্রি পয়েন্ট সেভেন...।
সাইফুর: হ্যাঁ, হতে পারে, কোনো বছর পানি বা ফ্লাড বা কোনো কিছুর এফেক্টে, ভেরিয়াস ফ্যাক্টর কাজ করতে পারে। খালি বললেই হবে না। ইউ হ্যাভ টু এনালাইস এন্ড ফাইন্ড আউট হোয়াই ইট ইজ... হ্যাজ গন ডাউন, আন্দাজে খালি রিপোর্ট দিলেই হবে না। হোয়াই ইট ইজ থ্রি পারসেন্ট। ইউ হ্যাভ টু সি... সেই বছর হয়তো খরা ছিলো নাইন্টি ফাইভে। নাইন্টি সিক্সে হয়তো ফ্লাড হতে পারে। হয়তো সেই বছর পলিটিক্যাল আপহেভেল হতে পারে যেটা হইছে এখানে [বাজেট বই খুলে]; প্রথমে শুরুই করছে... ইউ হ্যাভ টু রিড দি হোল থিংস 'প্রাকৃতিক দুর্বিপাক রাজনৈতিক অস্থিরতা সারা বছর ধরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করেছে।' সুতরাং এই কনটেক্সটে করতে হবে। এখন হয় কি আমাদের দেশে এই মূল্যায়ন যেটা বললেন যে এরশাদের সময়ে জিডিপি হায়েস্ট পজিশনে ছিলো। হাঁ, এরশাদের সময়ে ১৯৮৮ সালে বড় ফ্লাড হয়েছিলো, এই ফ্লাডের পরে বাম্পার ক্রোপ হয়েছে। বাংলাদেশে যে বছর ক্রোপ ভালো হবে সেই বছর জিডিপি গ্রোথ ভালো হবে। এখন আওয়ামী লীগ বলতেছে না যে সেভেন্টি থ্রি, সেভেন্টি ফোরে খুব বেশি হাই গ্রোথ হয়েছিলো। বেশি গ্রোথ হবে কারণ সেভেন্টি টু তে ওয়ার-রেভেজড, ইকোনোমি ছিলো। একটা দেশে যুদ্ধ হইছে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে কেউ আশাও করে না যে বিরাট একটা কিছু হইয়া যাইবো। দুই তিন বছর এমনেই লাগবে। এখানে তাদেরকে সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হইছে, নতুন সার্ভিস করতে হইছে, বাংলাদেশ সার্ভিস, পাকিস্তান সার্ভিস, অনেক কাজ ছিলো যা তাদের করতে হইছে, এটা বললেই হবে না যে কিছুই হয় নাই। একটা নতুন দেশে গভমেন্ট অনেক কিছু...। তবে তারা ভুলভ্রান্তি করছে যার ফলে, অসুবিধা হইছে, যার ফলে দুর্ভিক্ষ হইছে কিন্তু এইটার অর্থ এই না যে কিছুই হয় না। আমাদের দেশে এই একটা প্রবণতা, আমার আমলেই সব ভালো হইছে, ওর আমলে সব খারাপ হইছে, দিজ আর দি ব্যাড পলিটিক্স। সেই সময় কেউ এক্সপেক্টও করে নাই যে একটা মিরাকল দেশের মধ্যে হয়ে যাবে। একটা ওয়ার হইছে, এত লোক মারা গেছে, তবে যে সমস্ত টাকা-পয়সা আসছিলো সেগুলো যদি সঠিকভাবে তারা খরচ করতো তা হলে আরো ভালো হতো, আরো ভালো হতো। তবে এটাও আবার বলতে হয় যে তাদের এক্সপেরিয়েন্স সেই সময় কত ছিলো--সেটাও দেখতে হবে। যেমন সেভেনটি টু, সেভেনটি থ্রিতে গ্রোথ তো কিছুই ছিলো না। যেমন, আওয়ামী লীগ, তাজউদ্দিন সাহেব তার বক্তৃতায় বলছে সেই বছরে যে দিস ইজ নট আওয়ার টার্গেট। মনে হয় বেশি কিন্তু এটা বেশি না। কারণ মাইনাস গ্রোথ ছিলো ঐ বছর। তারপরে সেভেনটি ফোর সেভেনটি ফাইভে আবার মাইনাস হয়ে গেছে, মাইনাস ফোর হয়ে গেছে, ঐ যে দুর্ভিক্ষ হয়েছে। কী জন্যে মাইনাস হয়েছে--এটা এনালাইস করতে হবে। দুর্ভিক্ষ হইছিলো, খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় নাই। যখনই এগ্রিকালচারে প্লাস হবে.. সেভেন্টি ফাইভ, সেভেন্টি সিক্স-এ আসিয়া আবার আওয়ামী লীগ বিএনপি সরকারের আমলে... আগস্ট মাস তো শেষ হইয়া গেলো গা, সেভেন্টি ফাইভ, সেভেন্টি সিক্স--যখন মোশতাক সরকার ছিলো, কোন সরকার ছিলো তখন? সেই সরকারের আমলে আসিয়া আবার হইয়া গেলো ফাইভ পয়েন্ট সেভেন। এর অর্থ এই না যে সব সেক্টরে খারাপ হইছে... আবার এগ্রিকালচার যখনই মাইনাস হবে... টু পয়েন্ট সেভেনে চলে আসছে। সেভেন্টি সেভেনে। সেভেন্টি সেভেন সেভেন্টি এইটে বেশি হচ্ছে কেন? খুব ভালো হইছে এগ্রি সেক্টর, সেভেন পয়েন্ট এইট পারসেন্ট গ্রোথ। বাংলাদেশের গ্রোথের যে কৃতিত্ব সেই কৃতিত্ব ইজ নট নেসেসারিলি অন দি গভমেন্ট বাট বেসিক্যালি ইট ইজ অন নেচার। সোজা কথা। ফ্লাড হইছে, ক্রোপ হয় নাই। তখনই বুঝতে পারবা যে কী জন্যে...। এইটা এনালিটিক্যালি নিতে হবে। বিএনপি'রও কৃতিত্ব না এইটা। বিএনপি'র কৃতিত্ব হবে যদি এগ্রিকালচার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরে হয়, গার্মেন্ট সেক্টরে হয়, যদি এনার্জি সেক্টরে হয় তাহলে বলতে হবে এটা গ্রোথ। এরশাদের সময়ে এই যে, এইট্টি এইটে ফ্লাড হইছিলো না? বিরাট ফ্লাড। এই ফ্লাড হওয়ার পরে আমাদের দেশে... ফ্লাড হইলে মানুষ মনে করে বিরাট দুর্ভিক্ষ হইছে। ফ্লাড দেশের জন্যে ভালো। মাঝে মাঝে ফ্লাড না হইলে আমাদের সয়েলে পলিমাটি হয় না। সার দিতে দিতে মাটি শক্ত হয়ে যায়। ফ্লাড আসলে মাছ আসে, ধান কমে কিন্তু মাছ তো আসে, মাছ থেকে মানুষ প্রোটিন, নিউট্রিশন পায়। তারপরে সিলেটে ফ্লাড হইলে ইন্ডিয়া থেকে পাথর আসে, পাথর আসলে রাস্তাঘাট হয়, পাথর না আসলে রাস্তাঘাট কোথা থেকে হবে? সুতরাং, ফ্লাড ইজ নট এ কার্স, ইট ইজ এ ব্লেসিং এন্ড টেমপোরারি কার্স। পার্মানেন্ট ব্লেসিং।
রাইসু: বিদেশি সাহায্য তো আসে।
সাইফুর: না, সাহায্য-টাহায্য আমরা চাই না। সাহায্য দিয়া কী হবে, আচ্ছা এখন এই পরের বছর এগ্রিকালচারের গ্রোথ হচ্ছে ওয়ান পয়েন্ট সিক্স। এই জিনিসটাই আমি বুঝাইতে চাইছিলাম।
রাজু: আপনি বলছিলেন যে কৃষি ক্ষেত্রে যদি বিপ্লব না আসে এবং গ্রামের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যদি না বাড়ে তাহলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে না। আপনি বা আপনার আমলের সরকার এ জন্যে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?
সাইফুর: উই হ্যাভ ইনভেস্টেড ইন এগ্রিকালচার সেক্টর, রুরাল রোড, ফরেস্ট্রি, ফিসারিজ লাইভস্টক। ফ্রি মার্কেট ইকোনমি দিয়েছি। পাম্প, ইরিগেশন ইকুইপমেন্ট--এগুলো দিয়েছি। এগ্রি একটিভিটিজকে সরকার সমর্থন দিয়েছে। হাজার হাজার মাইল রাস্তাঘাট হয়েছে যেটা আগে কোনো সময় এতখানি হয় নাই।
রাইসু: পাটকল তো বন্ধ কইরা দিচ্ছিলেন আপনারা?
সাইফুর: পাটকল বন্ধ হইছে, ভালো হইছে।
রাইসু: কীভাবে একটু বলবেন কি?
সাইফুর: ঐটা আগেই বন্ধ করেছিলো এরশাদ সাহেব, আমরা বন্ধ করি নাই।
রাজু: এরশাদ সাহেবের আমলেই বন্ধ হইয়া গেছিলো?
সাইফুর: হ্যাঁ, তোমাদের দ্বারা এই সমস্ত ইন্টারভিউ হবে না। পাটকল বন্ধ হইছে, ইট ইজ এ সানসেট ইন্ডাস্ট্রি। দিস আর স্ট্রাকচারাল চেঞ্জেস দ্য কান্ট্রি ইজ গোয়িং থ্রু। এই স্ট্রাকচারাল জিনিস বুঝতে হলে ইকোনোমিক্স বুঝতে হবে। আমাদের দেশে পাট ইন্ডাস্ট্রি শেষ হচ্ছে, ঐ দিকে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি আসতেছে, ঐদিকেত ফিসারিজ, লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। টেকনোলজি বেজড নতুন ইন্ডাস্ট্রি ঘরে আসছে। প্রত্যেক দেশই একটা সাইকেলের মধ্য দিয়া যায়। যে সমস্ত ইন্ডাস্ট্রি ইররেলিভেন্ট হয়ে যায়, দুনিয়ার সঙ্গে কমপিটিশনে পারে না সেইগুলারে বাঁচাইয়া রাখা সম্ভব হয় না। তবে এমনও সময় আসতে পারে ভবিষ্যতে দেখা যাবে জুটের মধ্যে এক বিরাট রেভ্যুলেশন এসে গেছে। হয়তো ইট উইল রিভাইভ এগেইন।
রাজু: কিবরিয়া সাহেব বলছিলেন যে আপনার আমলে হাজার হাজার ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে গেছে।
সাইফুর: ইট ইজ ফলস। আমাদের আমলে কোনো ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয় নাই। আমরা ইন্ডাস্ট্রি করেছি। ইন্ডাস্ট্রিগুলো আগেই বন্ধ হয়েছে। আমাদের আমলে একটাও বন্ধ হয় নাই। আমরা ইন্ডাস্ট্রি করেছি। কিবরিয়া সাহেব করেন নাই তো। ফরেন সার্ভিস থেকে আসছেন, এইজন্যে বলেছেন। উনি জানেন না। উনি ব্যাংককে ছিলেন, এই দেশে নাইন্টিন নাইন্টি টু থেকে কী হইছে না হইছে হি ডাজ নট আন্ডারস্ট্যান্ড এনিথিং হোয়াট হ্যাপেন্ড। ঐ ইন্ডাস্ট্রি সেল-এ যাও, ওখানে গিয়া বলো, আমরা যখন নাইন্টি ওয়ানে আসছিলাম তখন কতটা ইন্ডাস্ট্রি ছিলো, কতটা আমরা রিহেবিলেটেড করছি। কিবরিয়া সাহেবের কথার উপরে তো আমি ইন্টারভিউ দেবো না।
রাজু: আমরা জানতে চাচ্ছি ওনার স্টেটমেন্ট সঠিক কিনা।
সাইফুর: ইট ইজ নট কারেক্ট স্টেটমেন্ট।
রাজু: আমরা তো সঠিক তথ্য জানতে চাই।
সাইফুর: এটা কারেক্ট স্টেটমেন্ট না। হ্যাঁ বলো, আর কী?

রাজু: নাইন্টি ওয়ানে আপনারা যখন ক্ষমতায় আসেন তখন আপনাদের একটা উদ্যোগ খুব প্রশংসিত হয়েছিলো। আপনারা ঋণখেলাপীদের পাকড়াও করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ওটা পরবর্তীতে আর কন্টিনিউ করলেন না?
সাইফুর: কোথায় কন্টিনিউ করলাম না, যথেষ্ট কন্টিনিউ করেছি।
রাজু: না, অল্পকিছু সময়ের জন্য ছিলো। একটা পর্যায়ে গিয়ে আপনারা এটা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কন্টিনিউ হয়নি।
সাইফুর: খুব কন্টিনিউ হইছে। ইফ ইউ ডোন্ট নো, এই ঋণখেলাপীটা কী জন্যে। নেভার এ ফাইনান্স মিনিস্টার ইন দিস কান্ট্রি, আমি যতটুকু ঋণখেলাপীর জন্য গেছি, কোনো ফাইনান্স মিনিস্টার, কোনো বেটা আজ পর্যন্ত তা করতে পারে নাই।
রাজু: হ্যাঁ, আপনার এটা ছিলো খুব সাহসী উদ্যোগ।
সাইফুর: না, সাহসী-টাহসী না, সাহসী-টাহসী না। এই ঋণখেলাপী কত ছিলো সেটাও বাইর করতে পারে নাই আগের কোনো ফাইনান্স মিনিস্টার। এরশাদের সময় মুহিত সাহেব ছিলেন, তাঁর পরে সাইদুজ্জামান ছিলেন, তেনাদের সময় এই ঋণখেলাপী--এই সময় হইছে। ঋণখেলাপী আমাদের সময়ে হয় নাই। আমরা ঋণখেলাপী আইসা পাইছি। ঋণ আজকে দিলে তিন বছর পরে ঋণখেলাপী হয়। দেয়ার ইজ পেমেন্ট পিরিয়ড। সুতরাং নাইন্টি সিক্স-এ যে ঋণ দিচ্ছে, সে ঋণ ভালো কি খারাপ এটা ঠিক হবে নাইন্টি নাইন-এ গিয়া। কারণ তিন বছর পর্যন্ত সময় থাকে। সুতরাং ওনারা যে ঋণ দিছিলেন, ব্যাড ঋণ, সেই ঋণখেলাপীকে বার করার জন্য আমার সরকারের আমলে আমরা যতটুকু পদক্ষেপ নিয়েছি ঋণখেলাপীদের বিরুদ্ধে সে রকম পদক্ষেপ অন্য কোনো সরকার নেয়নি। এই যে আজকে প্রাইভেট ব্যাংক, বিভিন্ন ব্যাংকে স্বনামে বেনামে শালা-ভাগ্না-ভতিজার নামে ঋণ নিয়েছেন--এটা তো ব্রাদার-ইন-লজ ব্যাংক হইছে অনেক ক্ষেত্রে। খালি আত্মীয়-স্বজনকেই দেয়া হয় এগুলা। ঋণখেলাপী পদক্ষেপ নেয়, সাকসেসফুল হয় নাই, বিকজ দ্য লিগ্যাল সিস্টেম। মকদ্দমা করতে গেলে, আমাদের যে লিগ্যাল প্রসেস, লিগ্যাল প্রসেসটা ডিলে এন্ড দিস ইজ নট এ্যাফেক্টিভ। মকদ্দমা করলে বছর বছর লাগে, আট বছর দশ বছর পনের বছর লাগে মকদ্দমা সর্ট আউট করতে। তারপরে আমাদের লইয়ার সাহেবরা বা ব্যাংকে... ঋণখেলাপী, যদিও বারবার এটা হয়, ঋণখেলাপীর মূল কারণ হলো ব্যাংক ব্যবস্থাপনা। ইট ইজ দ্য ম্যানেজমেন্ট নট গভর্মেন্ট। আমরা অনেক মকদ্দমা করেছি। কিন্তু কোনো মকদ্দমাতেই অগ্রসর হইতে পারি নাই। আমরা হাতেনাতেও লোককে ধরছি, কিন্তু মকদ্দমা অনেক সময় তুলতেও পারি নাই কোর্টে, এমনও হয়েছে। আঠারো মাস, ত্রিশ মাস। এই জন্যেই তো লিগ্যাল রিফর্ম, এখন এই সরকার যে ল' কমিশন করছে ইট ইজ এ গুড স্টেপ ফরওয়ার্ড। লিগ্যাল রিফর্ম করে আরও এ্যাফেক্টিভ ল' যদি করে যাতে মকদ্দমা করে সঙ্গে সঙ্গে টাকাটা রিয়েলাইজ করা যায়। ভালো কথা। আমরাও চেষ্টা করছি কিন্তু পারি নাই। শুধু আইন করলেই তো হয় না আইনের এপ্লিকেশনও থাকতে হবে।
রাজু: আপনি কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ৪টি দলকে স্বার্থ-তাড়িত হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু আপনার এই আহ্বানের পর পরই বিএনপি বাই ইলেকশনকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা তৈরি করছে, ইলেকশনের রেজাল্টকে সহজভাবে মেনে নিচ্ছে না--এটা কি আপনার আহ্বানের বিপক্ষে যাচ্ছে না?
সাইফুর: না, আমার আহ্বানের অর্থ না যে ভোট চুরি করবে।
রাজু: আপনার কি মনে হয় সেটা হয়েছে?
সাইফুর: অফকোর্স।
রাজু: বিদেশী যে অবজার্ভার তারা কিন্তু অন্য কথা বলেন।
সাইফুর: বিদেশী অবজার্ভার ভোট চুরি ধরতে পারে না। বিদেশী অবজার্ভাররা ফাইজলামী করে, ফাইজলামী করে এখানে গিয়ে দেখলেন হ্যাঁ দেখছি, লোকেরা দিতেছে। ভোটের ম্যাকানিজমের মধ্যে পুলিশ আছে, ওসি আছে, পুলিং অফিসার আছে, প্রিজাইডিং অফিসার আছে। ওটাকে ধরার মত কোনো ব্যাটা নাই যে ভোট চুরি বন্ধ করতে পারে।
রাজু: আপনারা যখন নাইন্টি ওয়ানে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেন তখনও কিন্তু বিদেশী অবজার্ভার ছিলো।
সাইফুর: না, ওইবার ইলেকশন ভালো হইছিলো। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে ইলেকশন হইছে, আমাদের তো অল রেডি একটি পজিশন আছে উই হ্যাভ নট একসেপ্টেড দ্যাট ইট ওয়াজ এ ফেয়ার ইলেকশন। আমি বলছি যে মেজর ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। কারণ কতগুলো কঠিন সিদ্ধান্ত আছে যেগুলা এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে নেয়া সম্ভবপর না। যেমন এই পানি সমস্যা। আওয়ামী লীগের, আমি মনে করি, অন্যান্য দলগুলোকে সম্পৃক্ত করা উচিত। কারণ সেখানে যেই পানি পাক না কেন, অন্য দলগুলো হয়তো তখন বলবে, আমরা হইলে আরও বেশি পাইতাম।
রাজু: হ্যাঁ, ঠিকই বলছেন, এই যে কয়েক দিন আগে বিএনপি কিন্তু বলছে ৩৪ হাজার কিউসেকের কম পানি তারা নিতে দেবে না। আগে কিন্তু এইভাবে ফিগারটা উল্লেখ করেনি। এখন করছে।
সাইফুর: ইউর কোশ্চেন ইজ নট কারেক্ট। সুতরাং ইন্টারভিউ হবে না। আমি অনেক ইন্টারভিউ দিছি। তোমার ইন্টারভিউ, আই এ্যাম সরি দ্যাট আই ডোন্ট নো হোয়াই ডু ইন টেক ইন্টারভিউ বাট ইউর কোয়েশ্চেন ইন ইটসেলফ ইজ নট এ... কথা হচ্ছে সব দলকে সম্পৃক্ত করে ন্যাশনাল প্রবলেম সলভ করা হয় তাহলে দেশের জন্য ভালো। যেমন জুট, জুট ইন্ডাস্ট্রি ইজ এ ডায়িং ইন্ডাস্ট্রি, সানসেট ইন্ডাস্ট্রি। বাট দিস ইন্ডাস্ট্রি অলসো নিডেড। আমাদের দেশে কতগুলো জায়গা আছে যেখানে জুট করতেই হবে। আগে বস্তা বানাইতাম। এখন জুট দিয়ে অন্য কিছু হচ্ছে। সুতরাং উই হ্যাভ টু মেক এ স্ট্রাকচারাল ট্রান্সফরমেশন ইন দ্য জুট ইন্ডাস্ট্রি। এই ট্রান্সফরমেশন করতে গিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিস্ট্রাকচারিং করতে হবে। এ্যাসেট রিস্ট্রাকচারিং করতে হবে। কিন্তু এইসব কাজ যদি করতে হয় তাহলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর একত্রিত হয়ে করতে হবে। না হলে একদল অন্য দলের লেবারারদেরকে বলবে, ওই মিয়া, তোমরা গোলমাল কর, এইটা কর, ঐটা কর। সুতরাং এই সমস্ত এনার্জি সেক্টর প্রবলেম, জুট প্রবলেম, গভমেন্ট, সাইজ অব দ্য গভমেন্ট... এই যে হাজার হাজার লোক বসিয়া বসিয়া খাইতেছে, তাদেরকে যদি কমাইয়া দেওয়া যায়... এই যে ইম্পোর্ট অফিস, এখন এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট অফিসে তো কোনো কাজ নাই। কাজ আছে ইম্পোর্ট অফিসে? কারণ ইম্পোর্ট লাইসেন্সিং নাই। এরা বসিয়া খাইতেছে। ঐ যে ঐ বিল্ডিং-এ বার তেরশ' লোক। আমাদের সময়ও খাইছে, পাঁচ ছয় বছর বেতন নিছে। বিএনপিও তো ওদেরকে সরাইতে পারে নাই। ভয়ে সরায় নাই কারণ, মনে করছে আওয়ামী লীগ হয়তো পলিটিক্স করবে এটাকে নিয়ে। আবার আওয়ামী লীগ যদি সরাইতে যায় ওদেরকে তাহলে বিএনপি হয়তো এটাকে নিয়ে পলিটিক্স করবে। সুতরাং এই সমস্ত কাজ সব দল নিয়ে করলে দেশের মঙ্গল হয়। ধরো এই ডিফল্টারদের কথাই। ইউ নিড মোর স্ট্রংগার ল' এন্ড কনভিকশন যে, না, কোনো দলই ডিফল্টারদেরকে কোনো টিকিট দেবো না। সেদিন পার্লামেন্টে উঠছে না? লিস্ট তো তোমাদের পেপারেই বের হইছে, তাই না? বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য আমি মনে করি এটা জরুরি।
রাজু: যেহেতু আপনি খুব সাহসী এবং প্রশংসিত কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, সে জন্যই আমি জানতে চাই যে রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আয়-ব্যয়ের হিসেব চাওয়া জনগণের অধিকারের মধ্যে পড়ে কি-না?
সাইফুর: হ্যাঁ, কেন পড়বে না, হোয়াই নট?
রাজু: মানে আপনারা চান কিনা তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব?
সাইফুর: হ্যাঁ, আমি তো চাই। আয়-ব্যয়ের হিসাব মানে কী?
রাজু: আয়-ব্যয়ের হিসাব মানে, সে কত টাকা আয় করছে, কত ব্যয় করছে, এসব আর কি?
সাইফুর: হ্যাঁ, এটা হতে পারে।
রাজু: আপনার মতের সাথে আপনার দলনেত্রীর মতের মিল কী রকম?
সাইফুর: মিল আছে। মিল থাকবে না! দলনেত্রীর সাথে মিল থাকতেই হবে।
রাজু: কিন্তু আপনার মতের সাথে অনেক সময়ই তাঁর মতের মিল পাওয়া যায় না।
সাইফুর: না, আমরা তো বাকশাল পার্টি না। ইটস এ ডেমোক্রেটিক পার্টি। কিন্তু মাল্টি পার্টি সিস্টেম, প্লুরাল ডেমোক্রেসিতে মতের তো অমিল হবেই, তাহলে তো বাকশাল করা উচিত। প্লুরাল ডেমোক্রেসি ইজ দ্যাট ইউ ডিসকাস এন্ড ব্রিং প্লুরালিটি ইন টু ইউনিটি। বাট প্লুরালিটি উইদাউট ইউনিটি ইজ দ্য কনফিউশন। এন্ড ইউনিটি উইদাউট প্লুরালিটি ইজ এন অটোক্রেসি।
রাইসু: আচ্ছা শেষ কোশ্চেন। বিএনপির হারার কারণ কী?
সাইফুর: বিএনপি হারার কারণ হইলো ইলেকশন ঠিকমত হয় নাই।
রাইসু: আর বিএনপির কি জিতার সম্ভাবনা আছে সামনে?
সাইফুর: নিশ্চয়ই সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের জনগণ আগ্রহচিত্তে বিএনপিকে সমর্থন করে। এই যে আমি যেখানে যাই সিলেট-টিলেট গেলে লোকজন বলে ভোট দিলাম সাহেব আপনাকে, আর অন্য লোক ইলেকটেড হইলো কীভাবে, বুঝতে পারলাম না। তবে ইট ইজ ট্রু যে এইটার অর্থ এই না যে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে সবকিছু ভালো করছে--এটা তো বলতে পারবো না। প্রত্যেক গভমেন্টের মধ্যে দুর্বলতা থাকে। সুতরাং বিএনপি হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ডেভেলপমেন্টে অনেক ভালো করেছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে হয়তো আমাদের কিছু কিছু মন্ত্রণালয় আছে সেখানে হয়তো দুর্বলতা ছিলো। এর উপরে একটা এনালিটিক্যাল ডিবেট হইতে পারে। আমি যদি বলি আমি সবকিছু ভালো করছি--দিস ইজ নো গুড। কোনো সরকারই সব কিছু ভালো করতে পারে না। এই যে কিবরিয়া সাহেব বললেন, গত ২১ বছরে বিএনপি সরকারের আমলে কিছুই হয় নাই এইটা তো ঠিক স্টেটমেন্ট হলো না।
রাজু: আপনি তো রেগে যান এই জন্য কথা বলতে অসুবিধা হয়।
সাইফুর: না, না, আমি মায়া কইরা রেগে যাই, রাগ কইরা না। রাগ কইরা রেগে যাই না। আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য হলো আই এ্যাম ফর বিএনপি, সামবডি ফর আওয়ামী লীগ, সামবডি ফর জাতীয় পার্টি, নোবডি ফর বাংলাদেশ। সব পার্টিই বলে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় কিন্তু আলটিমেটলি দেশ আসে সব শেষে। প্রথমে দল তারপরে দেশ। রাজনীতির মুখ্য উদ্দেশ্য জনগণের কল্যাণ করা। জনগণের কল্যাণ করতে গিয়ে ইলেকশন করার এক মাসের মধ্যেই যদি ভোটের জন্য চিন্তা করতে হয়... আওয়ামী লীগ মাত্র ক্ষমতায় আসছে, দুই মাস হইছে, এখনই সময় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জুট সেক্টরে, এনার্জি সেক্টরে সিদ্ধান্ত নেয়ার। দুইদিন পরে, আরও দুই বছর চলে গেলে পারবে না তখন। নতুন গভমেন্টকে সবাই সময় দেয়। যেমন আমরা সেদিন বললাম, মাত্র আসছে গভমেন্ট কীসের হরতাল মিয়া, এগুলো বাদ দেও।
আমাদের সমস্যাটা হচ্ছে কি ইফ ইউ ডু লেস পলিটিক্স মোর ইকোনোমিক্স ইজ বেটার, বাট দ্য পলিটিক্যাল পার্টি ইজ ডুইং ঠু মাচ পলিটিক্স এন্ড ডু লিটল ইকোনোমিক্স, দ্যাট ইজ দ্য প্রবলেম। এই যে কিবরিয়া সাহেব কথায় কথায় প্রত্যেকটা কথার মধ্যে আগের প্রসঙ্গ... একটা দেশের ফাইনান্স মিনিস্টার এবং হোম মিনিস্টার--এই দুই মিনিস্ট্রি দ্যাটস টু বি সামহোয়াট এ নিউট্রাল। হি মে বি এ আওয়ামী লীগ ফাইনান্স মিনিস্টার। বাট ওয়ান্স ইজ এ ফাইনান্স মিনিস্টার হি ইজ এ বাংলাদেশী ফাইনান্স মিনিস্টার এজ আই টোল্ড অলওয়েজ টু মাই পার্টি। এজ আই টোল্ড আই মেইবি ইউর ফাইনান্স মিনিস্টার, বাট ওয়ান্স আই এ্যাম ইন দিস চেয়ার, আই এ্যাম এ বাংলাদেশী ফাইনান্স মিনিস্টার। আই এ্যাম টু গিভ জাস্টিস টু এভরিবডি। পার্টি এঙ্গেল থেকে না, ন্যাশনাল এঙ্গেল থেকে আমাকে দেখতে হবে। তাজউদ্দিন সাহেব এভাবে দেখতেন। হি ইজ ভেরি গুড। হোম মিনিস্টার--এও ঠিক সেই রকম। ফাইনান্সের থাকে টাকা আর হোম-এর থাকে বন্দুক। টাকা আর বন্দুক যদি এক হয় তাহলে এটা ডেনজারাস হয়ে যায়। সুতরাং ওনাকেও জুডিসাস মাইন্ড হতে হবে। উনি আওয়ামী লীগের ফাইনান্স মিনিস্টার হতে পারেন বা বিএনপির ফাইনান্স মিনিস্টার হতে পারেন, তাকে জাস্টিস সবাইকে সমানভাবে দিতে হবে।
রাজু: সাংবাদিকদের প্রতি আপনার বোধ হয় কোনো উষ্মা কাজ করে।
সাইফুর: আই এ্যাম ভেরি ফ্রেন্ডলি উইথ সাংবাদিক।
রাজু: নিউজ মিডিয়ার প্রতি?
সাইফুর: না তো! নিউজ মিডিয়াতে আমি তো একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু উল্টাপুল্টা প্রশ্ন করলে...
রাইসু: আমাদের ইন্টারভিউ কেমন লাগলো?
সাইফুর: না, ইন্টারভিউ ঠিক আছে।
রাইসু: আপনি তো একটু আগে বললেন এটা খুব খারাপ ইন্টারভিউ। এরকম খারাপ ইন্টারভিউ নাকি দেন নাই আগে।
সাইফুর: এ রকম ইন্টারভিউ দেই নাই মানে কোয়েশ্চেনগুলো করার মধ্যে তো একটা জাস্টিফিকেশন থাকতে হবে। এখন ইন্টারভিউটা কী রকম হবে এইটা তোমরা জানো, তোমরা কীভাবে লিখবা। বাংলাবাজার পত্রিকা এমনিই বিএনপি'র বিরুদ্ধে, তাই না?
রাজু: আমার তো মনে হয় না। বিএনপি'র লোকরা আওয়ামী-ঘেঁষা বলে আমাদের বদনাম করে আবার আওয়ামী লীগাররা আমাদেকে বিএনপি-ঘেঁষা বলে। এই যে কয়েকদিন আগে ঢাকার কিছু থানার রিপোর্ট গেলো, এগুলো দেখে কী মনে হয়?
সাইফুর: রিসেন্টলি বাংলাবাজার পত্রিকা একটু অবজেক্টিভ হওয়ার চেষ্টা করে। এর আগ পর্যন্ত কিন্তু আই থিং ইউ আর মোর স্লান্টেড, আই উড নট সে ফেবার। তোমাদের তো মতিউর রহমান চৌধুরী আছে। এঁরা তো আওয়ামী লীগার, আওয়ামী লীগার না?
রাজু: আমার মনে হয় না। মতি ভাইয়ের এটিচ্যুড দেখে তো আমার মনে হয় না।
সাইফুর: এমনে আমার সাথে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক।
রাইসু: তাহলে তো আপনিই ভালো জানবেন।
রাজু: এবারের প্যারিস কনসোর্টিয়াম সম্পর্কে কিছু বলেন।
সাইফুর: এই যে ফাইনন্স মিনিস্টার সাহেব বলে গেছেন যে উনি বলবেন কনসোর্টিয়াম মিটিং যেন ভবিষ্যতে ঢাকায় হয়। ওনার এটা বলার দরকার ছিলো না। কারণ, ওরাই চাচ্ছে প্রথম দুই বছর মিটিং এখানে করতে। এই যে বললাম অনেস্টি এবং ইন্টিগ্রিটিটা এত কম।
রাইসু: শেষ কথা কিছু বলেন।
সাইফুর: আমরা অতীতের ধ্যান-ধারণার পিঞ্জিরে আটকে আছি। এই পিঞ্জিরার থেকে বের হতে হবে। পরিবর্তনশীল দুনিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যাতে উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারি সেদিকে আমাদের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এবং দেশের স্বার্থকে ব্যক্তি বা দলের স্বার্থের চেয়ে বড় করে দেখার সময় এসেছে, স্বল্পমেয়াদী হলেও দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ঐক্যের পথে যেতে হবে, বিভেদের দিকে নয়। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেও ঐক্যের রাজনীতি সম্ভব। যে জাতি বর্তমান বিশ্বে পরিবর্তনশীল অবস্থায় অ্যাডাপ্ট করতে না পারে সে জাতি ইতিহাসের আস্তাকুড়েই পড়ে থাকবে। আগাতে পারবে না। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের উপমহাদেশের রাজনীতিবিদদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অতীতের দিকে তাকানো। ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারে না। নতুন দিগন্তে তাকাতে হবে, পুরাতন তারকার দিকে তাকিয়ে লাভ নেই।