অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম - বাস্তবতা মেনে নিয়ে অভ্যস্ত হতে হবে

অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম - বাস্তবতা মেনে নিয়ে অভ্যস্ত হতে হবে


( ছোট প্রবন্ধ)
শেখ মাহমুদ আল রাফসান

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার থেকে জনজীবন প্রায় থমকে গিয়েছিল সাধারণ ছুটির জাঁতাকলে। এরপরে ধীরে ধীরে মানুষ করোনার সাথে মানিয়ে নিতে শুরু করে। মানুষ মেনে নিতে শুরু করে যে খুব সহসা এই মরণঘাতী ভাইরাস পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে না, তাই টিকার অপেক্ষায় ঘরে বন্দী না থেকে তারা জীবন জীবিকার তাগিদে মুখে মাস্ক এবং পকেটে স্যানিটাইজারের বোতল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে টিকা আবিস্কারে পশ্চিমা উন্নত দেশগুলো তে ধীরে ধীরে ভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসলেও অনুন্নত দেশ গুলো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সংক্রমণের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউ এর বিরুদ্ধে। সামগ্রিক ভাবে বলা যেতে পারে যে, প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রেরই রাষ্ট্রীয় সহায়তা এবং বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ প্রভৃতি সংস্থা গুলোর ঋণ নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি ও ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

তবে জনজীবন ধীরে ধীরে নয়া স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে এলেও কোমলমতি শিক্ষার্থী যারা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম, তাদের সুরক্ষার কথা ভেবে বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত বছরের এসএসসি বাদে বাকি পাবলিক পরীক্ষা গুলো তে অটোপাশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণী তে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। যদিও এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই উচ্চশিক্ষার জন্য কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়/মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হবে এবং ইতোমধ্যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তবে কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে বা বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা কবে হবে তা জানানো হয়নি। যদিও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে, তবে নানাবিধ কারণে এই ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে।

তবে নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অভ্যস্ত হতে হবে। যদিও ক্লাসরুমের শিক্ষা সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য, তবুও ধীরে ধীরে আমাদের নতুন এই ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হতেই হবে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি দেখেছি, অনলাইন ক্লাস গুলো তে শিক্ষার্থী উপস্থিতি প্রায় ৫০ ভাগের ও কম। ক্লাস শুরুর দিকে কিছু শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তা কমতে থাকে। অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে মানুষের উদাসীনতাও এর জনপ্রিয়তার অন্তরায়।

এ অবস্থায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কে গতিশীল করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে -
প্রথমত, স্কুল কলেজে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে পরবর্তী শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন একটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের আনা যেতে পারে।

রাতারাতি এতে সুফল পাওয়া যাবে না, তবে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের প্রতি আগ্রহ কিছুটা বাড়বে। পরিপাটি পোশাক নিশ্চিতভাবেই পড়াশোনার জন্য সহায়ক হবে। সপ্তাহে একদিন বন্ধুদের সাথে দেখা হলে তাদের একঘেয়েমি ভাব টাও কিছুটা কাটবে, নিয়মিত সংস্পর্শে থাকলে পড়াশোনার গতিও কিছুটা বাড়বে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এতে আলাদাভাবে অতিরিক্ত অর্থ খরচের দরকার নেই। শিক্ষার্থীদের আগের ইউনিফর্ম তো রয়েছেই। এমনিতেই করোনাকালে দারিদ্রতা বেড়ে গেছে, তাই বিদ্যমান সামর্থ্যের মধ্যেই সমাধান খুঁজতে হবে। উন্নত দেশগুলো যখন অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি চালিয়ে যাচ্ছে, আমরা কেন পারবো না? যদিও আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং আমি দাবি করছি না যে এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করলেই আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম এক লাফে পাশ্চাত্যের সাথে পাল্লা দিবে। তবুও হাল ছেড়ে না দিয়ে চেষ্টা তো চালিয়ে যেতে হবে।

ইন্টারনেটের দুর্বল নেটওয়ার্ক, অবকাঠামোগত সমস্যা সহ অনেক বাধা ই রয়েছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কে গতিশীল করতে। তবুও সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে ও বিদ্যমান সম্পদ নিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে নতুন পদ্ধতির শিক্ষা কার্যক্রম জনপ্রিয় করতে। নাহয় বহু মেধাবী শিক্ষার্থী অকালে ঝরে পড়বে এবং জাতি হিসেবেও আমরা জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে যাবো।