গ্রহণ (৬ পর্ব)

গ্রহণ  (৬ পর্ব)

শামীমা আহমেদ 

লাবনী নাস্তার আয়োজনে ব্যস্ত। শাহেদ তৈরী হয়ে ডাইনিং টেবিলে এলো।নাস্তার টেবিলে শায়ানও চুপটি করে বসা। যত দুরন্তই হউক স্কুল তার প্রিয় জায়গা! স্কুলে যেতে কোন আলসেমি নেই। আর আজকাল স্কুলগুলোও এমন সুন্দরভাবে শিশুমনে স্কুলের আনন্দ ঢুকিয়েছে যে শিশুদের জন্য স্কুল আর কোন ভীতিকর যায়গা নয়। বাবার মত সেও যেন অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। শাহেদ শায়ানকে একটু আদর করে দিলো। লাবনী একে একে বাবা ছেলের টিফিনের বক্স, ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে। শায়ানের ওয়াটার পট স্কুল ব্যাগ ঠিকঠাক করে দিচ্ছে। সকাল বেলা শাহেদ এই দৃশ্যটা খুব এনজয় করে। মনে হয়,কেমন যেন এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার গোছগাছ। লাবনীর এই সার্বক্ষণিক যত্ন শাহেদকে ভীষণ আলসে করে দিচ্ছে।

তুমি শায়ানকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যেও।

আমি এদিকটা গুছিয়ে সময়মত গিয়ে নিয়ে আসবো। এ যেন প্রতিদিনের শেখানো কথা লাবনীর। 

শাহেদ আচ্ছা বলে শায়ানকে নিয়ে লিফটের কাছে দাঁড়ালো। লাবনী বিদায় জানিয়ে দরজা লাগালো।

শাহেদ মধ্যবিত্ত ঘরের একটি মেধাবী ছেলে। এদের জন্য গতানুগতিক যা হয় শাহেদেরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিধবা মা আর ছোট দুই বোনকে নিয়ে বাঙালি সমাজে পুত্র সন্তানরা যেন জন্মায় দায়িত্ব আর কর্তব্য পালনে। মায়ের নির্দেশ মেনে চলতে আর বোনদের ভাল একটা বিয়ে দেয়ার জন্য জীবনপাত করা।

পড়াশুনা শেষে শাহেদের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরী হয়। একে একে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পেরিয়ে এখন নামকরা একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। গাড়ি উন্নত জীবনযাপন 

এখন হাতের মুঠোয়। একসময় দিনগুলি এমন ছিল না।সেইদিনগুলির কথা শাহেদ আর মনে কর‍্যে চায় না। দীপিকা আর ওর জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে। দুজন ছিটকে পড়েছে দুই জীবনে। গাড়ির হর্ণের শব্দে শাহেদের ভাবনায় ছেদ পড়লো। শায়ানের স্কুল গেটে গাড়ি দাঁড়িয়ে। শায়ানকে জড়িয়ে আদর দিয়ে স্কুল গেটে নামিয়ে দিল। শায়ান বাবাকে বাই বাই বলে স্কুলে ঢুকে গেলো। অফিসের উদ্দেশ্যে গাড়ি চলতে শুরু

করলো। শাহেদ মোবাইলটা বের করে দীপিকার কাল রাতের মেসেজটা একবার দেখে নিলো। অফিসে পৌছে দীপিকাকে একটা কল দিতে হবে। তীব্র ট্রাফিকজ্যামে গাড়ি থমকে দাঁড়ালো। 

চলবে...