বাবুলের ইশতেহার ঘোষণা: পরিকল্পিত আধুনিক সিলেট গড়ার অঙ্গীকার

বাংলাভাষী ডেস্ক :

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।

রোববার (১৮ জুন)বিকেল ৩টার দিকে তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে তিনি এই ইশতেহার ঘোষণা করেন। এ সময় তার সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার আগে নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, একটি পরিকল্পিত নগরের ক্যানভাস অনেক বড়। শুধু রাস্তাঘাট আর ড্রেন করলেই নগরটি পরিকল্পিত হয়ে উঠে না। সিলেট নগরের এখনও অনেক সমস্যা রয়েছে। যানজট, জলাবদ্ধতা ছাড়াও অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সিটি করপোরেশনের আয়তন অনেক বেড়েছে। ২৭টি ওয়ার্ড থেকে হয়েছে ৪২টি ওয়ার্ড। বর্ধিত এলাকায় অনেক সমস্যা রয়েছে। অনেক পিছিয়ে রয়েছে নতুন এলাকাগুলো। সুতরাং এই নগরকে যে বা যারা ভালোভাবে জানে, বুঝে তাঁর হাতেই নগর উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া উচিত।

বাবুল বলেন, 'উড়ে এসে জুড়ে বসা' কেউ এই নগরের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। যে নগরের অলিগলিই চেনে না তার পক্ষে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ কতটুকু সম্ভব এই বিচারের ভার আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম। আমি এই শহরেরই সন্তান। সুরমার এপার-ওপার দুপারই আমার চেনা। এই নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে আমার পদচারণা রয়েছে। তাই নগরবাসীর কাছে আমার আহ্বান আপনারা যেন সবকিছু বিবেচনায় রেখে লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেন।

এসময় বাবুল বলেন,আমি কথা দিচ্ছি, আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করলে সিলেটকে একটি আধুনিক মহানগর হিসেবে গড়ে তুলব। নগরবাসীর নিরাপত্তা, যোগাযোগের উপযোগী নতুন নতুন রাস্তা, ফুটপাত নির্মাণসহ যানজট নিরসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেবো।

ইশতেহারে বাবুল উল্লেখ্য করেন

#আমি নির্বাচিত হলে সিলেটকে একটি নাগরিকবান্ধব, শিল্পবান্ধব যানজটমুক্ত, পরিবেশবান্ধব, জলাবদ্ধতামুক্ত, সুপরিকল্পিত আবাসনের নগর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবো।

#সিলেট সিটি করপোরেশনকে সর্বজনিন এবং দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ। নগরের উন্নয়নে করপোরেশনের সঙ্গে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। নগর উন্নয়নে স্থায়ী কমিটিগুলোর সঙ্গে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করা হবে। বর্তমান যে নগর ভবন রয়েছে এটিকে একটি বহুতল বাণিজ্যিক বা আবাসিক ভবন ছাড়া কিছুই মনে হয় না। ভনটিতে কোনো স্থাপত্য ঐতিহ্য নেই। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে নগর ভবনকে আধুনিক ও ঐতিহ্যের মিশেলে একটি দৃষ্টিনন্দন নগর ভবনে রূপান্তর করব।

#বর্তমানে ৪২টি ওয়ার্ড নিয়েই সিলেট নগর। তাই নগরের উন্নয়ন এবং সামগ্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে ওয়ার্ড থেকেই শুরু করতে হবে। নির্বাচিত হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ডের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবিরোধী নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে। এলাকার উন্নয়ন ও শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে এই কমিটি কাজ করবে।

#নগরের সেবামূলক খাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হবে। এজন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হবে। যদিও একজন মেয়র ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন কিন্তু তাকে অন্তত সামনের ১০০ বছর মাথায় রেখে পরিকল্পনা নিতে হয়। যাতে নগরবাসী কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে পারেন। আমি সেটাই করতে চাই। সিলেট একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভবন নির্মাণের অনুমতি প্রদানে যথাযথভাবে তৈরি করা হচ্ছে কি-না সেট কঠোরভাবে নিশ্চিত করা হবে।

#সিলেট নগর এখন অনেক বড়। বিশেষ করে নতুন যে ওয়ার্ডগুলো হয়েছে সেগুলোতে অনেক সমস্যা। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। তাই প্রথমেই নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হবে। নগরীর বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিদ্যমান রাস্তাঘাটের সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে।

#সিলেট নগরের একটি বড় সমস্যা পানীয় জলের সমস্যা। এই সমস্যা এখন আরও প্রকট হবে কারণ আয়তন বেড়েছে। তাই এই সমস্যা সমাধানে একটি কার্যকর প্রকল্প নিতে হবে। এক বছর আগে বলা হয়েছিল সিলেট ওয়াসা গঠন করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোনো নাম-গন্ধই নেই। সুতরাং ওয়াসার আশায় বসে থাকলে হবে না।

#একাধিক কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। যেখানে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার অভাবে নগরে কিশোর গ্যাং বাড়ছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাদের পুনর্বাসন এবং কারিগরী শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

#সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে একটি আধুনিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে। একসময় সিলেট পৌর পাঠাগার ছিল। সেখানে অসংখ্য দুর্লভ গ্রন্থ ছিল। এখন এই পাঠাগারের অস্থিত্বই নেই। এটা চালু করা হবে। পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার সমূহকে সবধরণের সহায়তা দেওয়া হবে।

#সিলেট নগরে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা অনেক। কিন্তু কর্মজীবী মায়েদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই তাদের সন্তানদের দেখাশুনার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করা হবে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারীদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টারের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া কর্মজীবী নারীদের স্বল্প খরচে থাকার সুবিধার্থে হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হবে।

#সিলেট নগরীকে আধ্যাত্মিক নগরী বলা হয়। এছাড়া সিলেট রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহরও। এই সম্প্রীতি সুরক্ষায় সিটি করপোরেশন দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে। সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরার জন্য জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অভ্যন্তরে এ ধরণের একটি স্থাপনার কথা থাকলেও কার্যত তা করা হয়নি। এটা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

সিলেটের রয়েছে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। একই সঙ্গে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চল। সিলেটের সংস্কৃতির বিকাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে করপোরেশন। একটি সুপরিকল্পিত সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তুলব। যেখানে নাট্যমঞ্চ, সিনেপ্লেক্সসহ সাংস্কৃতিক চর্চার সবধরণের সুবিধা থাকবে। পাশাপাশি পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

#সিলেটে খেলার মাঠ নেই। দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে ক্রীড়াঙ্গণ। আপনারা জানেন আমি সবসময় ক্রীড়াক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছি। নির্বাচিত হলে করপোরেশনের উদ্যোগে খেলার মাঠ তৈরি এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেলাধুলার প্রসার ঘটাতে ব্যবস্থা নেবো। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে নগরকে সবুজে আচ্ছাদিত করা হবে।

এছাড়াও তার নির্বাচনী ইশতেহারে আরও বেশ কিছু বিষয় প্রধান্য পেয়েছে।

এরআগে শনিবার (১৭ জুন) সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইমতেহারে তিনি গ্রিন-ক্লিন-স্মার্ট সিলেট গড়ার অঙ্গীকার করেন।