গ্রহণ (৩ পর্ব) ধারাবাহিক গল্প

গ্রহণ  (৩ পর্ব) ধারাবাহিক গল্প

শামীমা আহমেদ 

দীপিকা মায়ের ঘরে এলো। মায়ের পাশে বসে তার মাথায় হাত রাখল। জানতে চাইল আজ কেমন আছো মা ? মায়ের চোখেমুখে একটা বিষাদের ছায়া। দীপিকা বুঝতে পারে। এই কষ্টকর জীবন কতটা অসহনীয়।কিন্তু এক সময় কত ব্যস্ততায়ই না কেটেছে মায়ের দিনগুলি। মা বললেন, আজ তোর বড়খালা এসেছিলেন। দীপিকা বুঝে গেলো কথা কোনদিকে যাচ্ছে। তোর খালার ইচ্ছা। দীপিকা মনের ভেতরটা বেশ শক্ত করে নিলো। যেন মায়ের কথায় তার কোন উত্তেজনা না আসে। সে জানে এরপর কোন বিষয়টি আসবে। মায়ের সেই একই কথা তোর খালা চাইছে রাহসানের সাথে তোর বিয়ের একটা তারিখ ঠিক করতে। রাহসান দীপিকার বড় খালার ছেলে। দীপিকার চেয়ে দুই বছরের বড়। পিঠাপিঠি ওরা। ছোটবেলায় একসাথে অনেক খেলাধুলা করেছে। রাহসান ভাইয়ের মহাধুমধামে বিয়েও হয়েছিল। কিন্তু বিয়েটা টিকেনি। তার স্ত্রীর অন্যত্র প্রেম ছিল। কিছুদিন পর মেয়েটি তার সাথে চলে যায়। খালার এত বিত্ত বৈভবও তাকে আটকে রাখতে পারেনি। প্রিয় মানুষের সাথে জীবন কাটাতে সে সব দু'পায়ে দলে গেছে। ভালবাসলে এমন করেই বাসতে হয়। সবকিছুকে তুচ্ছ করে।মেয়েটি যেন সেটাই শিখিয়ে দিয়ে গেলো। কিন্তু রাহসান ভাইয়া কি আর সেটা বুঝবে! সেতো জীবনে কাউকে ভালবাসি বলতেই পারেনি। খালা তাকে এমন ভাবে খেলনা পুতুল বানিয়ে রেখেছিল। রাহসান ভাইয়ার জন্য খুব মায়া হয়। দীপিকাকে পছন্দ করতো কিন্তু কোনদিন তা বলতে পারেনি। আজো মায়ের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে। একবার বেড়াতে এসে ছাদে শুধু বলেছিল, দীপিকা তোর চুলগুলো খুব সুন্দর। ব্যস, এর বেশিকিছু আর বলা হয়নি। চাইলে বলতে পারতো। তখনো দীপিকার শাহেদের সাথে পরিচয় হয়নি। দীপিকা যেন ভাবনার এক অতলান্তে হারিয়ে গেলো। মায়ের নীরবতায় দীপিকা নিজেকে অন্য জগতে নিয়ে গেলো। সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো। আজকাল শাহেদের ফোন কম আসছে। নিশ্চয়ই কোন ঝামেলায় আছে। এমনিতে মোটামুটি প্রতিদিন একবার কল হয়। মিটিং বা অন্যান্য ব্যবসায়িক কারণে অনেক সময় দীপিকার আর কথা বলা হয়ে উঠে না। তখন দুজনেই মেসেজ রাখে। ওদের দুজরই ফিলিংসটা সেই আগের মতই আছে। যত জমানো কথা ছিল তা যেন এখন বলা হচ্ছে। অনেক রাত কথা বলেই কেটে যায় তবে মেসেজের ভাষায়। দীপিকা ভাবল আজ রাতে কথা বলতে হবে। দীপিকারচোখ পড়ল,

মায়ের বিছানার পাশের টেবিলে একটা ছবিতে। দীপিকা আর ওর মা। সেই গ্র‍্যাজুয়েশনের ছবিটা। বাবা মা দীপন সবাই লন্ডনে গিয়েছিল। এটাই সম্ভবত চারজনের একসাথে তোলা শেষ ছবি। দেশে ফিরেই বাবা স্ট্রোক করেন। মা তখন যেন এক সমুদ্রে পড়লেন। ভাইটাও ছোট। এত বড় ব্যবসা।

মায়ের তখন হিমশিম অবস্থা। কি একটা দুর্বিসহ সময় গেছে মায়ের উপর দিয়ে। হঠাৎ যেন একটা ছন্দ পতন। দীপিকা তড়িঘড়ি করে দেশে ফিরলো।আজ সবই স্মৃতি।

দীপিকা মায়ের কপালে হাত রাখল। ঘুমন্ত মাকে একটা শিশুর মত লাগছে।চোখের ইশারায় আয়াটিকে মায়ের ভালভাবে খেয়াল রাখতে বুঝিয়ে দিয়ে দীপিকা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের ঘরে চলে এলো।

চলবে....