কষ্ট (ছোট গল্প )

কষ্ট (ছোট গল্প )

        শাহারা খান 

        

         মানুষের বাহিরের চেহারা দেখে বোঝা মুশকিল সে সুখী না দুখী।কত হাসিমাখা মুখের ভিতরে লুকিয়ে থাকে কান্না।বিচিত্র জগতে কত বিচিত্র মানুষের বাস।মেয়েটির কথাগুলো শুনে শান্তনা দেবার ভাষা খুঁজে পেলাম না।মনে মনে ভাবলাম মানুষ কেমনে মানুষের প্রতি এত নির্দয় হয়।এত সম্ভাবনাময় একটি মেয়ে।যাকে একটু সহোযোগিতা করলে,একটু প্রেরনা দিলে আরো এগিয়ে যেতে পারতো।মেয়েটির কাজের মূল্যায়ন তো করেনি তার স্বামী।বরং অবজ্ঞা করে,নির্যাতন করে দমিয়ে রাখতে চায়।প্রতিভাকে বিকশিত হতে না দিয়ে চিরতরে মূল উৎপাটন করতে চায়।ধিক্কার জানাই স্বামী নামক হীনমনা অমন পুরুষকে।

            জান্নাত মেয়েটির সাথে আমার পরিচয় হয় ফেইসবুকের সুবাধে।মেয়েটি নিয়মিত লেখালেখি করে।গল্প,কবিতা,প্রবন্ধ সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে ওর বিচরণ।খুব ভালো লাগে ওর লেখাগুলো।শুধু আমি না,ওর লেখার ভক্ত অনেক।বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় জান্নাতের লেখা ছাপা হয়।বেশ কয়েকটি বইও প্রকাশ পেয়েছে।আবৃত্তিও তার সখ।বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝে আবৃত্তি করতো।ইদানিং অনলাইনে বিভিন্ন লাইভে দেখা যায়।

               আমি আশ্চর্য্য হলাম জান্নাতের কথা শুনে।তার স্বামী এসবের ঘোর বিরোধী।লাইভে যাওয়া,অনুষ্ঠানে যাওয়া এমনকি লেখালেখি উনি মোটেও সহ্য করতে পারেননা।এরজন্য জান্নাতের সাথে যা ইচ্ছা তাই ব্যবহার করেন।এমন তো নয় জান্নাত সংসার ফেলে এসব করছে।চারটা বাচ্চা সামলাচ্ছে।প্রতিটি বাচ্চা লেখাপডায় ভালো রিজাল্ট করে মায়ের চেষ্টায়।জান্নাত নিজে একটা স্কুলে জব করছে।সংসারের সব দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে,অবসরে সাহিত্য চর্চা করে।এবং এই লেখালেখির কারণে সমাজে ওর অনেক পরিচিতি।কিন্তু তার হীনমনা স্বামী,স্ত্রীকে কারো সাথে কথা বলতে দেখলে উত্তেজিত হয়ে যায়।এমন তো নয় যে উনি একেবারে আলিম হুজুর টাইপের।আর এমনও নয় যে জান্নাত বেপর্দা কিংবা কুচরিত্রের মেয়ে।লাইভ কিংবা অনুষ্ঠানে যেতে উনার আপত্তি থাকতে পারে কিন্তু লেখালেখি করতে আপত্তি দেয়া নিতান্তই অযৌক্তিক।

               কথা হলো বিয়ে করে বউকে লন্ডন এনে উনি চেয়েছিলেন জান্নাতকে ঘরের চার দেয়ালে বন্দি করে রাখতে।পাছে বউ যদি তারচেয়ে উপরে উঠে যায়।একজন উদারমনা স্বামী কি কখনো তা করতে পারে?স্ত্রীর সাফল্য তো স্বামীরই সাফল্য।

                এত প্রতিকূলতা সত্বেও জান্নাত আপ্রান চেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে।স্বামী কাজে গেলে সেই ফাঁকে লিখে।রাতে ঘুম না আসলে ওর মাথায় হয়তো কোন একটা বিষয় গুরপাক খাচ্ছে।ইচ্ছে করে একটা কবিতা লিখে ফেলি।কিন্তু ডিমলাইট জ্বালিয়েও সাহিত্য চর্চা করা যাবেনা।স্বামীর নিষেধ।

                 প্রবাসে যেখানে নারীদের ব্যাপারে আইন কড়া।জেনেও উনি জান্নাতের সাথে স্বৈরাচারী করে যাচ্ছেন।রান্নায় স্বাদ না হলে প্লেইট বাটি ভেঙে ফেলেন।সংসারের গুরুত্বপূর্ণ যেকোন সিদ্ধান্ত একাই নেন।স্ত্রীর সাথে পরামর্শের প্রয়োজন মনে করেন না।আর জান্নাতের মতো মেয়েরা চোখের জল মুছে আদর্শ স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছে।বিষয়টা আমাকে ব্যথিত করলো।